দশম শ্রেণীর বাংলা অভিষেক কবিতার প্রশ্নোত্তর পর্ব
● অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (প্রশ্নমান-১)
১) ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কথাটির অর্থ কী?
উঃ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কথাটির অর্থ জলরাশি বা সমুদ্রের কন্যা অর্থ
● অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (প্রশ্নমান-১)
১) ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কথাটির অর্থ কী? উঃ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কথাটির অর্থ জলরাশি বা সমুদ্রের কন্যা অর্থাৎ দেবী লক্ষ্মী ।
২) ‘কি হেতু, মাতঃ গতি তব আজি এ ভবনে?'—ইন্দ্রজিৎ ধাইমাকে কীভাবে জ্ঞাপন করেছেন?
উঃ ইন্দ্রজিৎ কনক-আসন থেকে উঠে এসে ধাইমাকে প্রণাম জানিয়ে লঙ্কার কুশল সংবাদ জানতে চেয়েছেন।
৩) ‘ জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;-' –এই বিস্ময়ের কারণ কী?
উঃ বীরবাহুকে বধ করার শক্তি ও সাহস রামচন্দ্র ছাড়া আর কারাে নেই আর তাকে তাে – ‘নিশা-রণে সংহারিনু আমি’। তাই তিনি বিস্মিত। প্রকাণ্ড শরে তাকে খণ্ড খণ্ড করার পরে তারই হাতে ভাই কীভাবে হত হবে?
৪) ‘তবে এ বারতা, এ অদ্ভুত বারতা’—কোন্ বারতা'কে অদ্ভুত বলা হয়েছে?
উঃ ‘নিশা-রণে সংহারিনু আমি রঘুবরে। ইন্দ্রজিৎ যাকে প্রকাণ্ড শরে খণ্ড খণ্ড করে হত্যা করলেন তার হাতেই প্রিয় ভাই হত—এই সংবাদ তার কাছে অদ্ভুত বলেই মনে হচ্ছে।
৫) রামচন্দ্রকে ‘মায়াবী মানব’ বলা হয়েছে কেন?
উঃ ইন্দ্রজিতের শরের আঘাতে নিহত হয়েও রাম পুনরায় বেঁচে উঠেছেন। মায়াবলে বলী না হলে এ কাজ কখনই সম্ভব নয়, তাই রামচন্দ্রকে কুললক্ষ্মীর ‘মায়াবী মানব’ বলেই মনে হয়েছে
৬) ‘হৈমবতীসুত যথা নাশিতে তারকে মহাসুর;—কবিতায় ‘হৈমবতীসুত’- প্রসঙ্গ কেন আনা হয়েছিল?
উঃ দেবলোকের ত্রাস তারকাসুরকে বধ করে ‘হৈমবতীসুত’অর্থাৎ কার্তিকেয় যেমন স্বর্গে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল তেমনি লঙ্কার ত্রাস রামচন্দ্রকে বধ করে লঙ্কায় শান্তি ফেরাতে হবে তাই এই প্রসঙ্গের অবতারণা।
৭) ‘যথা বৃহন্নলারূপী কিরীটি,'—কবি কেন কিরীটির প্রসঙ্গ এনেছেন ?
উঃ রাবণকে নিশ্চিন্ত করতে এবং লঙ্কার কলঙ্ক মােচন করতে ইন্দ্রজিৎ বীরের সাজে সজ্জিত হচ্ছিলেন। এই প্রসঙ্গেই এসে গিয়েছে গােধন উদ্ধারে ও বিরাট রাজাকে বিপদমুক্ত করতে কিরীটির (অর্জুনের) বিরাটপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধসজ্জা।
৮) শমীবৃক্ষমূলে’—শমী কী? তার মূলে কী ঘটেছিল?
উঃ ‘শমী’ সাঁই—অর্থাৎ একপ্রকার কাটা গাছ। মহাভারতের ব্যাখ্যা অনুসারে এই বৃক্ষে পাণ্ডবগণ অস্ত্র লুকিয়ে রেখে বিরাট রাজার গৃহে যান।
৯) ‘হেমলতা আলিঙ্গয়ে তরু-কুলেশ্বরে’ –‘হেমলতা’ কী?
উঃ হেমলতা’ হল কনকলতা বা স্বর্ণলতা। নিজে উপরে উঠতে বা মাথা তুলে দাঁড়াতে সে বড়াে গাছকে জড়িয়ে ধরে। ।
১০) প্রমীলা নিজেকে অভাগী বলেছেন কেন?
উঃ প্রমােদকাননে স্বামীর সঙ্গসুখ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং যুদ্ধে স্বামীর সহগামিনী না হতে পারায় প্রমীলা নিজেকে অভাগী বলেছেন।
১১) ‘ত্যজ কিকিঙ্করীরে আজি? ‘কিকিঙ্করী' কথাটির অর্থ কী? কে নিজেকে কিকিঙ্করী বলেছেন?
উঃ ‘কিকিঙ্করী’ কথাটির অর্থ দাসী। প্রমীলা অর্থাৎ ইন্দ্রজিতের স্ত্রী নিজের বিনয়ের প্রকাশ করতেই নিজেকে কিকিঙ্করী বলে উল্লেখ করেছেন।
১২) প্রমীলার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ইন্দ্রজিৎ তাঁকে কী কী উপমায় ভূষিত করেন?
উঃ প্রমীলার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ইন্দ্রজিৎ তাকে ‘সতি’, ‘কল্যাণী’ এবং ‘বিধুমুখী’ উপমায় ভূষিত করেন।
১৩) প্রমীলার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ইন্দ্রজিৎ তাকে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?
উঃ প্রমীলার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ইন্দ্রজিৎ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি খুব তাড়াতাড়ি রামচন্দ্রকে বধ করে তার কাছে ফিরে আসবেন।
১৪) ‘কাপিলা লঙ্কা, কপিলা জলধি!’-কেন লঙ্কা এবং জলধি কেঁপে উঠল ?
উঃ মহাবীর ইন্দ্রজিৎ যখন ধনুকের ছিলায় টান দিচ্ছিলেন তখন তা পক্ষীন্দ্র অর্থাৎ গরুড়ের মহারবকেও হার মানাচ্ছিল। তাঁর ধনুকের ছিলার টঙ্কারেই লঙ্কা এবং জলধি কেঁপে উঠেছিল।
১৫) ‘উঠিছে আকাশে কাঞ্চন কঞ্চকবিভা’ –‘কাঞ্চন-কঞ্চক-বিভা’ কথাটি অর্থ কী?
উঃ ‘কঞ্চক’ এক ধরনের রক্ষাকবচ অর্থাৎ বর্ম। ধাতু নির্মিত এই বর্ম থেকে বিচ্ছুরিত হওয়া সােনালি উজ্জ্বল দ্যুতির কথাই এখানে বলা হয়েছে।
১৬) ‘এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!'—কে, কাকে, কেন একথা বলেছেন?
উঃ ইন্দ্রজিৎ, রাবণকে বলেছেন। গত রাতে রামকে তিনি বধ করেন, তিনি কীভাবে কোন্ মায়াবলে আবার বেঁচে উঠলেন? তাই কোনাে কিছু বুঝতে না পেরে পিতাকে একথা বলেছেন।
১৭) ‘এ কাল সমরে,'—এই সমরকে ‘কাল সমর’ বলেছেন কেন?
উঃ এই যুদ্ধ ভয়ানক এবং প্রাণঘাতী। তা ছাড়া সরাসরি মানুষের সঙ্গে এ যুদ্ধ নয়, এ যুদ্ধে মায়ার একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে – তাই এই যুদ্ধকে রাবণ ‘কাল সমর’ বলেছেন।
১৮) নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তােমা বারংবার।'—কেন ?
উঃ যুদ্ধে রামচন্দ্রের মৃত্যু নেই অথচ রাক্ষসকুলের মৃত্যু আছে। যে রামচন্দ্রকে ইন্দ্রজিৎ বধ করেছেন সেই রামচন্দ্র আবার বেঁচে উঠে বীরবাহুকে হত্যা করেছে। এই অলৌকিক ঘটনার জন্যই পুনরায় ইন্দ্রজিৎকে ওই কাল-সমরে পাঠাতে রাবণের মন চাইছে না।
১৯) ‘বিধি বাম মম প্রতি।’-রাবণের এমন মনে হয়েছে কেন?
উঃ অকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে রাবণ কুম্ভকর্ণকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন এতে তার মৃত্যু ঘটেছে। ইন্দ্রজিতের হাতে মৃত্যু হওয়া রামের হাতেই বীরপুত্র বীরবাহুর মৃত্যু ঘটেছে, তাই খুব স্বাভাবিক কারণেই রাবণের মনে হয়েছে বিধাতা তার প্রতি বিরূপ।
২০) ‘কে কবে শুনেছে’-কী কী শােনার কথা কবিতায় বলা হয়েছে?
উঃ শিলা জলে ভাসে এবং তােক মরে পুনরায় বাঁচে এই আজব কথাগুলাে শােনার কথা কবিতায় বলা হয়েছে।
২১) ‘উত্তরিলা বীরদর্পে অসুরারি-রিপু'—‘অসুরারি-রিপু' বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে?
উঃ‘অসুরারি’ অসুরকুলের শত্রু অর্থাৎ দেবরাজ ইন্দ্র। তার রিপু অর্থাৎ অসুরারির শত্রু বলতে এখানে ইন্দ্রজিতকেই বােঝানাে হয়েছে।
২২) ‘এ কলঙ্ক পিতঃ ঘুষিবে জগতে’—কোন্ কলঙ্ক?
উঃ পুত্র ইন্দ্রজিৎ বেঁচে থাকতে পিতা যাচ্ছেন যুদ্ধে—এই কলঙ্ক জগতে রটে যাবে।
২৩) ‘হাসিবে মেঘবাহন;’–‘মেঘবাহন কে? তিনি কেন হাসবেন?
উঃ যিনি মেঘকে বাহন করে ঘুরে বেড়ান অর্থাৎ দেবরাজ ইন্দ্রকে ‘মেঘবাহন’ বলা হয়েছে যে মেঘনাদ দেবরাজকে পরাজিত করতে পারে সে এক সামান্য নরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে
ভয় পাচ্ছে একথা শুনলে ‘মেঘবাহন’ অর্থাৎ দেবরাজ হাসবেন।
২৪) ‘দেহ আজ্ঞা মােরে; ইন্দ্রজিৎ রাবণের কাছ থেকে কী আজ্ঞা চেয়েছেন?
উঃ ইন্দ্রজিৎ রাবণের কাছ থেকে যুদ্ধে যাওয়ার আজ্ঞা বা অনুমতি চেয়েছেন।
২৫) ‘দেহ তার, দেখ, সিন্ধুতীরে/ ভূপতিত’ –কার দেহ? কেন ভূপতিত?
উঃ দেহটি রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণের। রাবণ তাঁকে অকালে ঘুম থেকে ডেকে যুদ্ধে পাঠান যুদ্ধক্ষেত্রে রামসেনার হাতে নিহত হয়ে তিনি সমুদ্রতীরে পড়ে রয়েছেন।
২৬) ‘যদি একান্ত সমরে ইচ্ছা তব,' –‘একান্ত সমরে ইচ্ছা থাকলে রাবণ ইন্দ্রজিত কী উপদেশ দিয়েছিলেন ?
উঃ রাবণ ইন্দ্রজিতকে অনুরােধ করেছিলেন তার একান্তই যদি যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে তবে সে যেন প্রথমে ইষ্টদেবের পূজা ও তারপর নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করে যুদ্ধে যাত্রা করেন ।
২৭) ‘নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর,' –‘নিকুম্ভিলা যজ্ঞ কী ?
উঃ লঙ্কাপুরীর নিভৃতে রয়েছে একটি যজ্ঞাগার। যে-কোনাে কার্যসিদ্ধির জন্য এই নিকুম্ভিলায় সূর্যদেবের পূজা ও যজ্ঞ সাঙ্গ করে যুদ্ধে বা যে-কোনাে শুভ কাজে যাত্রা করেন ।
২৮) ‘অভিষেক করিলা কুমারে।'—কীভাবে অভিষেক করা হল ?
উঃ পিতা রাবণ যথাবিহিত নিয়ম অনুসারে গঙ্গাজল ছিটিয়ে পুত্র ইন্দ্রজিতকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করলেন।
● সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (প্রশ্নমান-৩)
১) ‘অম্বুরাশি-সুতা উত্তরিলা’—‘অম্বুরাশি-সুতা’ কে? তিনি কী উত্তর দিলেন ?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় ‘অম্বুরাশি-সুতা’ হলেন সমুদ্রের কন্যা স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী।
● অম্বুরাশি-সুতা ইন্দ্রজিতকে জানালেন ঘােরতর যুদ্ধে বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে এবং শােকাহত পিতা রাবণ প্রতিশােধ নিতে যুদ্ধসাজে সজ্জিত হচ্ছেন। ২) ‘রােষে মহাবলী মেঘনাদ;'—মেঘনাদ কী করলেন?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে মেঘনাদ রুষ্ট হয়ে ফুল-মালা ছিড়ে এবং কানের কুণ্ডল-সহ গায়ের সমস্ত অলংকার খুলে ফেললেন। নিজেকে ধিক্কার দিলেন--শত্রুসৈন্য স্বর্ণলঙ্কাকে ঘিরে রেখেছে আর তিনি নারীদের মাঝে বিলাস যাপন করছেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, যুদ্ধে যাবেন এবং খুব শীঘ্রই তিনি শত্রুদমন করে এই অপবাদ ঘুচাবেন। এই বলে মহাবলী ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে রথে চড়ে বসলেন।
৩) ‘হেন কালে প্রমীলা সুন্দরী,—প্রমীলা কখন এসেছিল? তিনি আসায় পটের কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় মহাবলী ইন্দ্রজিৎ যখন যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে রথে চড়েন সেই সময় ত্রস্ত প্রমীলা সেখানে উপস্থিত হন।
● তিনি এসে প্রাণসখাকে জড়িয়ে ধরে এই কালযুদ্ধে যেতে বাধা দেন। উত্তেজনা প্রশমিত করে সস্নেহে শান্ত মেজাজে প্রাণনাথ ইন্দ্রজিৎ পত্নীকে বুঝিয়ে বলেন তার বাঁধন ছিন্ন করার ক্ষমতা ইন্দ্রজিতের নেই, কিন্তু তাঁর ও স্বর্ণলঙ্কার মান রক্ষা করতেই তিনি যুদ্ধে যাচ্ছেন। অতি শীঘ্রই তিনি শত্রুকে বধ করে ফিরবেন। প্রমীলার কাছে বিদায় নিয়ে উচ্চরব তুলে লঙ্কা-সহ জল-স্থল-আকাশ-বাতাস কম্পিত করে ইন্দ্রজিতের রথ উঠল আকাশপথে।
৪) ‘কহিলা কাঁদিয়া ধনী।'—এখানে ধনী কাকে বলা হয়েছে ? ধনী কেঁদে কী বলেছিল?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় ‘ধনী’ বলতে ইন্দ্রজিতের পত্নী প্রমীলাকে বােঝানাে হয়েছে।
● পতিদেবের হাত দুটি ধরে সুন্দরী প্রমীলা জানতে চাইল বৃক্ষশ্রেষ্ঠ পতি ইন্দ্রজিৎ তার মতাে অসহায় স্বর্ণলতাকে একা কার কাছে রেখে যাচ্ছেন তা সে বুঝতে পারছে না। পতিসঙ্গ ছাড়া সে প্রাণ ধরে রাখবে কেমন করে? মত্ত হাতি যখন গাছপালা মাড়িয়ে চলে যায় তখন তার পায়ে যদি অরণ্যের লতাগুল্ম আটকে থাকে তাকে তাে সে ফেলে যায় না। সামান্য ব্রততীকেও মাতঙ্গ পায়ে রাখে। আর সুন্দরী প্রমীলা তাে তার কিঙ্করী অর্থাৎ দাসী, তবুও ইন্দ্রজিৎ কেন ব্রততীসম প্রমীলাকে যূথনাথ হয়েও পরিত্যাগ করছে—তা সে বুঝতে পারছে না।
৫) ‘নমি পুত্র পিতার চরণে’—পিতার চরণে প্রণাম জানিয়ে ইন্দ্রজিৎ কী বলেছিলেন?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় পিতার চরণস্পর্শ করে মহাবলী ইন্দ্রজিৎ বলেছিলেন যে, রাঘব নাকি মরেও আবার বেঁচে উঠেছে এই অদ্ভুত ঘটনা তিনি মানতে পারছেন না। কোনাে মায়ার বলেই মনে হয় এই কাজ সংঘটিত হয়েছে। পিতা তাঁকে অনুমতি দিলে সেই পামর অর্থাৎ নীচ রামচন্দ্রকে তিনি শরের আঘাতে ভস্ম করবেন এবং ‘বায়ু-অস্ত্রে’ সেই ভস্মাবশেষ উড়িয়ে দিবেন। নতুবা পরাজিত করে রীতিমতাে বেঁধে তাকে লঙ্কাধিপতি রাবণের পায়ের কাছে এনে ফেলবেন।
৬) বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে রাবণ কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে প্রাথমিক ভাবে লঙ্কাধিপতি রাবণ মূহ্যমান। পরক্ষণেই শােকাহত রাবণ প্রতিশােধ নিতে যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন। রণবাদ্যের সঙ্গে হস্তীর গর্জন, অশ্বের হ্রেষাধ্বনি, পদাতিক সৈন্য এবং রথীদের হুঙ্কারে চারিদিক কেঁপে ওঠে।
৭) এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!'—কী বুঝতে পারেন না? পিতার কাছে ইন্দ্রজিৎ কী নিবেদন করেছেন?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় ধাইমার ছদ্মবেশী দেবী লক্ষ্মীর কাছ থেকে ইন্দ্রজিৎ যখন শুনলেন রামের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে, তখন তিনি অবাক হন, কারণ আগের রাত্রের যুদ্ধে তিনি রামচন্দ্রকে খণ্ড খণ্ড করে নিহত করেছেন। তিনি কীভাবে আবার বেঁচে উঠলেন সেটা বুঝতে পারছেন না।
● তাই তিনি পিতার পায়ে প্রণাম জানিয়ে বলেছেন তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি রামচন্দ্রকে নিধন করে বা বেঁধে তাকে রাজার পায়ের কাছে আনবেন।
৮) ‘অভিষেক করিলা কুমারে।'—কার, কেন এবং কীভাবে অভিষেক হয়েছিল?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় লঙ্কার রাজপুত্র ইন্দ্রজিতের অভিষেক হয়েছিল।
● অভিষেক হল কোনাে নতুন পদে নিয়ােগের পূর্বের স্নান-শুদ্ধির অনুষ্ঠান। পিতা রাবণ মায়ার প্রভাবে বার বার ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার। তাই নতুন বিপদের সম্ভাবনার কথা ভেবে ভীত হয়েই তিনি ইন্দ্রজিতের অভিষেকের আয়ােজন করেছেন।
● প্রথমে ইন্দ্রজিৎ ইষ্টদেবের পূজা ও নিকুম্ভিলা যজ্ঞ শেষ করে তারপর রাজা যথাবিহিত নিয়ম পালন করে এবং গঙ্গাজল ছিটিয়ে পুত্র ইন্দ্রজিতকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করলেন।
৯) ‘অভিষেক’ কবিতায় মেঘনাদকে কী কী নামে ভূষিত করা হয়েছে?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘অভিষেক’ কবিতায় মেঘনাদকে মহাবাহু, দশাননাত্মজ, রথীন্দ্রভ, ইন্দ্রজিৎ, অসুরারি-রিপু, কুমার প্রভৃতি আখ্যা ছাড়াও বীরেন্দ্রকেশরী, মহাবলী, রথী, রাক্ষস-কুল-শেখর, রাক্ষস-কুল-ভরসা, বীরমণি প্রভৃতি বিশেষণেও ভূষিত করেছেন।
● রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (প্রশ্নমান-৫)
১) অভিষেক’ কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখাে।
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ কাব্যের ‘অভিষেক’ পাঠ্যাংশে ধাইমার ছদ্মবেশে দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিতের সামনে উপস্থিত হলে ইন্দ্রজিৎ তাঁকে প্রণাম করে লঙ্কার শুভ সংবাদ জানতে চাইলেন। তিনি জানালেন—ঘােরতর যুদ্ধে রামের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে এবং শােকাহত পিতা রাবণ তাই যুদ্ধসাজে সজ্জিত হচ্ছেন। নিশা-রণে ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে খণ্ড খণ্ড করে হত্যা করেছেন, তার পরেও কীভাবে তার প্রিয় ভাইকে হত্যা করল, আর এই অদ্ভুত খবরই বা তিনি কোথা থেকে পেলেন? দেবী ইন্দ্রজিৎকে জানালেন রঘুপতি রাম মায়াবী মানব, সে মরেও বেঁচে গিয়েছে, তিনি যেন তাড়াতাড়ি রাজসভায় গিয়ে রাবণকে যুদ্ধযাত্রায় বিরত করে লঙ্কার মান রক্ষা করেন।
● এই খবর শুনে ক্ষোভে-দুঃখে মেঘনাদ গায়ের অলংকার খুলে ফেললেন। নিজেকে ধিক্কার দিলেন—শত্রুসৈন্য স্বর্ণলঙ্কাকে ঘিরে রেখেছে আর তিনি নারীদের মাঝে বিলাস যাপন করছেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, যুদ্ধে যাবেন এবং খুব শীঘ্রই শত্রুদমন করে এই অপবাদ ঘুচাবেন। মহাবলী ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে রথে চড়েছেন, এমন সময় ত্রস্ত প্রমীলা তাকে জড়িয়ে ধরে এ কালযুদ্ধে যেতে বাধা দেন। উত্তেজনা প্রশমিত করে সস্নেহে পত্নীকে বুঝিয়ে দেন যে, স্বর্ণলঙ্কার মান রক্ষা করতে যুদ্ধে যাচ্ছেন এবং অতি শীঘ্রই তিনি শত্রুকে বধ করে ফিরবেন। প্রমীলার কাছে বিদায় নিয়ে উচ্চরব তুলে লঙ্কা-সহ জল-স্থল-আকাশ-বাতাসকে কম্পিত করে ইন্দ্রজিৎ যাত্রা করলেন।
● অন্যদিকে রাবণ সজ্জিত হচ্ছেন যুদ্ধসাজে। রণবাদ্যের সঙ্গে হস্তীর গর্জন, অশ্বের হ্রেষাধ্বনি, পদাতিক সৈন্য এবং রথীদের হুঙ্কারে চারিদিক কম্পিত হচ্ছে। এমন সময় দ্রুতগতিতে সেখানে ইন্দ্রজিৎ উপস্থিত হলেন। পিতার পায়ে প্রণাম জানিয়ে তিনি সবিস্ময়ে রামচন্দ্রের মরে আবার বেঁচে ওঠার কথা জানিয়ে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চাইলেন এবং বলেন তাকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিলে তিনি রামচন্দ্রকে নিধন করে বা তাকে বেঁধে রাজার পায়ের কাছে এনে ফেলবেন। মেঘনাদ রাক্ষসকুলের ভরসা, তাকে যুদ্ধে পাঠাতে পিতার মন চাইছে না, তার ওপর বিধাতাও তাঁর প্রতি বিরূপ। নইলে কে কবে শুনেছে শিলা জলে ভাসে বা মরা মানুষ আবার বেঁচে ওঠে।
● পুত্র ইন্দ্রজিৎ পিতাকে জানান তিনি থাকতে সামান্য মানুষ রামকে অযথা তিনি ভয় পাচ্ছেন। বীরপুত্র থাকতে পিতা যুদ্ধে যাচ্ছে এ কথা শুনলে মেঘবাহন ইন্দ্র হাসবেন এবং অগ্নিদেবও রুষ্ট হবেন। অনুমতি দিলে তিনি রামচন্দ্রকে বধ করবেন এবং দেখবেন কী ওষুধে এবার সে বেঁচে ওঠে। রাবণ ইন্দ্রজিতকে জানালেন অসময়ে ঘুম ভাঙিয়ে কুম্ভকর্ণকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন, তার মৃত্যু ঘটেছে তাই তিনি ভীত। পুত্র মেঘনাদের যদি একান্তই যুদ্ধে যাওয়ার বাসনা থাকে তবে আগে নিকুম্ভিলায় ইষ্টদেবের পূজা ও যজ্ঞ শেষ করবে, তারপর কাল সকালে যুদ্ধযাত্রা করবে। এরপর রাজা গঙ্গাজল ছিটিয়ে তাকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করলেন।
২) কার কোন পদে অভিষেক হয়েছিল? অভিষেকের ব্যাপারে রাবণের অভিমত কী?
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় লঙ্কার রাজপুত্র ইন্দ্রজিতের অভিষেক হয়েছিল। অভিষেক হল কোনাে নতুন পদে নিয়ােগের পূর্বের স্নান-শুদ্ধির অনুষ্ঠান। লঙ্কাধিপতি রাবণ ইন্দ্রজিতকে সেনাপতি-পদে নিয়ােগ করার জন্য এই অভিষেকের আয়ােজন করেছিলেন।
● পিতা রাবণ বার বার ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার। অসময়ে ঘুম ভাঙিয়ে কুম্ভকর্ণকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন, তার মৃত্যু ঘটেছে। নিশা-রণে ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে খণ্ড খণ্ড করে হত্যা করার পরেও সেই মায়াবী মানব রাম মরেও বেঁচে গিয়েছে এবং খল-যুদ্ধে বীরবাহুকে হত্যা করেছে। তাই বীর এবং শেষ সম্বল প্রিয় পুত্র ইন্দ্রজিতকে যুদ্ধে পাঠাতে মন চাইছে । নিজেই যুদ্ধে যাবেন বলে মনস্থ করেছেন এবং রণসাজে সজ্জিত হচ্ছেন। ইন্দ্রজিতের আকুতিতে শেষ পর্যন্ত তাকে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিলেও কিছু শর্ত দিয়েছেন। প্রথমে ইন্দ্রজিৎ ইষ্টদেবের পূজা ও নিকুম্ভিলা যজ্ঞ শেষ করে পরদিন যুদ্ধে যাবে। ইন্দ্রজিৎ সমস্ত শর্ত পালনের পর রাজা যথাবিহিত নিয়ম অনুসরণ করে এবং গঙ্গাজল ছিটিয়ে পুত্র ইন্দ্রজিতকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করলেন।
৩) ‘অভিষেক’ কবিতা অবলম্বনে ইন্দ্রজিতের চরিত্র আলােচনা করাে।
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘অভিষেক’ কবিতায় তার প্রিয় নায়ক ইন্দ্রজিতকে সর্বসুন্দর করে গড়ে তুলেছেন।
◆ শ্রদ্ধাশীল—পাঠ্যাংশের শুরুতেই ধাইমার ছদ্মবেশে আসা লক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে কুশল বিনিময়ে, বীরবাহুকে ‘প্রিয়ানুজ’ সম্ভাষণে, স্ত্রী প্রমীলার প্রতি স্নেহার্দ সম্ভাষণে এবং সর্বোপরি পিতার প্রতি সম্মান ও সংযত বাক্য বিনিময়ে তার চরিত্রের শ্রদ্ধাবনত চিত্তের পরিচয় ফুটে উঠেছে।
● দেশপ্রেম ও কর্তব্যপরায়ণতা— মাইকেল নিজে পরাধীনতার জ্বালা বহন করেও ইন্দ্রজিতের
দেশপ্রেমে বিন্দুমাত্র খাদ মেশাননি। ছদ্মবেশী দেবী লক্ষ্মীর কাছে লঙ্কার দুরবস্থার কথা শুনে এবং পিতার যুদ্ধপ্রস্তুতির খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং প্রমােদকানন ত্যাগ করে পিতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। প্রবল আত্মবিশ্বাসে তিনি পিতার কাছে যুদ্ধের অনুমতি আদায় করে নিয়েছেন। দায়িত্বপরায়ণ মেঘনাদ সেনাপতি পদে অভিষিক্ত হয়েছে।
● আদর্শ স্বামী ও প্রেমিক- ইন্দ্রজিতের শৌর্য-বীর্য-বীরত্ব নিছক কর্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি যখন লজ্জার মানমর্যাদা রক্ষা করতে, বৃদ্ধ পিতাকে যুদ্ধ থেকে বিরত করতে যুদ্ধযাত্রার আয়ােজন করছেন, সেই চরম মুহূর্তেও তিনি স্ত্রী প্রমীলার প্রেমের যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন এবং তার প্রেমের মর্যাদা দিয়েছেন যথাযথভাবে। সতি, / বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে। সে বাঁধে?’ – স্ত্রীর প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর তিনি সস্নেহে এবং শান্ত-সুন্দরভাবে দিয়েছেন।
● বীরত্ব—সমগ্র ‘মেঘনাদবধ কাব্যেই ছড়িয়ে রয়েছে মেঘনাদ অর্থাৎ ইন্দ্রজিতের বীরত্বগাথা। মেঘনাদের প্রতি মাইকেলের সম্ভাষণ ব্যবহারেই তাঁর বীরত্বে সামগ্রিক প্রকাশ পায়। রামচন্দ্রকে তিনি পরাজিত করেছেন, কিন্তু আবার মায়াবলে জীবন ফিরে পেয়ে প্রিয়ানুজে হত্যা করেছে। এই সংবাদ শােনামাত্রই তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রমীলাকেও তাঁর সম্ভাব্য জয়ের কথা ঘােষণা করে, তার কাছ থেকে অনুমতি আদায় করে পিতার কাছে হাজির হয়েছেন এবং পিতাকে ভরসা দিয়েছেন অবিলম্বে রামচন্দ্রকে পরাজিত করে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় পিতার চরণে নিবেদন করবেন। তিনি রাক্ষসকুলের ভরসা। তাই তিনি বেঁচে থাকতে বৃদ্ধ পিতাকে যুদ্ধে যেতে দেননি। কেননা আত্মসম্মানজ্ঞানী মেঘনাদ মনে করেছেন তিনি বেঁচে থাকতে পিতা যুদ্ধে গেলে তাতে লঙ্কার কলঙ্ক চারিদিকে রটবে এবং মেঘবাহন ইন্দ্র এই নিয়ে রসিকতা করবেন।
● এইভাবে পাঠ্যংশের সংক্ষিপ্ত পরিসরেও মেঘনাদ হয়ে উঠেছেন সর্বগুণান্বিত যথার্থ নায়ক ।
৪) ‘অভিষেক’ কবিতা অবলম্বনে রাক্ষসাধিপতি রাবণের চরিত্র আলােচনা করাে।
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘অভিষেক’ কবিতায় ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার ও সংশয়ী পিতা হিসেবে রাক্ষসাধিপতি রাবণকে তুলে ধরেছেন।
● কুম্ভকর্ণের মৃত্যুর জন্যে রাবণ নিজেকে দোষারােপ করলেন। অবশ্য তার সম্পর্কে তিনি গর্বিত, তাঁর বীরত্বে মুগধ । তাঁর মন চাইছে না ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধে পাঠাতে। তিনি দুর্বল হয়ে পড়ছেন, আশঙ্কিত হচ্ছেন, দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। যদি একান্তই সে যেতে চায় তাহলে সে যেন নিকুম্ভিলা যজ্ঞগৃহে বসে ইষ্টদেব অগ্নির আরাধনা করে নেয়। তিনি তাকে সেনাপতি পদে বরণ করে নেবেন। সেদিন সন্ধ্যা হয়ে গেছে, সে যে পরদিন সকালে যুদ্ধে যায়। এখানে তিনি একদিকে রাক্ষস অধিপতি, ভাইয়ের বীরত্বে মুগষ্ট অন্যদিকে সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহ। রাবণ চরিত্রের এই মানবিক অনুভূতি ও আবেগ তাঁকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। কুম্ভকর্ণকে অকালে ঘুম থেকে জাগানাের কথা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। সেটা যে তার মারাত্মক ভুল তাও তিনি স্মরণ করেছেন ও আত্মসমালােচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ইন্দ্রজিতের মঙ্গলকামনাতেই তিনি অগ্নিদেবের পূজার আয়ােজন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। একদিকে পিতা অন্যদিকে লঙ্কাধিপতি, একদিকে নিয়তির শাসন অন্যদিকে পুরুষার্থ—এই দুইয়ের বিপরীত চাপে চরিত্রকে দ্বন্দ্বময় করে তুলেছে।
৫) ‘কেমনে ধরিবে প্রাণ তােমার বিরহে এ অভাগী?’ - কার উক্তি? এই কথােপকথনের মাধ্যমে তাদের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা সংক্ষেপে নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
উঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘অভিষেক’ কবিতায় উদ্ধৃতিটি করেছেন ইন্দ্রজিতের স্ত্রী প্রমীলা।
● ছদ্মবেশী প্রভাষার মুখে রাঘবের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু এবং পিতার যুদ্ধযাত্রার কথা শুনে শােকাহত ইন্দ্রজিৎ প্রােমােদ উদ্যান ছেড়ে লঙ্কা যাত্রায় উদ্যত হলে প্রমীলার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। সেখানের কথােপকথনেই তাদের দাম্পত্যের মধুর সম্পর্ক ধরা পড়েছে। ইন্দ্রজিৎ চলে যেতে চাইলে অসহায় প্রমীলা বহু অনুরােধ উপরােধ অনুযােগ জানান। সে অসহায় হয়ে কাতর কণ্ঠে বলে -“কেমনে ধরিবে প্রাণ তােমার বিরহে’। তিনি তার স্বামীকে বােঝানাের চেষ্টা করেন এই বলে যে তার প্রাণ জড়িয়ে গেছে মেঘনাদরুপ ‘তরু কুলেশ্বর’–এ কাজেই তাকে ছেড়ে প্রাণনাথ কোথায় চললেন? তার বিরহে তিনি কীভাবে দিন কাটাবেন?
● বনে হাতির পায়ে লতা জড়িয়ে গেলে বনলতার আকর্ষণ ছিন্ন হলেও হাতি সেই লতাকেও পদতলে স্থান দেয়। তিনি শুধু সেটুকুই চান। ইন্দ্রজিৎ বীরদর্পে প্রমীলার আবেদন প্রত্যাখান না করে তাকে যথাবিহিত সম্মান—ভালােবাসা জানিয়েছেন—তিনি বলেছেন প্রমীলা তাঁর মন যেভাবে জয় করে বেঁধে রেখেছেন, সে বাঁধন ছেড়ার সাধ্য কারাে নেই। ইন্দ্রজিতে জিতি তুমি সতি, / বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে / সে বাঁধে?’ প্রমীলাকে সম্মান জানিয়ে আশ্বাসিত করতে বলেছেন—“বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী। এখানে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য প্রেমের এক মধুর চিত্র ফুটে উঠেছে।