"প্রলয় গণিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ” – ‘প্রলয়’শব্দের অর্থ কী ? প্রজারা বিষাদ মনে এইরূপ ভাবছিল কেন ?
উঃ কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত ‘অভয়ামঙ্গল’তথা চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের অন্তর্গত ‘কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি নামক কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণে ‘প্রলয়’শব্দের অর্থ হলাে ধ্বংস বা সম্পূর্ণ ধ্বংস। মা চণ্ডীর নির্দেশে কলিঙ্গরাজ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। ঈশান কোণে ওড়া মেঘ দেখতে দেখতে সারা আকাশ ছেয়ে ফেলেছিল। মুহূর্তের মধ্যে ঘনিয়ে ওঠা অন্ধকার মেঘের প্রচণ্ড গর্জনে কলিঙ্গের প্রজারা প্রলয় হতে পারে ভেবে তাদের মনও বিষাদে ভরে গিয়েছিল। তাই অনেক প্রজা প্রাণে বাঁচার জন্য ঘরবাড়ি ত্যাগ করে। কবিতার মধ্যে তার প্রমাণও মিলেছে। ভাদ্র মাসের তালের মতাে বড়াে বড়াে শিল পড়ে প্রজাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছিল এবং টানা সাতদিন বৃষ্টির কারণে সব শস্য পচে যাওয়ায় সাধারণ প্রজাদের মনে দুশ্চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল, কারণ ‘অন্নচিন্তা চমৎকারা।
শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে মঠ-মন্দির-অট্টালিকাবিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে গেলে একটা প্রজন্মের লেখাপড়ার প্রচণ্ড ক্ষতি হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। বিশাল বিশাল পর্বতের মতাে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে ঘরবাড়ির উপর। সাধারণ মানুষের মন বিষাদে ভরে যায়। শুধু তাই নয়, মানুষের তিনটি প্রধান চাহিদা—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এই তিনটির মধ্যে প্রধান দুটি অন্ন ও বাসস্থান প্রাকৃতিক কারণে বিপন্ন, সেখানে মানুষ বিষাদের কালাে ছায়ায় যে আচ্ছন্ন থাকবে তাতে আর সন্দেহ কী?