ভারতের আদিম জনগােষ্ঠী সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।



■ দেহের গঠন ও ভাষার বিচারে নৃতত্ত্ববিদ পণ্ডিতেরা প্রাচীন ভারতের অধিবাসীদের চারটি প্রধান জাতিতে ভাগ করেছেন, যথা : 
১) আর্য, 
২) দ্রাবিড়, 
৩) নেগ্রিটো এবং 
৪) মঙ্গোলীয় জাতি।

১) নর্ডিক বা আর্যজাতি : আর্যজাতির মানুষ ছিল দীর্ঘাকৃতি, গৌরবর্ণ ও উন্নত নাসাবিশিষ্ট। এদের ভাষা থেকে সংস্কৃত ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। এই জাতিই ভারতে হিন্দু সভ্যতার জনক। উত্তর ভারতের পাঞ্জাব এবং সিন্ধু ও গাঙ্গেয় উপত্যকার মানুষরা সাধারণত আর্যজাতির বংশধর ছিল।

২) দ্রাবিড় জাতি: আর্যদের তুলনায় খর্বাকৃতিও কৃয়কায়দ্রাবিড়রা ছিল প্রাচীন ভারতের অপর উল্লেখযােগ্য জাতিগােষ্ঠী। দেহের গঠন, রং, ভাষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে এরা আর্যদের থেকে একেবারে আলাদা। দক্ষিণ ভারতের অধিবাসীরা দ্রাবিড় জাতির বংশধর। এদের বর্তমান ভাষা হল তামিল, তেলেগু, মালয়ালম ও কানাড়ী।

৩) নেগ্রিটো জাতি ; প্রস্তর যুগে ভারতে নেগ্রিটো জাতির বসবাসের নিদর্শন পাওয়া যায়। এরা ছিল কৃষ্ণবর্ণ, খর্বনাশা ও খর্বকায়। আফ্রিকার নিগ্রোজাতি থেকে উদ্ভূত নেগ্রিটো মানুষের অস্তিত্ব ভারতে আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন। এদের এক সামান্য ভাগ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, কোচিন, ত্রিবাঙ্কুর ও বিহারের রাজমহল পার্বত্য অঞ্চলে এখনও বসবাস করে।

৪) মঙ্গোলীয় জাতি : প্রাচীন ভারতীয় জনগােষ্ঠীর আর-এক অংশ ছিল মঙ্গোলীয় জাতি। এই জাতির মানুষের গায়ের রং হলুদ, চোখ ও নাক চ্যাপ্টা। সিকিম, ভুটান, নেপাল প্রভৃতি অঞ্চলে এই জাতির মানুষদের বসবাস করতে দেখা যায়।

◆◆ প্রাচীন ভারতের এইসব আদিম জনজাতিগােষ্ঠী ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিদেশি জাতিভারতে প্রবেশকরে ভারতীয় জনসমাজে এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে (যেমন, বাঙালিরা নর্ডিক ও নেগ্রিটো জাতির এবং রাজপুতরা মধ্য এশিয়া থেকে আগত হুন ও আর্যজাতির সংমিশ্রণ)। বিভিন্ন জাতির মধ্যে মিলন ও মিশ্রণের ফলে ভারতবর্ষ মহামানবের এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box