● চর্যাপদ-এর গুরুত্ব : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত ধর্মীয় সংগীত। সাধনার গূঢ় তত্ত্বকে তাঁরা নানাবিধ রূপক ও সংকেতের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করেছেন এই গানগুলিতে। সেদিক থেকে চর্যাপদের গুরুত্ব একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা। কিন্তু চর্যাপদ কেবল ধর্মীয় সংগীতমাত্র নয়, একই সঙ্গে তা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। তাই বাংলা ভাষার ইতিহাসে চর্যাপদের গুরুত্বের দিকটি বিবেচনা করে দেখা দরকার।
১) চর্যাপদ যেহেতু বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন সেজন্য বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপ কেমন ছিল তা জানার ক্ষেত্রে চর্যাপদ’ অপরিহার্য।
২) চর্যাপদ আবিষ্কারের ফলে বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। চর্যাপদ না থাকলে বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগ সম্পর্কে অনেক তথ্য অজানা থেকে যেত। আর তার ফলে বাংলা ভাষার ইতিহাসও হত অসম্পূর্ণ।
৩) বহু বাংলা শব্দের বিবর্তনের ধারাপথটিকে চিনে নেওয়ার জন্য এই গ্রন্থের শরণাপন্ন হতে হয়।
৪) বাংলা কবিতার ছন্দের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গেলে চর্যাপদ’ অপরিহার্য। বাংলা ছন্দের গঠনের ক্ষেত্রে চর্যাপদ’-এর ছন্দের প্রভাবকে স্বীকার করেন ছান্দসিকরা।
৫) বাংলা কবিতায় যে অন্ত্যমিল দেখা যায়, সেই অন্ত্যমিলেরও উৎস বলা যায় 'চর্যাপদ'কে।
৬) চর্যাপদ’-এ ব্যবহৃত কিছু প্রবাদ ও রূপকল্প পরবর্তীকালের বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলা ভাষার ইতিহাসে এই গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম।