নবজাগরণ কী? সংক্ষেপে বাংলার নবজাগরণের পরিচয় দাও।
উত্তরঃ
● নবজাগরণের সংজ্ঞা : রেনেসাঁস (Renaissance) কথাটিকে বাংলায় বলা হয়ে থাকে নবজাগরণ। এই আন্দোলন জাতীয় জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে, এর ফলে সমাজ, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি, অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে একটা গঠনমুখী উদ্যম দেখা দেয়। একটি জাতির যেন পুনর্জাগরণ বা নবজাগরণ ঘটে। মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, সংস্কারমুক্তি, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোেধ, সার্বিক কৌতূহল, পরিপূর্ণ জীবনের সন্ধান প্রভৃতি হল রেনেসাঁস বা নবজাগরণের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
● বাংলায় নবজাগরণ : উনবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যে নবীন উদ্যম ও সংস্কারপ্রবণতা দেখা দিয়েছিল তাকে বাংলার নবজাগরণ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মধ্যযুগের বাঙালিজীবন ছিল নানান কুসংস্কারে আচ্ছন্ন এবং দারুণভাবে দৈবনির্ভর । স্বাধীন বিচারবুদ্ধির থেকে প্রথার গুরুত্ব ছিল বেশি। উনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্যশিক্ষার সংস্পর্শে বাঙালির চিন্তাজগতে বিপুল আলােড়নের সৃষ্টি হয়। দেববাদের পরিবর্তে স্বীকৃতি পায় মানবতাবাদ। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। সাহিত্য, শিল্প, দর্শন ও বিজ্ঞানচর্চায় দেখা দেয় প্রবল উৎসাহ। বাংলার এই নবজাগরণের দুটি ধারা দেখতে পাওয়া যায়—পাশ্চাত্যের উদারপন্থী ভাবধারা এবং প্রাচ্যের পুনরুজ্জীবনপন্থী ভাবধারা। শেষ পর্যন্ত যাঁদের চিন্তায় ও কর্মে এই দুটি ধারার সমন্বয় ঘটেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য কয়েকজন হলেন রামমােহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, কেশবচন্দ্র সেন, মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ এবং সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।