হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কিরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায়?

উত্তর: উনিশ শতকের বাংলার অবক্ষয়িত সমাজের এক জীবন্ত পটচিত্র ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা। লেখক : সাহিত্যসেবী কালিপ্রসন্ন সিংহ ‘হুতোম’ ছদ্মনামের আড়ালে এই প

উত্তর: উনিশ শতকের বাংলার অবক্ষয়িত সমাজের এক জীবন্ত পটচিত্র ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা। 

লেখক : সাহিত্যসেবী কালিপ্রসন্ন সিংহ ‘হুতোম’ ছদ্মনামের আড়ালে এই প্রহসনটি রচনা করেন।

প্রকাশ : ১৮৬২-তে গ্রন্থটির প্রথমভাগ ও ১৮৬৩-তে গ্রন্থটির দ্বিতীয়ভাগ এবং সর্বোপরি ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় হুতোম প্যাঁচার নকশা। 

সমাজ চিত্র

‘হুতোম প্যাঁচার নকশা উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতার বাবু-কালচার এবং বাংলার অবক্ষয়িত সমাজ জীবনের এক অসাধারণ ও জীবন্ত দলিল। গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে সমকালীন কলকাতার সমাজ জীবনের দুর্নীতি, কপটতা ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে শাণিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। বাবু সমাজের গণিকাবিলাস, ভূণ হত্যা, বিবিধ মাদক দ্রব্যের ব্যাপক আয়োজনকে ব্যঙ্গাত্মক ও তির্যক ভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে। দুর্গাপূজা, বারোয়ারি পূজা, চরক, রথ, স্নান যাত্রা প্রভৃতির নামে হিন্দু সমাজের ভণ্ডামি ও ভাড়ামির সমালোচনা করা হয়েছে। যেখানেই তিনি ভণ্ডামি দেখেছেন, সেখানেই তিনি বিদ্রুপ-বাণ বর্ষণ করেছেন। সমাজচেতনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের কষাঘাত, হাস্যরস—সবমিলিয়ে এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অসামান্য গ্রন্থ। তাঁর আর এক বড় কৃতিত্ব হলো, এই প্রথম সংস্কৃত ঘেঁষা বাংলাকে সংস্কৃত শব্দের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে তাকে কথ্য ভাষায় হাজির করেছেন। হুতোম- ”-এর চলিত ভাষা ব্যবহারের নৈপুণ্য পাঠককে মুগ্ধ করে। 

মন্তব্য : লেখকের রসবোধ, সাহিত্যগুণ এবং সমাজ সচেতনতাবোধ হুতোম প্যাঁচার নকশা-কে কালোত্তীর্ণ করেছে। ভাষা-ভঙ্গি ও রঙ্গ মিলিয়ে গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে সরস, মিষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী।

Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box