ভারতকে কেন হিমালয়ের দান বলা হয়? ভারতের ইতিহাসে নদনদীর প্রভাব কী?
◆ প্রথম অংশ -
১) উত্তর-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে অর্ধচন্দ্রকারে প্রায় ২,৫০০ কিলােমিটার দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালাভারতের উত্তর সীমান্তে দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতাে দাঁড়িয়ে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড়কাঁপানাে শীতের হাত থেকেও রক্ষা করেছে।
২) এই পর্বতের সুউচ্চ প্রাচীর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে ভারতবর্ষে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে হিমালয় থেকে নির্গত নদীগুলির কল্যাণে ভারত হয়ে উঠেছে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা।
৩) বহিঃশত্রুর হাত থেকে ভারতবর্ষকে অনেকাংশে রক্ষা করে হিমালয় যে দুর্জয় ব্যবধানের প্রাচীর গড়ে তুলেছে, তার ফলে ভারত বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে তােলার সুযােগ পেয়েছে ভারতবর্ষকে তাই ‘হিমালয়ের দান’বলা হয়।
৪) হিমালয় পর্বতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত খাইবার পাস, জোজিলা পাস, নাথুলা পাস প্রভৃতি গিরিপথগুলাে দিয়েই যুগে যুগে আর্য, গ্রিক, শক, হুন, তুর্কি, মুঘল প্রভৃতি জাতি ভারতে প্রবেশ করেছে।
◆◆ দ্বিতীয় অংশ : -
ভারতের ইতিহাসের ধারা পরিচালনায় নদনদীর অপরিসীম প্রভাব রয়েছে, কারণ :
১) ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে শিরা উপশিরার মতাে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “নদী জপমালা, ধৃত প্রান্তর প্রাচীনযুগে সিন্ধুসভ্যতা ও পরবর্তী দিনে আর্যসভ্যতার বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছিল নদী উপত্যকায়। এমনকি কাশী, মথুরা, প্রয়াগ, দিল্লী, আগ্রা প্রভৃতি শহরগুলি নদীর পাশেই গড়ে ওঠে।
২) সিন্ধু ও গঙ্গা-উপত্যকার উর্বর শস্যশ্যামলা অঞল যুগে যুগে বিদেশি জাতিগুলিকে ভারতে আসতে প্রলুদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, নদনদীর উর্বর তীরেই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলি অবস্থিত ছিল।
৩) প্রাচীন ও মধ্যযুগে উন্নতমানের রাস্তাঘাট না থাকার নদীপথে নৌকা করে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করত। যে অর্থে নদী বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যােগসূত্র স্থাপন ও আঞ্চলিক রাজনীতি ও সংস্কৃতি বিকাশে সাহায্য করেছে।
৪) নদী উপত্যকা অঞল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধশালী হওয়ায় এখানকার জনসমষ্টি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও দর্শনে মনােনিবেশ করতে সক্ষম হয়। এককথায় বলা যায় যে, ভারতের ইতিহাসে নদনদীর অনন্যসাধরণ প্রভাব রয়েছে।