“নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।” · নদীর বিদ্রোহের কারণ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? এই বিদ্রোহের কারণ কী? অথবা, ‘নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।’— কে, কীভাবে নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝেছিল? এই বিদ্রোহের কারণ কী?
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদ তার কর্মস্থলের নিকটবর্তী চার বছরের পরিচিত নদীটির বিদ্রোহী রূপ প্রত্যক্ষ করেছিল। পাঁচদিন অবিরাম বর্ষণের পর একদিন বিকেলে বৃষ্টি থেমে গেলে বিরাট কৌতূহল নিয়ে সে গিয়েছিল বর্ষাপ্লাবিত নদীর রূপ দেখতে। ব্রিজের কাছাকাছি এসে নদীর ভয়ংকর মূর্তি দেখে সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। দেখে নদীর গাঢ়তর পঙ্কিল জল ফুলে ফেঁপে কেনোচ্ছ্বাসিত হয়ে তীব্র বেগে বয়ে চলেছে। নদীর উদ্দাম স্রোত ব্রিজের ধারকস্তম্ভে বাধা পেয়ে আবর্ত রচনা করে ছুটছে। জলধারা এত উঁচুতে উঠে আসছে যে ইচ্ছে করলে ধারকস্তম্ভের ওপরে বসে তা ছোঁয়াও যায়। এখানে বসেই বৃষ্টির ঝমঝম শব্দের সঙ্গে নদীর কলধ্বনির ঐক্যতান শুনতে শুনতে নদেরচাদ ভীত হয়ে পড়ে। তার মনে হয় নদীটি যন্ত্রসভ্যতার লৌহ-কংক্রিটের বন্ধনে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে । নদীর এভাবে বিদ্রোহী হয়ে ওঠার কারণ হিসেবে নদেরচাদ যন্ত্রশাসিত সভ্যতার বজ্রমুষ্ঠিকে দায়ী করেছে। মানুষ তার ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রকৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে আসছে চিরকাল। বাঁধ দিয়ে, লৌহ-কংক্রিটের ব্রিজ নির্মাণ করে নদীর চলার স্বাভাবিক গতিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। .এই বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হাসফাস করতে করতে নদী কখনো-কখনো ভয়ংকর প্রতিশোধস্পৃহা নিয়ে রুদ্র মূর্তি ধারণ করে। যেন তার স্বাধীনতা হরণ করার, তাকে বন্দি করার উপযুক্ত শাস্তি দিতে চায় সে