পেনসিলে আঁকা জীবন্ত শহর ✏️🏙️

পেনসিলে আঁকা জীবন্ত শহর ✏️🏙️

একসময় ছিলো কবির নামে এক কল্পনাপ্রিয় ছেলে, যার আঁকার প্রতি ছিলো অসীম ভালোবাসা। সে যে কাগজে যা আঁকতো, তা যেন জীবন্ত হয়ে তার চোখের সামনে ভেসে উঠতো। একদিন বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কবির একটা পুরনো পেনসিল পেলো। পেনসিলটা সাধারণ পেনসিলের মতো নয়, এটা দেখতে ছিলো চকচকে আর অদ্ভুত সুন্দর। পেনসিলের গায়ে খোদাই করা ছিলো কিছু পুরনো ভাষার লেখা, যা পড়তে পারা অসম্ভব ছিলো। কিন্তু, কবিরের মনে হলো এই পেনসিলটা যেন তাকে হাতছানি দিচ্ছে।

কবির বাড়ি ফিরেই পেনসিলটা হাতে নিলো, আর ভাবলো, আজ সে তার স্বপ্নের শহরটি আঁকবে—একটা জায়গা, যেখানে সবকিছু তার মনের মতো হবে। তাই ভাবনা মতো কাগজে সে প্রথমে আঁকলো একটা সুন্দর ছোট্ট শহর। শহরে ছোট ছোট বাড়ি, উঁচু টাওয়ার, খেলার মাঠ, বাচ্চাদের জন্য পার্ক, রাস্তার ধারে ল্যাম্পপোস্ট, একটা নদী এবং নদীর ওপরে একটা ব্রিজ। সবকিছুই তার মনমতো সাজালো, যেন সেই শহরে কোনো অভাব নেই।

কবির একের পর এক ঘন্টা ধরে সেই শহরটাকে সুন্দর করে সাজাতে লাগলো। হঠাৎ সে খেয়াল করলো, কাগজের ওপর আঁকা ছবিগুলো যেন একটু একটু করে নড়তে শুরু করেছে! সে দেখতে পেলো, ছোট ছোট মানুষেরা তার আঁকা শহরে হাঁটছে, বাচ্চারা পার্কে খেলছে, নদীর ওপর দিয়ে নৌকা ভাসছে, আর ল্যাম্পপোস্টের আলো সন্ধ্যার সময় জ্বলে উঠছে। কবির বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। সে বুঝতে পারলো, এই পেনসিল কোনো সাধারণ পেনসিল নয়—এটা একটা যাদুকরী পেনসিল, যা যা কিছু আঁকা হয়, তাকে জীবন্ত করে তোলে!

কবির তখন শহরের রাস্তায় ঘুরতে থাকা ছোট ছোট মানুষগুলোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো। তাদের কেউ বললো, "আপনি কি আমাদের শহরের রাজা? আপনি তো আমাদের সৃষ্টি করেছেন।" কবির হেসে বললো, "হ্যাঁ, আমি তোমাদের রাজা। কিন্তু তোমরা আমার মতোই স্বাধীন। তোমরা তোমাদের ইচ্ছেমতো থাকতে পারো।"

কবির প্রতিদিন তার আঁকা শহরে নতুন কিছু যোগ করতে লাগলো। সে সেখানে একটা স্কুল, হাসপাতাল, আর একটা বড় খেলার মাঠও আঁকলো। যখন সে একটা গাছ আঁকল, তখন গাছের নিচে বাচ্চারা খেলা শুরু করলো। একটা পোষা প্রাণী আঁকলে, সেটাও শহরের মানুষের প্রিয় পোষা প্রাণীতে পরিণত হলো। কবিরের এই যাদুকরী শহরে দিন দিন নতুন নতুন মানুষেরা আসতে থাকলো, আর শহরটা যেন সত্যিকারের কোনো শহরের মতো প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো।

এভাবে কবিরের জীবনে আনন্দ আর কল্পনার রঙ যোগ হলো। কিন্তু একদিন সে খেয়াল করলো, শহরের মানুষগুলো কিছুটা দুঃখী আর নিরাশ মনে হচ্ছে। তারা তার কাছে এসে বললো, "তুমি আমাদের সৃষ্টি করেছো, কিন্তু আমাদের কিছু দায়িত্ব ও অধিকার দাও, যেন আমরা নিজেদের মতো করে বাঁচতে পারি।" কবির বুঝলো, শুধু সৃষ্টি করাই যথেষ্ট নয়, তাদের মধ্যে ভালোবাসা, সহযোগিতা আর স্বাধীনতার বীজ বুনতে হবে।

তখন কবির ঠিক করলো, সে এই পেনসিলের যাদুকরী শক্তি দিয়ে শুধু নিজের আনন্দের জন্য নয়, বরং এই ছোট্ট শহরকে একত্রিত এবং সুখী করার জন্য কাজ করবে। সে একটা খোলা মাঠ আঁকল, যেখানে শহরের সবাই একসাথে মিলিত হতে পারে। সে নদীর ধারে বসার জায়গা তৈরি করলো, যেন সবাই সন্ধ্যায় বসে আড্ডা দিতে পারে। কবির যখন এই পরিবর্তনগুলো করলো, শহরের মানুষেরা আরও খুশি হয়ে উঠলো। তাদের মধ্যে এখন সম্প্রীতি আর ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়লো।

এভাবেই, কবিরের তৈরি করা শহরটা তার জীবনের সেরা সৃষ্টিতে পরিণত হলো। কবির বুঝতে পারলো, শুধু নিজেকে নয়, চারপাশের মানুষদের সুখী করাই প্রকৃত আনন্দ। সেই দিন থেকে, পেনসিলটি তার হাতে যতদিনই থাকুক, সে তার তৈরি শহরকে ভালোবাসা আর দায়িত্বে আগলে রাখবে। এই জীবন্ত শহর আর যাদুকরী পেনসিলের গল্প হয়ে গেলো কবিরের জীবনের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়! ✨🌆


Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box