দশম শ্রেণীর বাংলা জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্নোত্তর পর্ব
(প্রশ্নমান - ১)
১) ‘এ বিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের।—তপনের সন্দেহটি কী?
উঃ লেখকদের সম্পর্কে তপনের ধারণা ছিল তারা অসাধারণ, অন্য গ্রহের মানুষ ।তারা নিশ্চয় তার বাবা, ছােটোমামা ও ছােটোকাকুর মতাে সাধারণ মানুষ নয়।
২) তপন বাবা, ছােটোমামা ও ছােটোকাকুর সঙ্গে নতুন মেসাের কী কী মিল খুঁজে পেয়েছিল?
উঃ বাবা, ছােটোমামা ও ছােটোকাকুর মতাে লেখক নতুন মেসােও দাড়ি কামান, সিগারেট খান, খেতে বসে অর্ধেক খাবার তুলে দেন, চানের সময় চান করেন, ঘুমােনাের সময় ঘুমােন, খবরের কাগজের সব কথা নিয়ে তুমুল তর্ক করেন এবং সেজেগুজে সিনেমাতেও যান।
৩) ‘তপন প্রথমটা ভাবে ঠাট্টা-কোনটকে প্রথমে ঠাট্টা মনে হয়েছিল ?
উঃ মেসাে তপনের কাঁচা হাতের লেখাটা পড়ে বলেন যে তার লেখাটা ‘দিব্যি হয়েছে। কেবল একটু কারেকশান করে দিলেই ছাপার যােগ্য হবে। কথাগুলােকে প্রথমে তপনের ঠাট্টা মনে হয়েছিল।
৪) মেসাের উপযুক্ত কাজ কী হবে বলে ছােটোমাসি মনে করেন?
উঃ তপনের কাঁচা হাতে প্রথম লেখা গল্পটা পত্রিকায় ছেপে দেওয়াই মেসসার উপযুক্ত কাজ হবে বলে ছেটোমাসি মনে করেন।
৫) গল্প লেখার পর বাড়িতে সবাই তপনকে কী কী বলে ডাকত?
উঃ গল্প লেখার পর বাড়িতে সবাই তপনকে কবি, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী বলে ডাকা শুরু করে।
৬) ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সূচিপত্রে কী লেখা ছিল?
উ: ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সূচিপত্রে লেখা ছিল প্রথম দিন’ (গল্প) শ্ৰীতপন কুমার রায়”।
৭) ক্রমশ ও কথাটাও ছড়িয়ে পড়ে’—কোন্ কথাটা?
উঃ তপনের লেখা গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপা অক্ষরে বেরিয়েছে এই কথাটি যেমন শােরগােল ফেলেছে পাশাপাশি একটু-আধটু’ ‘কারেকশান’-এর কথাটাও সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে।
৮) তপন পত্রিকাটি কখন নিজের হাতে পায় ?
উঃ সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকাটি বাড়ির সকলের হাতে হাতে ঘুরলেও তপন নিজে সেটি দেখার সুযােগ পাচ্ছিল না। তার মা যখন তাকে গল্পটা পড়ে শােনাতে বলে তখনই পত্রিকাটি তপন হাতে পায়।
৯) তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই,—কোন্ ব্যাপারটাকে তপন দুঃখের বলেছে?
উঃ তপন যখন নিজের লেখা গল্প পড়তে বসে দেখে তার লেখা পুরােটাই কারেকশান, অর্থাৎ পুরােটাই বদলে গিয়েছে। জীবনের প্রথম লেখা গল্পের জন্য তার গর্ব তার আনন্দ এক মুহূর্তে উবে যায়। তার মনে হয় এর থেকে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।
● সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
(প্রশ্নমান - ৩)
১) তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল!'—তপন কে এবং কেন তার চোখ মার্বেল হয়ে গেল?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন হল গল্পের নায়ক, যার মনে ছিল লেখক হওয়ার অদম্য বাসনা। তপনের ধারণা ছিল লেখকেরা অন্য জগতের মানুষ হন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের কোনাে মিল থাকে না। তপনের নতুন মেসসা ‘একজন লেখক, সত্যিকারের লেখক’, তিনি নাকি বই লেখেন এবং সেই বই নাকি ছাপানােও হয়। কথাটা শুনে এবং জলজ্যান্ত একজন লেখককে সে নিজের চোখে দেখতে পাবে, একথা ভেবেই বিস্ময়ে তার এমন অবস্থা হয়েছিল।
২) তবে তপনেরই বা লেখক হতে বাধা কী?'--তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ কী?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু গল্পে কিশাের তপনের শিশুসুলভ অনুভূতি থেকেই কথাটির জন্ম তার নতুন মেসসা, জলজ্যান্ত লেখক কোনাে আকাশ থেকে পড়া জীব নয়—বাবা, ছােটোমামা ও ছােটোককুর মতােই নিছক মানুষ। এই রকম সাধারণ মানুষ হয়ে নতুন মেসাে যদি লেখক হতে পারেন তবে তারও লেখক হতে বাধা থাকার কথা নেই। অর্থাৎ একজন সাদামাটা মানুষ হয়েও লেখক হওয়া যায়—এই বােধ থেকেই তপনের মনে লেখক হওয়ার বাসনা জেগেছিল।
৩) পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?'—অলৌকিক ঘটনাটি কী?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের প্রথম লেখা গল্পটির কোনাে খবর না পেয়ে সে হতাশ। এমন সময় মাসি এবং নতুন মেসাে বেড়াতে এলেন, হাতে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকাটি দেখেই তপনের ‘বুকের রক্ত ছলকে ওঠে। তবে কি সত্যিই তার লেখা গল্পটি ছাপানাে হয়েছে, সেটি হাজার হাজার লােকের হাতে হাতে ঘুরবে? এই অসম্ভব ঘটনাটি ঘটে যাওয়াকেই তপনের অলৌকিক ঘটনা বলে মনে হয়েছে।
অনুরূপ প্রশ্ন : এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা। ঘটনাটি কী?
অথবা ‘সারা বাড়িতে শােরগােল পড়ে যায়। কী নিয়ে এই শােরগােল ?
৪) তপনের লেখা প্রথম দিন’ ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশের পর বাড়ির লােকেদের আলােচনা কীরূপ ছিল ?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তপনের প্রথম দিন’গল্পটি ছাপা অক্ষরে বের হওয়ার পর বাড়িতে শােরগােল পড়ে যায়। কেউ বলে ‘বারে, চমৎকার লিখেছে ততা। মেসাে বলেন কঁচা হাতের লেখা বলে একটু-আধটু কারেকশান করেছেন। মাসি একথায় আমল না দিয়ে প্রশংসা করলেন। আর ছিল শুধুই মেসাের গুণকীর্তন—এমন মেসাে পাওয়া ভাগ্য। নইলে ‘সন্ধ্যাতারা এমন লেখা ছাপতই না ইত্যাদি আলােচনা চলতে থাকে।
৫) ‘এর মধ্যে তপন কোথা?'—কথাটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে নতুন মেসাে নতুন ‘সন্ধ্যতারা পত্রিকাটি নিয়ে এসেছেন। সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তপনের প্রথম দিন’ গল্পটি ছাপা অক্ষরে বের হয়েছে। তপনের ‘প্রথম দিন’ গল্পটি ছাপা অক্ষরে বের হওয়ার ঘটনা ও নতুন মেসসার মহত্বের কথা নিয়ে সারা বাড়িতে শােরগােল পড়ে যায়। সকলের হাতে হাতে ঘুরলেও তপন পত্রিকাটি হাতে পায় যখন মা তাকে গল্পটি পড়তে বলে তখনই। পড়া শুরু করে এবং সে হতবাক হয়ে যায়—কেননা লেখার পুরােটাই কারেকশান। গল্পের প্রতিটি লাইন নতুন, আনকোরা এবং তার অপরিচিত। সে বুঝতে পেরেছে কারেকশনের নামে পুরাে গল্পটাই নতুন মেসাের পাকা হাতের লেখা। তাই সে এই গল্পের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায়নি।
৬) ‘আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।'-কেন?
উঃ সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তপনের লেখা প্রথম দিন’ গল্পটি ছাপা অক্ষরে বের হওয়ার পর বাড়িতে শােরগােল পড়ে যায়। তার মা যখন তাকে গল্পটি পড়তে বলে তখনই সে নিজের হাতে পত্রিকাটি পায়। পড়া শুরু করে এবং হতবাক হয়ে যায়—কেননা লেখার পুরােটাই কারেকশান। লেখার মধ্যে নিজের বলতে কিছুই সে খুঁজে পায়নি। সে নিজের লেখা ছাপা অক্ষরে দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু এ গল্পতাে পুরােটাই নতুন মেসাের লেখা। এই অপমান তার সহ্যের অতীত—তাই এই চরম আনন্দের দিনটিকেই সে তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন বলে মনে করেছে।
● রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
(প্রশ্নমান - ৫)
১) 'নতুন মেসােকে দেখে অজ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের। উদ্ধৃতিটির উৎস নির্দেশ করাে। নতুন মেসাের কী দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল?
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর কুমকুম’ গল্প সংকলনের ‘জ্ঞানচক্ষু’ শীর্ষক গল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি আস্তৃত। তপন ছােটোবেলা থেকে অনেক গল্প শুনেছে এবং পড়েছে। গল্প শােনা এবং পড়া তার নেশা ছিল। তাই গল্প সম্পর্কে তপনের একটা ধারণা হয়েছিল, কিন্তু এই গল্পের যাঁরা রূপকার, তাদের সম্পর্কে তপন কিছুই জানত না। তাঁদের চাক্ষুস দেখা যায় কিনা বা তারা বাবা-কাকাদের মতাে সাধারণ মানুষ কিনা এ বিষয়েও তপনের মনে কোনাে ধারণাই ছিল না। কিছুদিন আগে তপনের ছােটোমাসির বিয়ে হয়। গরমের ছুটি কাটাতে তার ছোটোমেসো
শ্বশুরবাড়িতে আসেন। তখনই একেবারে কাছ থেকে সে দেখে এক আশ্চর্য দৃশ্য। এই রকম ‘জলজ্যান্ত একজন লেখককে দেখে তপন আশ্চর্য হয়ে যায়। লেখক যে আকাশ থেকে পড়া কোনাে জীব নয়, তিনি তাে তপনদের মতােই এজন সাধারণ মানুষ। তিনি বাবা, ছােটোমামা ও ছােটোকাকুর মতােই নিছক একজন মানুষ। তাঁদের মতােই দাড়ি কামান, সিগারেট খান, খেতে বসে অর্ধেক খাবার তুলে দেন, চানের সময় চান করেন, ঘুমােনাের সময় ঘুমােন, খবরের কাগজের সব কথা নিয়ে তুমুল তর্ক করেন এবং সেজেগুজে সিনেমাতেও যান। এই রকম সত্যিকারের একজন লেখককে এত কাছ থেকে সামনাসামনি দেখে এবং অন্যদের থেকে বিন্দুমাত্রও তফাত করতে না পেরে সে বিস্মিত হয় এবং লেখক সম্বন্ধে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়।
অনুরূপ প্রশ্ন : ‘নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের।--সত্যিকারের লেখক সম্পর্কে তপনের ধারণা কী ছিল এবং কী দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল?
২) তপনের মনে লেখক হওয়ার বাসনা কীভাবে জাগল এবং তার পরিণতি কী হয়েছিল ?
উঃ কিশাের তপনের শিশুসুলভ অনুভূতি নিয়েই আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু গল্পের অবতারণা। তার নতুন মেসাে জলজ্যান্ত একজন লেখক। কোনাে আকাশ থেকে পড়া জীব নয় বাবা, ছােটোমামা ও ছােটোকাকুর মতােই নিছক মানুষ। এই রকম একজন সাধারণ মানুষ হয়ে নতুন মেসো যদি লেখক হতে পারেন তবে তারই বা লেখক হতে বাধা কোথায়? তার স্বপ্ন সেও ছােটোমেসোর মতাে লেখক হবে। মনের আবেগ থেকে সে একটা গল্প লিখেও ফেলে। তার এই নতুন হাতের নতুন লেখা নিয়ে অনেক স্বপ্ন। ভাবাবেগে সে সেই লেখা তার ছােটোমাসিকে শােনায়। ছােটোমাসি এই লেখার সম্ভাবনা দেখে তা নতুন মেশাের কাছে নিয়ে যায়। তারপর যখন শশানে তপন, তােমার গল্প তাে দিব্যি হয়েছে। একটু কারেকশান’ করে ইয়ে করে দিলে ছাপতে দেওয়া যায়। লেখা সম্পর্কে তার মন্তব্যই শেষ কথা বলে তপনের মনে হয়। তখন তার মনে লেখকসত্তা জেগে ওঠে।
বিকেলে চায়ের টেবিলে তপনের গল্প নিয়ে হাসি-ঠাট্টা হলে তপন রেগে যায় এবং মনে ব্যথা পায়। আবার ছােটোমেসাে যখন বলেন—“না-না আমি বলছি, তপনের হাত আছে’ এবং তা পত্রিকায় ছাপানাের কথাও বলেন। তখন সে আবেগে বিহ্বল হয়ে পড়ে। কয়েকদিন পরে সত্যিই ছােটোমেসাে আসেন হাতে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকাটি নিয়ে। শােনা যায় তাতে তপনের লেখাটা ছাপা হয়েছে। শােনার পর থেকেই নিজের লেখা ছাপা অক্ষরে দেখার জন্য তার মন উতলা হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত মায়ের নির্দেশে যখন সে গল্পটা পড়তে শুরু করে তখন দেখে গল্পের আদ্যপান্ত ‘কারেকশান’অর্থাৎ পুরােটাই ‘ইয়ে’ করা হয়েছে, লেখাটা দেখে চেনাই যায় না যে এটা তার লেখা। মায়ের অনুরােধে লেখাটা সে পড়ে ঠিকই কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই মেনে নিতে পারেনি। প্রচন্ড মনােব্যথা নিয়ে সে প্রতিজ্ঞা করে এর পরে সে লিখবে এবং তা যেমনই হােক, নিজেই ছাপতে দেবে।
৩) জ্ঞানচক্ষু গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনটি? এই চরিত্র সম্পর্কে তােমার অনুভূতি ব্যক্ত করাে।
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপন ‘শ্রীতপন কুমার রায়। তার চরিত্রে শিশুসুলভ আশা-আকাঙ্ক্ষা, কল্পনা ও বাস্তবের মিশ্রণ, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, আনন্দ-অভিমানের অভিব্যক্তি সবই আছে। তবে কল্পনাপ্রবণতা, সাহিত্যপ্রেম, সংবেদনশীলতা, আবেগপ্রবণতা এবং আত্মমর্যাদাবােধ তাকে আর পাঁচটা ছেলের থেকে একটু আলাদা করেছে।
● কল্পনাপ্রবণতা—তপনের নিজস্ব একটা কল্পনার জগৎ রয়েছে। লেখক সম্পর্কে তার ধারণা ছিল লেখক যেন ভিন গ্রহের মানুষ এবং তার দেখা সব মানুষের সঙ্গে লেখকের কোনাে মিল নেই।
● সাহিত্যপ্রেম—ছােটোবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি তপনের আগ্রহ ছিল, ছিল লেখকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। লেখক সম্পর্কে তার সমস্ত কৌতুহল নিরসন হয় বাবা-কাকার মতে সাদামাটা মানুষ নতুন মেসসাকে দেখে। তাঁকে দেখে তপনের মনেও লেখক হওয়ার বাসনা জেগে উঠে এবং ঝোঁকের বসে সে একটি গল্পও লিখে ফেলে।
● সংবেদনশীলতা—তপনের বয়সের ছেলেমেয়েরা গল্প লিখতে গেলেই—“রাজারানির গল্প লেখে, নয় তাে—খুন জখম অ্যাসিডেন্ট, অথবা না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া, এইসব মালমশলা নিয়েই লেখে। তপন শুধু ওর স্কুলে ভর্তি হওয়ার দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্প লিখেছে। এই লেখা নিয়ে বাড়ির সবাই হাসাহাসি করলেও মাসি ও নতুন মেসাের উৎসাহে সে উজ্জীবিত হয়।
● আবেগপ্রবণতা—গল্পের প্রথমে নতুন মেসাে তার লেখার প্রশংসা করলে এবং গল্পের শেষে তার লেখা ‘সন্ধাতারা’ পত্রিকায় ছাপা হলে সে আহ্লাদিত হয়। কিন্তু যখন সে জানতে পারে কারেকশান’-এর নামে তার গােটা গল্পটাই বদলে গিয়েছে তখন কষ্ট চাপতে সে লুকিয়ে ছাতে গিয়ে কাঁদে।
● আত্মমর্যাদাসম্পন্ন—ছােটো হলেও তপনের আত্মমর্যাদা প্রবল। তাই ‘কারেকশান’-এর নামে বদলে যাওয়া গল্পটাকে সে নিজের বলে মেনে নিতে পারেনি। সে ভেবেছে এবার লিখলে কারাে অনুকম্পায় নয়, সে নিজেই ছাপতে দেবে, তাতে লেখা বাতিল হলেও তার দুঃখ থাকবে না।
৩) ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে জলজান্ত লেখক চরিত্রটি বিশ্লেষণ করাে।
উঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র জলজ্যান্ত লেখক অর্থাৎ নতুন মেসাে। গােটা গল্পেই এই চরিত্র বিচরণ করেছে এবং প্রধান চরিত্রের ব্যক্তিত্ব ও আত্মােপলব্বির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
● গুণী, মিশুকে ও অতি সাধারণ আচরণ—নতুন মেসাে কলেজে পড়ান অর্থাৎ প্রফেসর আবার লেখকও। নানান পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা বের হয়। এই রকম একজন গুণী লােক হয়েও তিনি শ্বশুরবাড়িতে আর পাঁচজনের সঙ্গে আনন্দে হৈ-হুল্লোড় করে সময় কাটাচ্ছেন। তপনের মতে নতুন মেসসা জলজ্যান্ত একজন লেখক অথচ তাঁর আচার-আচরণ একেবারেই সাধারণ মানুষের মতাে। আশ্চর্য, কোথাও কিছু উলটোপাল্টা নেই, অন্যরকম নেই, একেবারে নিছক মানুষ।
● উদারচেতা—নতুন মেসাে কিশাের তপনের কাঁচা হাতের একটি গল্প হাতে পেলে সেটিকে বিচার করে দেখেন এবং বুঝতে পারেন বয়সের তুলনার তার ভাবনাটা একটু অন্যরকম। তাই একটু আধটু ‘কারেকশান’ করে সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপার ব্যবস্থা করেন।
● অসমর্থন যােগ্য কাজ- শ্বশুরবাড়িতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে পত্রিকায় ছাপতে দেওয়ার আগে কারেকশানের নামে প্রায় গােটা গল্পটাই নতুন মেসসা বদলে ফেলেছিলেন, যা একটি কিশাের মনকে ব্যথিত করে। পত্রিকা হাতে পাওয়ার পর তপনের
মানসিক অবস্থা যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল তার জন্য দায়ী নতুন মেসােই। একটা কিশােরের সম্ভাবনাকে এইভাবে আঘাত করাটাকে সমর্থনযােগ্য নয়। শ্বশুরবাড়ি আলাে করে রাখা এই চরিত্রটি গল্পে নানা দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।