ছাপাবই -এর সাথে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক আলোচনা কর ।
উত্তর : উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক বাংলা ছাপাখানা ও বাংলা বইয়ের ইতিহাসে স্মরণীয় অধ্যায়। এই দশ বছরের মধ্যে শ্রীরামপুরে আরও বেশ কয়েকটি ছাপাখানা গড়ে ওঠে । ইতিমধ্যে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আত্মীয় সভা ১৮১৫ সালে, হিন্দু কলেজ ১৮১৭ সালে, স্কুল বুক সোসাইটি ১৮১৭ সালে, হেয়ার স্কুল ১৮১৮ সালে, কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি ১৮১৮ সালে এবং সংস্কৃত কলেজ ১৮২৪ সালে। অন্যদিকে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে দিগদর্শন মাসিক পত্রিকা এবং সমাচার দর্পণ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা । গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক পত্রিকা বাঙ্গাল গেজেটি । এ দশকেই বাংলার গ্রামে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় শতাধিক বিদ্যালয় । ছাত্রদের জন্য পাঠ্যবই চাই । ছাপাখানা তখন শিক্ষা বিস্তারের হাতিয়ার। এ যুগ ধর্মীয় আন্দোলনেরও সবের জন্য দরকার ছাপাখানা । যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারা কলকাতা, সারাবাংলা এমনকি সারা পূর্ব বাংলা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ছাপাখানা । সেখানে ছাপা হচ্ছে নানা ধরনের ও স্বাধের বাংলা বই । একদিকে প্রকাশিত হচ্ছে নানা চিত্র ও বিজ্ঞাপন শোভিত পঞ্জিকা, অন্যদিকে প্রকাশিত হচ্ছে আইন আদালত, ধর্ম, নীতিকথা, ইতিহাস, সঙ্গীত, কৃষিকাজ, টোটকা চিকিৎসা প্রভৃতি নানা বিষয়ের বই । পাঠ্য পুস্তকের দুনিয়াও সেদিন কম আকর্ষনীয় নয়। ইতিহাস, বিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল, চিকিৎসা বিজ্ঞান, জীবনী, নীতিকথা, সঙ্গীত, ভাষাশিক্ষা, চিত্রকলা, মানচিত্র, এমনকি ছাত্রদের জন্য নোটবই প্রকাশিত হয় । ১৮৩৫- প্রতিষ্ঠিত হল মেডিকেল কলেজ, ১৮৫৪ -এ প্রেসিডেন্সি, ১৮৫৭ তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি স্থাপনের মধ্য দিয়ে একে একে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে যেতে থাকে ।