“মনে হবে বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে নিংড়ে বার করছে।”—মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত বাক্যটি
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’
নামের ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
গল্পকথক, তার এক ঘুমকাতুরে বন্ধু এবং অপর এক বন্ধু মণি—কোনো একদিন
যাত্রা করেছিলেন কলকাতা থেকে তিরিশ মাইল দূরবর্তী এক অনামা গ্রাম তেলেনাপোতার উদ্দেশে।
কলকাতা থেকে ভিড়ে-ঠাসা এক বাসে প্রায় দুঘণ্টা চলার পর তারা নামেন তেলেনাপোতার কাছাকাছি
বাসস্টপে| একটা জল-জমা, নীচু জায়গার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তারা অপেক্ষা করতে থাকেন
তাদের নিতে আসা গোরুর গাড়ির জন্য। কিন্তু মশাদের
অত্যাচারে তারা সেই সময় অস্থির হয়ে পড়েন। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত গল্পকথক যখন
চরম অধৈর্য হয়ে ফিরতি বাসে কলকাতায় ফেরার কথা ভাবতে শুরু করেন, ঠিক তখনই সেই জঙ্গলের
ভেতরকার সরু রাস্তার শেষপ্রান্ত থেকে অদ্ভুত এবং সুতিবিস্ময়কর একটি শব্দ তিনি শুনতে
পান। সেই শব্দ শুনেই কল্পনাপ্রবণ গল্পকথকের মনে হয় “বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক
এক কান্না নিংড়ে নিংড়ে বার করছে।” সেই অদ্ভুত
শব্দটি যে তাদের নিতে আসা গোরুর গাড়ির শব্দ, সে কথা বুঝতে পেরেছিলেন কথকরা। তাই সেই
শব্দ শুনে ‘প্রতীক্ষায় চঞ্চল হয়ে উঠেছিলেন তারা। তাদের সেই প্রতীক্ষা সার্থক হল যখন
একটি গোরুর গাড়ি এসে তাদের তেলেনাপোতায় নিয়ে চলল।