উত্তরঃ বিহারের ছোটোনাগপুরে কোল জাতির নিবাস ছিল। ব্রিটিশ শাসনে তারা ব্রিটিশ, জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ কোল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। কোল বিদ্রোহের কারণগুলি হলো—
রাজস্ব : পূর্বে কোলদের কোনোরকম রাজস্ব প্রদান করতে হতো না। কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা শুরু হয়। তাতে এদের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করা হয়। বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের হাতে কোম্পানি এখানকার জমির ইজারা দিয়ে দেয়।
• উচ্চহারে রাজস্ব আদায় : জমিদাররা রাজস্বের পরিমাণ প্রভূত পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও কোলদের ওপর অন্যান্য করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় যা প্রদান করতে গিয়ে কোলরা নিঃস্ব হয়ে যায়।
• অত্যাচার : ইজারাদাররা রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রভূত অত্যাচার চালায়। তারা কোলদের জমি থেকে উৎখাত করতে থাকে। কোল রমণীদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চলতে থাকে। তাদের লাঞ্ছিত করা হয়। নানা অজুহাতে কোলদের বন্দি করা হয়।
• চিরাচরিত ঐতিহ্যের অবক্ষয় : কোলদের চিরপ্রাচীন আইন ও বিচারপদ্ধতি কোম্পানি ধ্বংস করে দিয়ে নিজেদের আইন তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। ফলে কোলদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
• বিস্তার : কোল বিদ্রোহ সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ, পালামৌ জেলার সর্বত্র বিস্তারলাভ করে। বিদ্রোহীরা ইংরেজ, জমিদার ও মহাজনদের বাড়িতে আক্রমণ করে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বহুলোক বিদ্রোহীদের হাতে মারা যায়। বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বুদ্ধ ভগত, জোয়া ভগত, সিংরাই, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখ।
বিদ্রোহের ফলে কোম্পানি কোলদের জন্য পৃথক দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চল গঠন করে। তাদের জমি ফিরিয়ে দেয়। কোলদের আইন, বিচারব্যবস্থা তাদের বাসভূমিতে পুনরায় স্থাপিত হয়।