ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা আলোচনা করো।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন :- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা আলোচনা করো।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন :-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দোলন ধীরে ধীরে দেশ জুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সমগ্র বিশ্ব দুটি শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়, — একটি ইটালি, জার্মানি ও জাপানকে নিয়ে গড়ে ওঠে অক্ষশক্তি, অপরটি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও আমেরিকাকে নিয়ে গঠিত হয় মিত্রশক্তি । সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানি কর্তৃক আক্রান্ত হলে কমিউনিস্ট পার্টি মিত্রশক্তিকে সমর্থনের নীতি নেয় । এই নীতি মেনেই ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি মিত্রশক্তিভুক্ত ব্রিটিশ -এর বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে । কমিউনিস্ট পার্টি নীতিগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেও শ্রমিক শ্রেণি কিন্তু ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণের পরেই ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজি -সহ জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করলে তার প্রতিবাদে ভারতের শ্রমিকশ্রেণি বিক্ষোভ আন্দোলনে শামিল হয় । দিল্লি, কানপুর, লখনউ, বোম্বাই, নাগপুর, আমেদাবাদ, জামশেদপুর প্রভৃতি স্থানে শ্রমিকরা সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘট ও হরতাল পালন করে । বিহারের জামশেদপুরে (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) টাটা লৌহ ও ইস্পাত কারখানায় ১৩ দিন ব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয় । জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ শুরু করবে না, এই দাবি জানিয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট করে । গুজরাটের আমেদাবাদে কাপড়ের কলগুলিতে বস্ত্রশিল্প শ্রমিকরা প্রায় সাড়ে তিন মাস টানা ধর্মঘট করে । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়কালে কলকাতার ট্রাম কোম্পানির শ্রমিক ইউনিয়ন বেশ কয়েকবার ধর্মঘটে অংশ গ্রহণ করে ।

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ভারত ছাড়ো আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও তারপর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে থাকে এবং আন্দোলন চরমে পৌঁছোয় । অতিরিক্ত সময়ে কাজ না করার দাবিতে বোম্বাই ডক ইয়ার্ডের প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয় । ভাতা বাড়ানোর দাবিতে উত্তর-পশ্চিম রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কর্মীরা ৪ দিন ব্যাপী ধর্মঘট করে । কলকাতা, বোম্বাই বন্দরের শ্রমিকরা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে ইন্দোনেশিয়াগামী জাহাজে মালবোঝাই করতে অস্বীকার করে, কারণ ওই জাহাজে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম দমনে নিযুক্ত সেনাদের রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হচ্ছিল । বোম্বাইয়ের শ্রমিকরা নৌবিদ্রোহের সমর্থনে ধর্মঘটে যোগদান করে । বোম্বাইয়ের রাজপথে পুলিশ ও সেনাদলের সঙ্গে শ্রমিকদের খণ্ডযুদ্ধে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক নিহত হয় । সারা ভারত ডাক ও তার বিভাগের কর্মীরা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই -এ ধর্মঘটের ডাক দেয় । কমিউনিস্ট পার্টির সহযোগিতা ছাড়াও এভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিকশ্রেণি গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেছে ।

বোম্বাই: আন্দোলনের সূচনার দিন থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৪২-এর ৯ থেকে ১৪ আগস্ট বােম্বাইতে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে গণবিক্ষোভ ঘটে। শিল্পাঞ্চল ও বন্দর এলাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। সরকারি প্রশাসন সাময়িক লোপ পায়। পরিস্থিতির মােকাবিলায় সরকার পুলিশ ও সেনা তলব করে। 

গুজরাট : মজদুর মহাজন সঙ্ঘের পরিচালনায় আমেদাবাদে বস্ত্রশিল্পের প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল হয়। তারা আজাদ সরকার নামে একটি সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলে। 

বিহার : এখানে টাটা লৌহ ইস্পাত কারখানার শ্রমিকরা ১০-১৩ আগস্ট টানা চারদিন ধর্মঘট করে। তারা দাবি জানায় যে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করবে। ১২ আগস্ট ডালমিয়া নগরে শ্রমিক ধর্মঘট সংঘটিত হয়।

Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box