প্রথম অংশ :
ঋক্ বৈদিক যুগে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবন : ঋক বৈদিক যুগে আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল :
১) কৃষি ও ভূমিবণ্টন ব্যবস্থা : ঋক-বৈদিক যুগের অর্থনীতির প্রধান অবলম্বন ছিল কৃষি ও পশুপালন। প্রথম দিকে পশুপালনইছিল আর্যদের প্রধান জীবিকা। পরবর্তী সময়ে জীবিকার তাড়নায় আর্যরা ক্রমশ কৃষিকাজে মনােনিবেশ করে। এই যুগের প্রথম দিকে জমির মালিক ছিল সমস্ত গ্রাম। এযুগের কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে প্রধান ছিল গম ও যব।
২) অন্যান্য বৃত্তির উদ্ভব : কৃষিভিত্তিক সমাজের চাহিদার ভিত্তিতে ঋক্-বৈদিক যুগে অন্যান্য বৃত্তির উদ্ভব হয়। ঋক্-বেদে সূত্রধর, চর্মকার, ছুতাের, তাঁতি ও কুমােরের উল্লেখ পাওয়া যায়। রথ নির্মাতারা এই যুগের সমাজে যথেষ্ট সম্মানের অধিকারী ছিলেন।
৩) শিল্প : ঋকবেদের যুগে প্রধান শিল্প ছিল সুতি বা পশম বস্ত্রবয়ন। বস্ত্রবয়ন ছাড়াও এই যুগে কারিগরি শিল্পও উন্নতি লাভ করে। এদের মধ্যে রথ এবং যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ শিল্প ছিল প্রধান।
৪) ব্যাবসাবাণিজ্য ও অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য বিনিময় প্রথা : ঋকবেদের যুগে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রসার লাভ করে, যা থল পথ ও জল পথ এই উভয় পথেই পরিচালিত হত, কিন্তু আফ্টা সমুদ্রযাত্রা করতেন কি সে বিষয়ে কোনাে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ঋকবেদে মনা’নামে এক রকমের মুদ্রার প্রচলন থাকলেও আসলে তা ছিল প্রাচীন ব্যাবিলনের প্রচলিত মুদ্রা। এছাড়া আদি বৈদিক যুগে নিষ্ক’নামে এক ধ্বনের স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন থাকলেও এই ধরনের মুদ্রার ওজন ও আকৃতিতে সমতা ছিল না। মুদ্রার প্রচলন বিশেষ না থাকায় এই যুগে মুদ্রার বদলে বিনিময় প্রথার মাধ্যমেই ব্যাবসাবাণিজ্য বেশি জনপ্রিয় ছিল। বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে এই যুগে গোবর এর জনপ্রিয়তায় বেশি ছিল ।
দ্বিতীয় অংশ :
ঋকবৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবন :
ঋক্-বৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল :
১) প্রকৃতি পূজা প্রচলন : ঋক্-বৈদিক যুগের ধর্মীয় জীবনের প্রধান দিকটি হল প্রকৃতি পূজার প্রচলন। প্রাকৃতিক বিভিন্ন শক্তিকে এযুগে দেবদেবী জ্ঞানে উপাসনা করা হত। উপাস্য দেবদেবীর মধ্যে ছিলেন পৃথিবী, মরুৎ রুদ্র, অগ্নি, উষা, ইন্দ্র, সূর্য প্রভৃতি। দেবতাদের অবস্থান অনুসারে তাদের তিনটি শ্রেণিতে পংক্তিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেমন : আকাশের দেবতা (মিত্র ও বরুণ), বায়ুর দেবতা (ইন্দ্র ও মরুৎ) এবং পৃথিবীর দেবতা (অগ্নি ও সােম)। প্রকৃতপক্ষে আর্যরা বহু দেবদেবীর অস্তিত্বে বিশ্বাসী থাকলেও আর্য ধর্মমতে মাতৃদেবতার তুলনায় পুরুষ দেবতাদের লক্ষ্যণীয় প্রাধান্য দেখা যায়।
২) যাগযজ্ঞ : ঋকবেদের যুগে বহু দেবদেবীর উপাসনা প্রচলিত থাকলেও মূর্তি পূজার চল ছিল না। যজ্ঞ অনুষ্ঠান ছিল ধর্মচর্চার প্রধান অনুষঙ্গ। সাধারণত যজ্ঞের মাধ্যমে দেবতাদের খুশি করে তাদের কাছ থেকে বর প্রার্থনা করাই ছিল এইসব যজ্ঞানুষ্ঠানের একমাত্র উদ্দেশ্য। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে যজ্ঞবেদী থাকত এবং মন্ত্রপাঠের সঙ্গে আহুতি দেওয়ার রীতি ছিল। পরবর্তী সময়ে যজ্ঞানুষ্ঠান ক্রিয়াবহুল হয়ে পড়ে। ধর্মাচরণে জটিলতার জন্য সমাজে পুরােহিতদের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়।