দশম শ্রেণীর বাংলা সিরাজদ্দৌলা নাটকের প্রশ্নোত্তর পর্ব

● রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (প্রশ্নমান-৪) 
১) ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজের চরিত্রবৈশিষ্ট্য আলােচনা করো। 
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে সিরাজই প্রধান চরিত্র। বাংলার এই স্বাধীনচেতা নবাব ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র। তার চরিত্রে একদিকে রয়েছে জোরালাে ব্যক্তিত্ব, উজ্জ্বল দেশপ্রেম আর অন্যদিকে তেমনি রয়েছে দুর্বলতা, স্নেহপ্রবণতা এবং সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত মানসিকতা।
● নাটকের শুরুতে দেখা যায় সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াট্‌স ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লপ্ত। দরবারে ওয়াট্‌সের লেখা পত্র তাকে পড়ে শােনানাে হয় এবং তার বাংলা তর্জমা করেও সভাসদকে শােনানাে হয়। ওয়াট্‌সের এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তিনি তাকে তােপের মুখে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন এবং তীব্র ভৎসনা করে দরবার থেকে বের করে দেন। একইসঙ্গে দেখা যায় তিনি মিরজাফর, রাজবল্লভ ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের দ্বারা ষড়যন্ত্রের শিকার। কিন্তু তা বােঝা সত্ত্বেও তিনি তাদের শুধুমাত্র ভৎসনা করেছেন। তিনি তাদের কোনাে কঠোর মনােভাব না দেখিয়ে তাদের কাছে টানার বিফল প্রচেষ্টা চালান। এতে তার দুর্বল মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এ বিষয়ে তাঁর নিজেরই স্বীকারােক্তি—‘পারি না শুধু আমি কঠোর নই বলে।
● আবার ফরাসি সেনাপতির সঙ্গে কথােপকথনে তিনি যথেষ্ট সংযত। ইংরেজদের বিষয়ে ফরাসি সেনাপতিতাকে সচেতন করলে তিনি ফরাসি সেনাপতিকে কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে নাট্যকার সিরাজের অকৃত্রিম দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাকে দেশমাতা কল্পনা করে তিনি আবেগপ্রবণ কণ্ঠে বলেন,—“মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি এই বাংলা। এই বাংলার বুকে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখে তিনি শঙ্কিত ও ব্যথিত হন। বাংলার মানমর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী মিরজাফর, রাজবল্লভ, ঘসেটি বেগমকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং দেশ রক্ষার স্বার্থে তাদের কাছে পেতে চেয়েছেন। বাংলার বিপদের দিনে নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। দেশকে বাঁচানাের জন্য তিনি আত্মসমালােচনা করতেও ছাড়েননি।
● কাজেই নাট্যাংশে সিরাজ ক্রমবিচ্ছিন্ন এক জাতির সংগ্রাম, আশা-আকক্ষা, ব্যর্থতা ও হতাশার প্রতীক। তিনি বাইরে ভিতরে সমানভাবে ক্ষতবিক্ষত। পলাশির যুদ্ধ সম্পর্কে তার হাহাকারময় উক্তি—পলাশি রাক্ষসী পলাশি। এটা থেকে বােঝা যায় যে তিনি যুদ্ধের অনিবার্য পরিণতি আগেই কল্পনা করতে পেরেছিলেন। নাট্যাংশে তার চরিত্রের স্নেহপ্রবণতা, হতাশা এবং দেশপ্রেম এক সারিতেই রয়েছে। সব মিলিয়ে তিনি এক ট্র্যাজিক চরিত্র।
২) এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করে। কাকে দরবার ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তাকে কেন দরবার ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে ? 
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে প্রধান চরিত্র সিরাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে দরবার ত্যাগ করতে বলেছেন।
● বণিকের ছদ্মবেশধারী ইংরেজ ভারতে উপনিবেশ করতে কলকাতায় ঘাঁটি স্থাপন করে। ইংরেজ শক্তি বৃদ্ধি করে সিরাজের দরবার থেকে অন্দরমহল সর্বত্র ষড়যন্ত্রের বিষ ছড়িয়ে দেয়। ইংরেজদের অভিপ্রায় দমন করতে সিরাজ কলকাতা জয় করেন। ইংরেজ ও সিরাজের মধ্যে সন্ধির শর্ত রক্ষার প্রতিভূত করে ওয়াটসকে মুরশিদাবাদে রাখা হয়। দেখা যায় তারই মাধ্যমে দুরাত্মা ইংরেজ বাংলা দখলের ছক কষছে। ইতিমধ্যে ওয়াটসকে লেখা কাশিমবাজার কুঠির অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের গােপনপত্র এবং ওয়াটসের জবাবিপত্র নবাবের হস্তগত হয়। ষড়যন্ত্রের গভীরতা দেখে নবাব স্তম্ভিত হন। জানা যায় ওয়াটসন সৈন্য সমাবেশ করে বাংলায় এমন আগুন লাগাতে চান যা নাকি গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানাে যাবে না। নবাবের দরবারে বসেই ওয়াটস নবাবের বিরুদ্ধে ছুরি সানাচ্ছে। ওয়াটসের জবাবিপত্রে ছিল তারই নিশানা—‘নবাবের উপর নির্ভর করা অসম্ভব। চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। অপরদিকে ফরাসি প্রতিনিধি মসিয়ে লা ইংরেজ আগ্রাসনের প্রতিবিধান চেয়ে নবাবের দরবারে হাজির হন। ইংরেজের আগ্রাসন, ঔদ্ধত্য ও দুরভিসন্ধি দেখে নবাব ক্ষুব্ধ হয়েই ওয়াটসকে দরবার ত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
৩) ‘তােমাদের কাছে আমি লজ্জিত।–কে কাকে কথাটি বলেছেন? তার লজ্জার কারণ কী ? 
অথবা, আমাকে এই অক্ষমতার জন্যে তােমরা ক্ষমা করাে।'-কে কাকে কথাটি বলেছিলেন? বক্তার কোন অক্ষমতার প্রকাশ এখানে ঘটেছে?
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের প্রধান চরিত্র সিরাজদ্দৌল্লা এই উক্তিটি করেছেন।
● শ্রোতা বাংলাদেশে ফরাসিদের প্রতিনিধি মসিয়ে লা।
● নবাব সিরাজদ্দৌলা লজ্জা পাচ্ছেন কারণ বহুদিন ধরে ফরাসিরা বাংলাদেশে বাণিজ্য করছে। এখান থেকে কোনাে খারাপ ব্যবহার তারা পায়নি। ইংরেজ বনাম ফরাসিদের বিরােধ বহুদিনকার। তার সঙ্গে এ দেশ কোনােভাবে জড়িত নয়। সেটা তাদের ব্যাপার। ইংরেজরা নবাবের কোনাে অনুমতি ছাড়াই চন্দননগর অধিকার করেছে এবং ফরাসিদের সেখান থেকে চলে যেতে আদেশ করেছে। ফরাসীদের বাণিজ্য কুঠি যেন ইংরেজদের হাতে তুলে দেওয়া হয়—এমন আদেশ করেছেন। প্রতিকার চেয়ে ফরাসিরা নবাবের কাছে এলেও এ মুহূর্তে রাজকোশ শুন্য (কলকাতা জয়ে পূর্ণিয়ার শওকতজঙ্গের সঙ্গে যুদ্ধে এমনটা হয়েছে)-এখন নবাবের পক্ষে কোনাে যুদ্ধে যাওয়া সম্ভব নয়। ফরাসিদের প্রতি সব সহানুভূতি ও সমবেদনা থাকলেও এসময় কোনাে ঝুঁকি নেওয়া অসম্ভব। নবাব এই কারণেই অক্ষম এবং লজ্জিত।
৪) ‘আপনি আমাদের কী করতে বলেন জাঁহাপনা।' – জাঁহাপনা কে? আমাদের বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? জাঁহাপনা কী করার পরামর্শ দিয়েছিলেন? 
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশের প্রধান চরিত্র সিরাজদ্দৌলা এই উক্তিটি করেছেন।
● আমাদের বলতে মিরজাফর, জগৎ শেঠ, রাজা রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ ইত্যাদি সকলের কথা বােঝানাে হয়েছে।
● জাঁহাপনা সকলকে আহ্বান জানিয়ে বললেন, বাংলার মানমর্যাদা, স্বাধীনতা রক্ষা করতে প্রত্যেকের বুদ্ধি, চাতুর্য, শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। নবাবকে প্রত্যেকে যেন যথাশক্তি সাহায্য করেন। ব্যক্তিগতভাবে নবাব যদি কোনাে অন্যায় করেও থাকেন তাে বিপদ থেকে বাঁচার পর ন হয় সকলে তার বিচার করে শাস্তি দেবেন—প্রয়ােজনে তাকে ক্ষমতার মসনদ থেকে সরিয়ে দেবেন বাংলা হিন্দু-মুসলমান সকলের। তিনি যা করেছেন তার ভালাে-মন্দ নিয়ে তিনি কোনাে পক্ষপাতিত্ব দেখাননি। তার অপরাধ ও নিরপরাধ সকলের ক্ষেত্রে সমপ্রতিক্রিয়া তৈরি করবে—এটাই তিনি চান 
৫) ‘মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সবরকমে আমাকে সাহায্য করুন। সিরাজ কাদের কাছে এবং কে এই সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছেন?
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী এবং তার সভাসদদের অন্যতম মিরজাফর, রাজবল্লভ জগৎ শেঠ ও রায়দুর্লভদের কাছে বাংলা মানমর্যাদা রক্ষার্থে সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছেন। 
● একদিকে ঘরােয়া রাজনীতি, অপরদিকে ইংরেজদের ষড়যন্ত্রে সিরাজের সিংহাসন টলমল ওয়াটসনের গােপনপত্র এবং ওয়াটসের জবাবিপত্র নবাবের হস্তগত হলে এবং মর্ম উদ্ধার হলে প্রথমেই তিনি ওয়াক্সকে দরবার থেকে বের করে দেন। সেইসঙ্গে তার সভাসদদের একটি গােষ্ঠী এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এটা বুঝতে পেরে এবং সমস্ত তথ্য-প্রমাণ হাতে পেয়ে তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দেন। কিন্তু বাংলার ভাগ্যাকাশে এখন দুর্যোগের ঘনঘটা। ইংরেজদের কলকাতায় সৈন্য সমাবেশ, চন্দননগর দখল, কাশিমবাজারের অভিমুখে অভিযানই বলে দিচ্ছে বাংলার ভবিষ্যৎ। তাই এই দুঃসময়ে বাংলার মানমর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই নবাব সকলের কাছে সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছেন।
৬) আছে শুধু প্রতিহিংসা।’-কার এবং কার প্রতি এই প্রতিহিংসা? প্রতিহিংসাপরায়ণা বক্তা কী চান? 
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলার প্রতি, মাসি ঘসেটি বেগমের এই প্রতিহিংসা।
● সিরাজের মাসি আজ গৃহহারা, সন্তানহারা, নিঃস্ব, রিক্ত, সর্বহারা, রাজপ্রাসাদে তার স্থান দাসীর মতাে। মতিঝিলের সব সম্পদ তাে সিরাজ লুট করে নিয়েছে। মাসি ঘসেটির চোখে সে তাে দস্যু। তিনি চান ইংরেজ মুরশিদাবাদ দখল করুক, সিরাজ সিংহাসনচ্যুত হােক, সিংহাসন যেমন তার পাওনা ছিল না তেমন অন্যায়ভাবে পাওয়া সে সিংহাসন যেন তার অধিকারে না থাকে। শওকতজঙ্গ-এর সঙ্গে ঠিক যা যা হয়েছে তাই যেন হয় সিরাজের সঙ্গে—একমাত্র তখনই তিনি তৃপ্ত হবেন। 
৭) আমি আজ ধন্য। আমি ধন্য।' – উক্তিটির বক্তা কে? তিনি কেন ধন্য সংক্ষেপে লেখাে।
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা নিজেকে ধন্য বলে মনে করেছেন।
● মাত্র পনেরাে মাসের শাসনকালে সিরাজ ঘরে-বাইরে শত্রু দ্বারা আক্রান্ত। ইংরেজ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাবের বিনা অনুমতিতে চন্দননগর আক্রমণ করে এবং কলকাতা দূর্গে সৈন্য সমাবেশ করে। এতে নবাব বিচলিত হন। তিনি বুঝতে পারেন ইংরেজদের দমন করতে হলে তার সভাসদদের সহায়তা দরকার। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ সভাসদ যেমন—মিরজাফর, রায়দুর্লভ, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ সকলেই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই এঁদের কাছে টেনে আনার জন্য তিনি এঁদের বিবেক জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। বাংলার মান-মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই নবাব সকলের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। সকলকে আন্তরিকভাবে অনুরােধ জানান বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না। নবাবের এই অনুরােধে মিরজাফর ও অন্যান্যরা নবাবের সঙ্গে সহযােগিতার আশ্বাস দেন। নবাবের অনুগত মােহনলাল ও মিরমদন সিপাহসালার মিরজাফরের নির্দেশ মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সভাসদদের এই সহযােগিতাপূর্ণ আচরণে খুশি হয়ে তিনি একথাগুলি বলেন। 
৮) ‘জাতির সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী;'—কোন্ জাতির কথা বলা হয়েছে? তার সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী’ বলার কারণ কী? 
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের এই উদ্ধৃতিতে ‘বাঙালি জাতির।কথাই বলা হয়েছে।
● ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে সিরাজ এই হতাশাব্যঞ্জক উক্তিটি করেন। নবাব জাতির সৌভাগ্যসূর্য বলতে জাতির স্বাধীনতাকেই বুঝিয়েছেন। নবাব বুঝতে পারেন ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে বাণিজ্য করতে এসে ভারতের অর্থনীতি, রাজনীতিতেও থাবা বসিয়েছে। তারা পলাশির যুদ্ধে সিরাজকে পরাস্ত করে বণিকের মানদণ্ডকে রাজদণ্ডে পরিণত করতে চান। অন্যদিকে মিরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভদের চক্রান্ত সিরাজকে দুর্বল করে দিয়েছিল। ওয়াটসের উদ্দেশ্যে লেখা ওয়াটসনের চিঠি সিরাজের হাতে আসায় তিনি আতঙ্কিত হয়েছেন। সভায় সিরাজ প্রাথমিকভাবে শক্ত মনােভাবের পরিচয় দিলেও ঘরে বাইরের চক্রান্ত দেখে তিনি বুঝতে পেরেছেন একার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, তাই তিনি মিরজাফর, জগৎ শেঠ, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভদের চক্রান্তের শাস্তির বদলে এই দুঃসময়ে তাঁদের পাশে থাকার অনুরােধ জানিয়েছেন। সিরাজের কলকাতা আক্রমণকেই পলাশির যুদ্ধ বা ইংরেজদের কাশিমবাজার অভিযানের মূল কারণ বলে জগৎশেঠরা ব্যাখ্যা করেছেন। সিরাজ এক এক করে সব দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে তাঁদের কাছে অনুরােধ করেন বাংলার মানমর্যাদা রক্ষায় তারা যেন নবাবকে শক্তি ও সাহস দিয়ে সর্বপ্রকারে সাহায্য করেন। জাফর আলিকে পরম আত্মীয় সম্বােধন করে পাশে থাকার অনুরােধ জানান। এই দুর্বল মুহূর্তে পলাশির যুদ্ধের পরিণাম সম্বন্ধে সিরাজের এই খেদোক্তি। 
৯) ‘জানি না, আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসী পলাশি!’ বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী? অথবা, এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার যে মানসিক ভাবনার পরিস্ফুটন ঘটেছে, তা আলােচনা করাে।
উঃ নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে উক্তিটির বক্তা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা। তিনি পলাশির যুদ্ধের অবধারিত পরিণামে আতঙ্কিত হয়ে লুফার সামনে এমন করুণ আর্তনাদ করেন।
● মাত্র পনেরাে মাসের রাজত্বকালে নবাব ঘরে-বাইরে প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তার হাতে এসেছে ষড়যন্ত্রের নমুনা। ভরা দরবার কক্ষে তাকে হিংস্র, আগ্রাসী ওয়াট-এর মুখােমুখি হতে হয়। এই ইংরেজ প্রতিনিধির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে মিরজাফর, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। এই চক্রান্তকারীদের সহায়তা অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের সাহস বাড়িয়েছে। তিনি সগর্বে ঘােষণা করেছে—‘বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানাে যাইবে না। আবার ওয়াটসের চিঠিতে লেখা ‘নবাবের উপর নির্ভর করা অসম্ভব। চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এবং ঘসেটির আক্রমণাত্মক অভিসম্পাত নবাবকে বিচলিত করেছে। তাই তার মুখে প্রকাশ পেয়েছে অন্তরের তীব্র বেদনা। এই তীব্র বেদনা থেকে তিনি লুৎফাকে বলেছেন—“পনেরাে মাসের নবাবী লুৎফা, তার মাঝে পুরাে এক বছর যুদ্ধে, ষড়যন্ত্রভেদে, গুপ্তচর পরিচালনায় অতিবাহিত হয়েছে। আসলে তিনি তার শাসনকালে এমন সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন যেগুলির থেকে তিনি কোনাে মানুষকে শ্রদ্ধাও করতে পারেন না বা ভালােবাসতে পারেন না। ঠিক এইরকম পরিস্থিতির মধ্যেই পলাশির যুদ্ধের পদধ্বনি। তিনি জানেন না পলাশির যুদ্ধ কতটা রক্ত চায়, কারণ যুদ্ধের পরিণতি। সম্বন্ধে তিনি অনিশ্চিত। এই সবকিছুই নবাবের হতাশার প্রকাশ। তাঁর এটাও জানা ছিল যে এই। যুদ্ধই হবে বাংলার অস্তিত্বরক্ষার চরম রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। তাই ঘরে-বাইরে ক্ষতবিক্ষত নবাব। পলাশি সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে লুৎফাকে এই কথাগুলি বলেন।

Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box