প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের গুরুত্ব বর্ণনা করাে।

প্রথম অংশ : 

বৌদ্ধধর্মের গুরুত্ব :
প্রাচীন ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ইতিহাসে বৌদ্ধধর্মের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, কারণ :
১) বৈদিকধর্মের কঠোরতা, যাগযজ্ঞ, জাতিভেদপ্রথা ও আচারসর্বস্ব ধর্মমতের পরিবর্তে বৌদ্ধধর্ম সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
২) বৌদ্ধধর্মে পুরুষের মতােই নারীদের সমানাধিকার দেওয়া হয়। অনেক সময় নারীরা বৌদ্ধ সংঘ পরিচালনা করতেন। ফলস্বরূপ ভারতীয় নারীরা শিক্ষিত ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়ে ওঠেন।
৩) বুদ্ধদেব ধনীদরিদ্র, উচ্চনীচনির্বিশেষে সকলের জন্য ধর্মের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। রাজা বিম্বিসার,অজাতশত্রু, ধনী বণিক অনাথপিন্ডক, সারিপুত্ত, সমাজের নিম্নবর্ণের মানুষ আনন্দ ও উপালি, দস্যু অঙ্গুলীমাল, পতিতা আম্রপালি সকলকেই বুদ্ধদেব আপন ভেবে কাছে টেনে নেন। 
৪) বুদ্ধদেব প্রচলিত সংস্কৃত ভাষার জটিলতা ত্যাগ করে কথ্য ভাষা বা পালির ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছিলেন, এর ফলে পালি ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
৫) বৌদ্ধধর্মে বাণিজ্যিক লেনদেন, যুদ্ধে অর্থ ধার দেওয়া এবং সমুদ্রযাত্রাকে অনুমােদন করা হয়েছে। তাছাড়া এই ধর্মে অহিংসার আদর্শ ও যুদ্ধবিগ্রহ বিরােধী প্রচার ব্যবস্থা বাণিজ্যের প্রসারে সহায়ক হয়েছিল। পরিশেষে বলা যায় যে, ভগবান বুদ্ধদেব ভারতবর্ষে প্রথম গণতান্ত্রিক ভাবাদর্শের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধ সংঘগুলির প্রতিটিই ছিল এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান।

দ্বিতীয় অংশ : 

জৈনধর্মের গুরুত্ব :
ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক জীবনের ওপর জৈনধর্মের প্রভাব ছিল অপরিসীম, কারণ : 
১) জৈনধর্মই সর্বপ্রথম বর্ণবিভক্ত ভারতীয় সমাজের বুকে সমস্ত মানুষের সমান অধিকারের কথা প্রচার করে।
২) সৎ কাজকর্মের মাধ্যমেই সব মানুষই মােক্ষলাভ করতে পারবে—জৈনধর্মের এই শিক্ষা সমাজকে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, মিথ্যাচার প্রভৃতির কলুষ প্রভাব থেকে মুক্ত করতে পেরেছিল। 
৩) জৈন তীর্থঙ্কররা সংস্কৃত ভাষার পরিবর্তে তখনকার দিনের কথ্য পালি ও প্রাকৃত ভাষায় শিক্ষাদান করতেন, ফলে বহু স্থানীয় ভাষা সমৃদ্ধিলাভ করেছিল। জৈন ধর্মশাস্ত্রগুলি প্রাকৃত ভাষায় রচিত হলেও জৈনধর্মের বিস্তারের মাধ্যমে কেবলমাত্র প্রাকৃত ভাষাই নয়, মাড়ােয়ারি, গুজরাটি, তামিল, তেলেগু ও কানাড়ি ভাষাও
সমৃদ্ধ হয়েছিল।
৪) জৈনধর্মের অহিংসার আদর্শ ও যুদ্ধের অপ্রয়ােজনীয়তা সংক্রান্ত ভাবনা চিন্তা প্রচারের ফলে প্রাচীন ভারতে পশুহত্যা কিছুটা হলেও বন্ধ হয় এবং ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটে।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box