আঞ্চলিক বিভিন্নতা সত্ত্বেও ভারতের সাংস্কৃতিক ঐক্যের কারণ উল্লেখ করাে। অথবা, ভারতের মূলগত ঐক্যের মূল সূত্র কী?
◆● আঞ্চলিক বিভিন্নতা স্বত্বেও ভারতের সংস্কৃতিক ঐক্যের কারণ
১) যুগযুগ ধরে গ্রিক,পারসিকশক,হুন,কুষাণ,পল্লব, তুর্কি, পাঠান, মােগল প্রভৃতি বহিভারতীয় মানুষনিজেদের পৃথক সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, রীতিনীতি ও ধর্ম নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে, কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির চিরাচরিত রূপকে তারা কোনাে ভাবেই বিনষ্ট করতে পারেনি।বরং দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করার ফলে কালক্রমে তারা ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে এবং পরস্পরের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছে।
২) বর্তমানে ভারতে ১৮টি প্রধান ভাষা ও বহু আঞ্চলিক ভাষার প্রচলন থাকলেও মূল ভাষা সংস্কৃত থেকে হিন্দি, বাংলা, অসমিয়া, ওড়িয়া, মারাঠি, গুজরাটি প্রভৃতি আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব হয়েছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতের মূল ভাষা ‘দ্রাবিড়’ থেকে তামিল, তেলেগু প্রভৃতি আঞ্চলিক ভাষার উদ্ভব হয়েছে। এছাড়া যুগে যুগে ভারতবর্ষে বিভিন্ন ধর্মমতের উদ্ভব ঘটলেও প্রতিটি ধর্মের মধ্যেই আদর্শগত সাদৃশ্য দেখা যায়। কারণ ভারতবর্ষের প্রতিটি ধর্মমতের মধ্যেই উদারতা, সত্যবাদিতা, সহনশীলতা প্রভৃতি মানবিক সগুণের ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে।
এইভাবে দেখা যায় যে, বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যে ধর্মীয়, সামাজিক রীতিনীতি ও ভাষাগত ঐক্যের প্রতিফলন ঘটেছে, সামগ্রিকভাবে তা সর্বভারতীয় সংস্কৃতির ঐক্যকেই সুদৃঢ় করে তুলেছে। বর্তমান যুগের ভারতীয় শিল্প, চলচ্চিত্র, খাদ্যাভাস এবং সামাজিক রীতিনীতির আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে সর্বভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐক্যের ছাপই ফুটে উঠতে দেখা যায়।