রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিবর্তন আলােচনা করাে।
উত্তর: ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি আধুনিক বিষয়। কিন্তু, এই শাস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছিল সুদূর অতীতে, প্রাচীন গ্রিসে। গ্রিস দেশেই প্রথম রাজনীতি চর্চা শুরু হয়। আজ
উত্তর: ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি আধুনিক বিষয়। কিন্তু, এই শাস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছিল সুদূর অতীতে, প্রাচীন গ্রিসে। গ্রিস দেশেই প্রথম রাজনীতি চর্চা শুরু হয়। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রাচীন গ্রিসে রাজনৈতিক বিষয়সমূহের সুসংবদ্ধ চর্চা শুরু হয়েছিল।
‘Politics' (পলিটিক্স) গ্রন্থের লেখক প্রাচীন গ্রিক রাষ্ট্র-দার্শনিক অ্যারিস্টটল (Aristotle)-কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক (Father of Political Science) আখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর শিক্ষক Republic' (রিপাবলিক) গ্রন্থের লেখক প্লেটো (Plato) ও তাঁর সমকালীন গ্রিক চিন্তাবিদগণ রাষ্ট্র বিষয়ক চিন্তাভাবনার সূত্রপাত করেছিলেন। প্লেটোর রিপাবলিক' গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্র ও ন্যায়বিচারের ওপর আলােকপাত করা হয়েছে। আর অপরদিকে অ্যারিস্টটল সমকালীন গ্রিসের বিভিন্ন নগররাষ্ট্র (City State) সমূহের তুলনামূলক পর্যালােচনা করেছিলেন এবং সেই পর্যালােচনার ভিত্তি তে সরকারের শ্রেণিবিভাজন করেছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। অ্যারিস্টটলকৃত সরকারের শ্রেণিবিভাজন প্রকল্প আজও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও তুলনামূলক রাজনীতি চর্চার জগতে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
একইভাবে, প্রাচীন যুগে প্রাচ্যে বিশেষ করে ভারতে রাজনীতি-বিষয়ক চিন্তাভাবনার সন্ধান পাওয়া যায়। রামায়ণ ও মহাভারতে সমকালীন ভারতের চলমান রাজনীতির প্রকাশ ঘটেছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র’কে রাজনীতিশাস্ত্রের আক্র’ বা খনি হিসেবে অভিহিত করা হয়। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পররাষ্ট্রীয় বিষয় বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুসৃত নীতি ও করণীয় বিষয় সম্পর্কে নির্দেশিকা লক্ষ করা যায়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিকাশের দিক থেকে মধ্যযুগ ছিল অপেক্ষাকৃতভাবে অনুর্বর। ইউরােপে মধ্যযুগ ছিল সাধারণভাবে অন্ধবিশ্বাসের যুগ। এই সময় রাজা ও পােপের পারস্পরিক এক্তিয়ারগত বিরােধ রাষ্ট্রচিন্তার জগতকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। মধ্যযুগের ভারতেও মুসলিম শাসকদের দায়িত্ব ও আনুগত্যের ধারণা গুরুত্ব অর্জন করেছিল।
তবে, আধুনিক যুগের শুরু থেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চা ব্যাপকতা ও গভীরতা অর্জন করতে থাকে। রাষ্ট্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা, রাজনীতির লােকায়তকরণ, গণতন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ, শ্রেণিগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার, রাজনীতি-বিষয়ক চিন্তাভাবনাকে বিজ্ঞানসম্মত করে তােলার প্রয়াস ইত্যাদি বিভিন্ন পর্যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চাকে প্রভাবিত করতে থাকে। এই পর্যায়ে উদারনীতিবাদ, উপযােগিতাবাদ, অভিজ্ঞতালব্ধ দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণবাদ, মার্কসবাদ প্রভৃতি তত্ত্বের বিকাশ ঘটে। মেকিয়াভেলি, বােদ, হবস, ল, রুশাে, হেগেল, মার্কস, লেনিন, মিল, বার্কার, ল্যাস্কি, ইস্টন, অ্যালমন্ড প্রমুখের অবদানের উপর নির্ভর করে বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এক আধুনিক ও গতিশীল সমাজবিজ্ঞানে পরিণত হয়েছে।