‘শ্রীকৃষকীর্তন' কাব্যের আবিষ্কার, প্রকাশ, নামকরণ ও কবিজীবনী আলােচনা করাে।

শ্রীকৃষকীর্তন আবিষ্কার : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাঁকুড়া জেলার কাকিল্যা গ্রামের অধিবাসী দেবেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায়ের গােয়ালঘর থেকে শ্রীকৃষকীর্তন' কাব্যের পুথিটি আবিষ্কার করেন বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ। [ মুদ্রণ-প্রকাশ : ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শ্রীকৃয়কীর্তন কাব্য মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয়। সম্পাদনা করেন পুথিটির আবিষ্কর্তা বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ নিজেই।

নামকরণ : সাধারণত পুথির শেষ পৃষ্ঠায় গ্রন্থের নাম, রচয়িতা ও রচনাকাল সম্পর্কে জ্ঞাতব্য তথ্য থাকলেও শ্রীকৃয়কীর্তন কাব্যের প্রাপ্ত পুথিটির প্রথম এবং শেষদিকের কয়েকটি পৃষ্ঠা পাওয়া যায়নি। সেজন্য গ্রন্থনামও অজানা থেকে যায়। সম্পাদক বসন্তরঞ্জন কিংবদন্তি এবং ঐতিহ্য অনুসরণ করে গ্রন্থটির নাম দেন শ্রীকৃষকীর্তন'। পুথির ভিতরে গ্রন্থ লেনদেন বিষয়ক একটি চিরকুট পাওয়া যায়, যাতে শ্রীকৃয়সন্দর্ভ' নামে একটি গ্রন্থের উল্লেখ থাকায় কেউ কেউ মনে করেন আবিষ্কৃত পুথিটির নাম “শ্রীকৃয়সন্দর্ভ'। কিন্তু এ বিষয়ে কোনাে নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়ায় শ্রীকৃয়কীর্তন’ নামটিই প্রচলিত।

কবি-জীবনী: পুথির শেষে ‘পুস্পিকা’-অংশে সাধারণত কবির পরিচয় লিপিবদ্ধ থাকে। কিন্তু আলােচ্য পুথির পুস্পিকা পাওয়া যায়নি এবং গ্রন্থের মধ্যেও ভণিতা ছাড়া আত্মপরিচয়মূলক কোনাে বিবরণ না থাকায় এই পুথি থেকে কবি সম্পর্কে জানার একমাত্র অবলম্বন হল ভণিতা। প্রাপ্ত পুথিতে তিনরকম ভণিতার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়-বড়ু চণ্ডীদাস, চণ্ডীদাস এবং অনন্ত বড় চণ্ডীদাস, তবে বেশির ভাগ ভণিতায় আছে বড় চণ্ডীদাস। কবির কথায়—বাসলীচরণ শিরে বন্দিআ/গাইল বড়ু চণ্ডীদাস'। এর থেকে জানা যায়, কবি বাসলীদেবীর উপাসক ছিলেন। বড় শব্দ বটু’ থেকে আগত বলে অনেকের ধারণা। চণ্ডীদাস ছিলেন ব্রাত্মণবংশের সন্তান। কয়েকটি ক্ষেত্রে অনন্ত বড়ু চণ্ডীদাস' উল্লেখ থাকায় কেউ কেউ মনে করেন অনন্ত’ কবির অপ্রচলিত আর-এক নাম। কবির জন্মস্থান সম্পর্কেও মতভেদ আছে—কারও কারও মতে বীরভূম জেলার নানুর অথবা বাঁকুড়ার ছাতনা গ্রাম তাঁর জন্মস্থান। অনুমান করা হয়ে থাকে, চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ কিংবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে চণ্ডীদাস এই কাব্য রচনা করেছিলেন।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box