বিদ্যাপতি কোন্ দেশের মানুষ ছিলেন? বাংলা ভাষায় তিনি কিছু লেখেননি, তবু তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় কেন?

● বিদ্যাপতির দেশ: বিহারের অন্তর্গত দ্বারভাঙ্গা জেলার (অধুনা মধুবনী মহকুমা/মিথিলা) বিসী গ্রামের অধিবাসী ছিলেন কবি বিদ্যাপতি।
বিদ্যাপতির দেশ: বিহারের অন্তর্গত দ্বারভাঙ্গা জেলার (অধুনা মধুবনী মহকুমা/মিথিলা) বিসী গ্রামের অধিবাসী ছিলেন কবি বিদ্যাপতি।

বিদ্যাপতিকে বাংলা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করার কারণ : মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি বাংলা দেশের অধিবাসী ছিলেন না, বাংলাতে তিনি কোনাে পদ রচনাও করেননি। অথচ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার সঙ্গে তাকে স্মরণ করা হয়। এর কারণ—

(১) একসময় বাংলা দেশ থেকে ন্যায়শাস্ত্র পড়ার জন্য অনেক ছাত্র মিথিলায় যেত। দেশে ফেরার সময় বিদ্যাপতির অনেক উৎকৃষ্ট পদ তারা শিখে আসত। এর ফলে তাঁর বহু পদ বাঙালি রসিকজনের মধ্যে প্রচারিত হয়।
রাধাকৃয়ের প্রণয়-বিষয়ক রচনা বাঙালির কাছে পরম আদরের বস্তু, তাই বাঙালি ভক্ত ও রসজ্ঞদের কাছে বিদ্যাপতির সমাদর।
৩) জানা যায়, স্বয়ং চৈতন্যদেব বিদ্যাপতির পদাবলি আস্বাদন করে প্রভূত আনন্দ পেতেন। বৈয়ব ভক্তসমাজ তাে বটেই, সাধারণ বাঙালির কাছেও চৈতন্যদেবের স্থান অনেক উচ্চে। “বিদ্যাপতি জয়দেব চণ্ডীদাসের গীত। আস্বাদয়ে রামানন্দ স্বরূপ সহিত।।”
চৈতন্য-আস্বাদিত পদাবলিও তাই বাংলা দেশে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে।
৪) শুধু চৈতন্যদেব নয়, বিদ্যাপতির পদ সমগ্র বৈষব সমাজের কাছে গৃহীত। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে বিদ্যাপতির উল্লেখ আছে; ‘ক্ষণদাগীত চিন্তামণি’, ‘পদ কল্পতরু ইত্যাদি সংগ্রহে বিদ্যাপতির অন্তর্ভুক্তি তাঁর গ্রহণযােগ্যতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
৫) বিদ্যাপতি যে-ভাষায় রাধাকৃয়-বিষয়ক পদ রচনা করেছেন তা বাংলা না হলেও বাঙালি পাঠক ও শ্রোতার কাছে সেগুলির রসাস্বাদন তেমন দুঃসাধ্য নয়। ফলে বাংলা ভাষাভাষীর সঙ্গে এগুলির যােগ আরও নিবিড় হয়েছে।

এইসব কারণে বিদ্যাপতির পদাবলি বাংলায় রচিত না হওয়া সত্ত্বেও বাংলা সাহিত্যের পরম সম্পদরূপে গৃহীত হয়েছে।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box