উঃ বাক্য মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। কিন্তু সব সময় একটি বাক্যের মাধ্যমে মনের সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করা সম্ভম হয় না। এজন্য প্রয়োজন একাধিক বাক্যের। মনের ভাব সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ করার জন্য পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত বাক্যের সমষ্টিই অনুচ্ছেদ। অনুচ্ছেদ ও প্রবন্ধ একই রকম নয় । প্রবন্ধ রচনায় কোনো একটি বিষয়ের সকল দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং একটিমাত্র ভাব প্রকাশ পায় অনুচ্ছেদে।
অনুচ্ছেদ রচনা লেখার নিয়ম ঃ অনুচ্ছেদ এবং প্রবন্ধ এক বিষয় নয়। কোনো বিষয়ের সকল দিক আলোচনা করতে হয় প্রবন্ধে। কোনো বিষয়ের একটি দিকের আলোচনা করা হয় এবং একটি মাত্র ভাব প্রকাশ পায়।
- একটি অনুচ্ছেদের মধ্যে একটিমাত্র ভাব প্রকাশ করতে হবে।
- অতিরিক্ত কোনো কথা লেখা যাবে না।
- সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো বাক্যের মাধ্যমে বিষয় ও ভাব প্রকাশ করতে হবে।
- অনুচ্ছেদটি খুব বেশি বড় করা যাবে না।
- একই কথার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- যে বিষয়ে অনুচ্ছেদটি রচনা করা হবে তার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি সহজ-সরল ভাষায় সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে।
- অনুচ্ছেদের লেখাটি যুক্তিপূর্ণ হতে হবে। অযৌক্তিক কথাবার্তা লেখা চলবে না।
- অনুচ্ছেদের শব্দসীমা প্রশ্ন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি অনুচ্ছেদ ১৫০-২০০ শব্দের বেশি হয় না।
- ভাষার শুদ্ধতা ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে হবে। বানানে নজর দিতে হবে। বাক্যের গঠন যেন ঠিক থাকে।
- অনুচ্ছেদে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। ভুল ও কাল্পনিক তথ্য বা অসম্ভব তথ্য দেওয়া চলবে না।
অনুচ্ছেদ রচনার একটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
ভারতবর্ষের ঋতুচক্রে ষড়ঋতুর মধ্যে পঞ্চম ঋতু হল শীত। পৌষ ও মাঘ, এই দুই মাস নিয়ে শীত ঋতু। ইংরেজি হিসেবে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টিই শীতকাল। আশ্বিনে দুর্গোৎসবের পরেই তাপমাত্রার পারদ দ্রুত নামতে থাকে। কার্তিক-অগ্রহায়ণে তেমন একটা শীত থাকে না। এরপর পৌষ মাস এসে গেলেই শুরু হয় কাঁপুনি দেওয়া শীত। বিশেষত বাঙালির জীবনে এই শীত ঋতুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। এই সময় কৃষিজীবী বাঙালির ঘরে অন্নের অভাব দূর হয়। ঘরে ঘরে বিরাজ করে সমৃদ্ধির লক্ষণ। সেই সমৃদ্ধির উদযাপনের জন্যই এই সময় অনুষ্ঠিত হয় একের পর এক উৎসব। শীত কালে নানা ধরনের শাক সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়, ফলে খাদ্যদ্রব্যের দামও কম থাকে। নবান্ন থেকে শুরু করে পৌষ পার্বণ পর্যন্ত একের পর এক উৎসব এই সময় অনুষ্ঠিত হয়। শীতের প্রতিটি উৎসবেই খাওয়া দাওয়া একটি প্রধান অঙ্গ। নবান্নের নবব্যঞ্জন ও পৌষ পার্বণের পিঠেপুলি এই ঋতুর বিশেষ আকর্ষণ। নলেন গুড়ের সন্দেশ, পায়েস ও পিঠে শীত কালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাবার। উৎসব ছাড়াও এই সময়টা হলো বাঙালিদের কাছে পিকনিকের মরসুম। ইংরেজি বড়দিন উপলক্ষে ২৫শে ডিসেম্বর থেকে নতুন বছরের পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত পিকনিকের ধুম পড়ে যায়। এই সময় তরুণ প্রজন্ম আনন্দে হুল্লোড়ে মেতে ওঠে। একদিকে বড়দিনের আয়োজন আর অন্য দিকে পিকনিকের হুল্লোড়ে আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে গ্রাম থেকে শহর। বাংলার বেশ কিছু এলাকায় শীত কালে টুসু পরব পালিত হয়। এটি বাংলার লোকসংস্কৃতির এক বিশেষ অঙ্গ। গ্রামাঞ্চলে এই সময় যাত্রাপালার আসর বসে। এই সময়টি ছাত্রছাত্রীদের জন্য পড়াশোনার সময়, কারণ এই শীতেই অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ও নতুন শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া। শীতকালে আবহাওয়া যেমন ঠাণ্ডা থাকে, তেমনি এই সময় হাওয়া থাকে শুষ্ক ও রুক্ষ। তাই এই সময় ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এ সময় বাজারে প্রচুর কমলালেবু উৎপাদিত হয়। বিভিন্ন ফুলের মধ্যে এই সময় সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নানা জাতের গাঁদা ফুল। শীতকালে মোটের উপর রোগ ব্যাধি কম হয়। তবে ছোটোখাটো ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর সর্দি এই সময় একটু বেশিই হয়।