ভারতের ইতিহাসে সমভূমির প্রভাব সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।



◆ ভৌগােলিক বিশেষত্ব ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসারে বিশাল ভারত ভূখণ্ডকে আর্যাবর্ত ও দাক্ষিণাত্য এই দুটি প্রধান অংশে ভাগ করা হয়।

[১] আর্যাবর্ত : ভারতবর্ষের সিন্ধু-গঙ্গা-ব্ৰত্মপুত্রবিধৌত অতি উর্বর এই সমভূমি অঞ্চলকে ‘পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার জন্মভূমি’বলা যায়। হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের নাম আর্যাবর্ত, যা আরও দক্ষিণে প্রসারিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। মূলত এই আর্যাবর্ত থেকেই সমস্ত ভারত-ভূখণ্ডকে এক অখণ্ড সভ্যতার যােগসূত্রে গাঁথা’র অভিযান শুরু হয়েছিল। * খাদ্যের চিন্তামুক্ত সেই নিশ্চিন্ত জীবনই আর্যাবর্তের প্রাচীন অধিবাসীদের কলা ও শিল্পে পারদর্শী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মাচরণ, সাহিত্য রচনা এবং দার্শনিক ও মননশীল চিন্তাধারার সুযােগ করে দিয়েছিল—যুগে যুগে যা মৌর্য, গুপ্ত, কুষাণ, সুলতানি, মােগল প্রভৃতি সভ্যতার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। মধ্যযুগে দিল্লী, আগ্রা, এলাহাবাদ, জৌনপুর প্রভৃতি নগর গড়ে ওঠে। সুপ্রাচীন কাল থেকেই আর্যাবর্ত তাই ভারত-ইতিহাসের কেন্দ্রস্থল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

২] দাক্ষিণাত্য : ভারতের দাক্ষিণাত্য অঞল তিনদিক থেকেই সমুদ্রবেষ্টিত (বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগর) হওয়ায় সেখানে সহজেই বহির্বাণিজ্যের বিকাশ ঘটেছে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই তাই, দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম উপকূলের বহু বন্দরের সঙ্গে পশ্চিম এশিয়া এবং রােমান সাম্রাজ্যের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য-সম্পর্ক ছিল।

আবার, রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, আর্যাবর্তের তুলনায় অপ্রশস্ত, হওয়ায় দাক্ষিণাত্যে কোনও বিশেষ একটি কেন্দ্রীভূত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার বদলে একাধিক শক্তির উত্থান-পতন বেশি দেখা গিয়েছে।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box