ভারতবর্ষের ইতিহাসে নদনদীর প্রভাব কতদূর পড়েছিল, আলােচনা করাে।
(১) এদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিরা-উপশিরার মতাে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী —রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “নদী জপমালা, ধৃত প্রান্তর”। প্রধানত সিন্ধু ও গঙ্গাকে কেন্দ্র করে প্রাচীন ভারতে যে নদীকেন্দ্রিক সভ্যতার সূচনা ও বিকাশ ঘটে, তার ধারা আধুনিক যুগের সূচনাকাল পর্যন্ত বজায় ছিল।
(২) শুধু তাই নয়, ভারতের উর্বর নদী-উপত্যকা অঞ্চলগুলি অর্থনৈতিকদিক দিয়ে সমৃদ্ধশালীহওয়ায় সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতের জনগণ সাহিত্য, সংস্কৃতি ও দর্শনে মনােনিবেশ করার সুযােগ পাওয়ার পাশাপাশি এক অতি উন্নত সভ্যতা গড়ে তােলার উপযুক্ত রসদও পেয়েছে। প্রাচীনযুগে সিন্ধু সভ্যতা ও পরবর্তী দিনে আর্যসভ্যতার বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছিল নদী উপত্যকায়। এমনকি বারাণসী, মথুরা, প্রয়াগ, দিল্লী, আগ্রা প্রভৃতি প্রাচীন নগরগুলি নদীর পাশেই গড়ে উঠেছিল।
৩) সিন্ধু ও গঙ্গা-উপত্যকার উর্বর শস্যশ্যামলা অঞ্চল যুগে যুগে বিদেশি জাতিগুলিকে ভারতে আসতে প্রলুদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত নদনদীর উর্বর তীরেই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলি অবস্থিত ছিল।
৪) প্রাচীন ও মধ্যযুগে উন্নতমানের রাস্তাঘাট না থাকায় নদীপথে নৌকা করে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করত। যে অর্থে বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যােগসূত্র স্থাপন ও আঞ্চলিক রাজনীতি ও সংস্কৃতি বিকাশে সাহায্য করেছে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন নদনদী।
◆◆ নদী উপত্যকা অঞল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধশালী হওয়ায় এখানকার জনসমষ্টি সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন প্রভৃতি উন্নত চিন্তাধারায় মনােনিবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। এক কথায় বলা যায় যে, ভারতীয় সভ্যতার বিবর্তনে ভারতের বিভিন্ন নদনদীর বিপুল প্রভাব রয়েছে।