কর্তার ভূত গল্পে ‘ভুতুড়ে জেলখানার’ পরিচয় দাও।
উত্তরঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা
গল্পে ‘লিপিকা’ গ্রন্থের
অন্তর্গত ‘কর্তার ভূত’ গল্পটি
একটি রূপকধর্মী কথিকা। রূপকের আড়ালে লেখক সমকালীন ভারতবর্ষের অন্তঃসারশূন্য, ধর্মতন্ত্রশাসিত
সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। এই গল্পে ভারতবর্ষকে ‘ভুতুড়ে জেলখানা: এবং দেশবাসীকে
‘কয়েদি’ হিসাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। জেলখানা বলতে যা বুঝি সেটা চারদিকে দেওয়াল দিয়ে
ঘেরা থাকে। এই গল্পের ভূতুড়ে জেলখানাটির প্রাচীর অবশ্যই আছে কিন্তু সেই প্রাচীর কারো
চোখে পড়ে না। ভুতের শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই জেলখানার দেওয়ালে গর্ত করার
কথা ভাবে। কিন্তু চোখে দেখা যায় না বলে সেই প্রাচিরে কেউ ফুটো করতে পারে না। এর ফলে
দেশের লোককে ভুতুড়ে জেলখানায় আজীবন হাজতবাস করতে হয়। রূপকের আড়ালে বাস্তব সত্যটি হল এই যে, রক্ষণশীল
দেশবাসী নতুনকে স্বাগত জানাতে ভয় পায় বলে প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যকে অর্থাৎ ধর্মতন্ত্রকে
অবলম্বন করে বাঁচতে চায়। এই ধর্মতন্ত্র অনুদার, বদ্ধ এবং প্রগতির পরিপন্থী। পুরাতন
রীতি সর্বস্ব ভারতীয় সমাজব্যবস্থাই হলো ‘ভুতুড়ে জেলখানা’
আর প্রাচীনপন্থী ভারতবাসীরা হল সেই জেলখানার কয়েদি। জেলখানায় যেমন সশ্রম
কারাদণ্ড দেওয়া হয় তেমনি ভুতুড়ে জেলখানার কয়েদিরা সারাদিন ঘানি টানে আর শরীরের সমস্ত
তেজ হারিয়ে হিমশীতল শান্তি অনুভব করে।