বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ করে। সেই যুগের প্রধান প্রধান সাহিত্যের পরিচয় দাও।
■ সাহিত্যের যুগবিভাগ: বাংলা সাহিত্যকে প্রধানত তিনটি যুগে বা পর্যায়ে ভাগ করা হয়—
১) বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ—প্রাক্-তুর্কি আক্রমণ যুগ (৮০০ থেকে ১২০৩ খ্রি.)।
২) বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ—তুর্কি আক্রমণ থেকে কবি ভারতচন্দ্রের মৃত্যু পর্যন্ত যুগ (১২০৩ থেকে ১৭৬০ খ্রি.)।
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ—ইউরােপ প্রভাবিত যুগ (১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান কাল)। [ এই তিন যুগের প্রধান সাহিত্যগুলি হল—
● আদি যুগের সাহিত্য : আদি যুগের বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নিদর্শন হল ‘চর্যাপদ’ নামক সংকলিত কাব্যগ্রন্থ। তবে অষ্টম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী অবধি বাঙালি কবিরা সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় সাহিত্যরচনা করেছেন, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে যার উত্তরাধিকার বর্তেছে। জয়দেবের সংস্কৃত কাব্য গীতগােবিন্দম্ এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
● মধ্যযুগের সাহিত্য : বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের বিস্তার ছয় শতাব্দী ধরে। চৈতন্যদেবকে (জন্ম ১৪৮৬ খ্রি.) মাঝখানে রেখে এই যুগকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়—প্রাক্-চৈতন্য যুগ (১২০৩-১৫০০ খ্রি.) এবং উত্তর-চৈতন্য যুগ (১৫০০-১৭৬০ খ্রি.)। প্রাক্-চৈতন্য যুগে রচিত হয়েছে কৃত্তিবাসী রামায়ণ, বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃয়কীর্তন’, মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃয়বিজয়’, বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের বৈয়ব পদাবলি এবং তিনটি আদি, মনসামঙ্গলকাব্য’। উত্তর-চৈতন্যযুগের বিচিত্র ও প্রচুর সাহিত্যসম্ভারের মধ্যে বৃন্দাবনদাস, লােচনদাস, জয়ানন্দ এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্য জীবনী কাব্য ; জ্ঞানদাস ও গােবিন্দদাসের বৈষব পদাবলি ; কাশীরাম দাসের মহাভারত; বহুসংখ্যক মনসা, চণ্ডী, ধর্ম ও অন্নদামঙ্গল কাব্য (কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ঘনরাম চক্রবর্তী, ভারতচন্দ্র ইত্যাদি); মুসলমান কবি দৌলত কাজি ও আলাওলের কাব্যসকল এবং শাক্ত পদাবলি উল্লেখযােগ্য। পলাশির যুদ্ধ (১৭৫৭ খ্রি.) বা ভারতচন্দ্রের মৃত্যু (১৭৬০ খ্রি.) থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে যুগসন্ধিক্ষণ বলা হয়।
● আধুনিক যুগের সাহিত্য : ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। এই কলেজের পাঠ্যপুস্তক রচনার মধ্য দিয়েই বাংলা সাহিত্য প্রবেশ করে আধুনিক যুগে। আখ্যানকাব্য, মহাকাব্য, নাটক-প্রহসন, গীতিকাব্য এবং সংবাদপত্র-সাময়িকপত্রের পথ বেয়ে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে বাংলা সাহিত্য প্রবেশ করে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে। উপন্যাস, ছােটোগল্প, রম্যরচনা এবং আধুনিক রীতির কবিতা ও নাটকের সম্ভারে আজ বাংলা সাহিত্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য।