টেলিভিশনের আবিস্কার ও বিকাশের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

 টেলিভিশনের ইতিহাস

১৮৯৬ সালের দিকে রেডিও আবিস্কার হয়ে গিয়েছিল । তাতে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিভিন্ন বার্তা প্রেরন করতে পারত, তবে তখনো ছবি বা ভিডিও সিগন্যাল পাঠানোর যন্ত্র আবিস্কার হয়নি । কিন্তু এর ঠিক ১০০ বছরের মধ্যেই টেকনোলজি এত উন্নত হয়েছে যে ক্রিকেট খেলা হোক বা বাংলা সিরিয়াল আমাদের মনোরঞ্জনের একটা বড় জায়গা হল টেলিভিশন, যার সাহায্যে আমরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের খবর কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পেয়ে যায়, কিন্তু একটু চিন্তা করলে দেখা যায় যে আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে কেউ ভাবতেও পারেনি যে একটি যন্ত্রের মাধ্যমে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে বসে ছবি এবং শব্দ প্রেরন করা যাবে, তাও আবার কোন কেবল তার ছাড়া তাই টেলিভিশন আবিস্কারের ইতিহাসটাও বেশ আশ্চর্যময় ।

১৯০০ শতকের শুরু থেকেই কিছু আবিস্কারক এমন একটা কিছু যন্ত্রের আবিস্কার করতে চেয়েছিলেন যার সাহায্যে শব্দের পাশাপাশি ভিডিও সিগন্যালও রিসিভ করা যায়, বলা হয় এই আবিস্কারকদের মধ্যে প্রথম সফল টেলিভিশন আবিস্কার করেছিলেন জন লগি বেয়ার্ড নামের এক বৈজ্ঞানিক যিনি ১৯২৪ সালের পৃথিবীর প্রথম টেলিভিশন আবিস্কার করে ইতিহাসের জায়গা করে নিয়েছেন, এই টেলিভিশনের বাংলা অর্থ হল ‘দূরদর্শন’ । মানে দুরের জিনিস দেখার যন্ত্র, টেলিভিশনের মাধ্যমে যে ছবি দেখি তা অনেকগুলো ছবির মিশ্রণ, আসলে অনেকগুলো ছবিকে পর পর দ্রুত গতিতে চালালে সেটাকে আমাদের ব্রেন ধরতে পারে না, তখন আমাদের ব্রেন মনে করে সেটি কোন ছবি নয় বরং একটি ভিডিও, জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৪ সালের টেলিভিশনের আবিষ্কার করলেও পরেও অনেক বিজ্ঞানীরা টেলিভিশন আবিস্কার চালিয়ে যান এবং তারা মনে করেন জন লগি বেরর টেলিভিশনের কিছু কমতি রয়েছে তখন জন লগি বেয়ার্ড তার আবিস্কারকে আরও উন্নতমানের বানানোর চেষ্টা করেন, ওই সমস্ত বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে একজন হলেন ফিলো ফ্রান্সরত সফল টেলিভিশনের আবিস্কার জন লগি বেয়ার্ড করলেও টেলিভিশনের আবিস্কার তার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে, ক্যামেরার আবিস্কারের পর ফ্যাক্সের মাধ্যেমে ছবি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল, এই পর ১৮৯৭ সালে কোন কেবল তার ছাড়াই সিগন্যাল পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়, জন লগি একটি স্কুলে পড়ানোর সময় টেলিভিশনের আবিস্কারের কথা ভাবেন, ১৮৯৭ সালের স্যার উইলিয়াম ক্রুভ একটি ক্যাথোড রে-টিউব আবিস্কার করেন, আর ক্যাথোড রে-টিউব থেকে জন লগি টেলিভিশন আবিস্কারের অনুপ্রেরণা পান এই ক্যাথোড রে-টিউবে অনেকগুলি ইলেকট্রিক গান লাগানো থাকতো তা থেকে ইলেকট্রন গিয়ে টেলিভিশনকে পর্দায় গিয়ে পড়ত, আর তাতে ছবির সৃষ্টি হত । তখন এই টেলিভিশনকে মেকালিক্যাল টেলিভিশন বলা হত । কিন্তু জন লগির এই টেলিভিশনে একটি সমস্যা ছিল কারন এখানে ছবির লাইনগুলো খুব কম ছিল, এমনকি ছবি অস্পষ্ট হত, তখন ফিলো ফ্রান্সরত একটি নতুন ভাবনার টেলিভিশন আবিস্কার করেন যার সাহায্যে ছবি বা ভিডিও আরও স্পষ্ট দেখা যেত, আর এটাকে বলা হয় ইলেক্ট্রনিক টেলিভিশন ।

টেলিভিশন শব্দটি ১৯০০ সালে প্রথম ব্যাবহার করেন একজন রাশিয়ান বিজ্ঞানী যার নাম ছিল কনস্টানন্টিন প্যারেস্কাই, ১৯২৮ সালে আমেরিকায় পৃথিবীর প্রথম টেলিভিশন স্টেশন প্রথম স্থাপন করা হয় । 

আর ১৯৩০ সালে BBC প্রথম টেলিভিশনের মাধ্যমে টিভি প্রোগ্রাম শুরু করে, বর্তমানে অনেক বড় বড় পর্দায় টিভি আমরা দেখতে পায়, কিন্তু ১৯২৯ সাল পর্যন্ত টেলিভিশনে মাত্র ১২ ইঞ্ছি পর্দা/ডিসপ্লে ব্যবহার করা হত, এমনকি টিভির সাথে অনেক বড় বড় উপকরণও থাকতো, ভারতে সর্বপ্রথম টেলিভিশনের সম্প্রচার হয়েছিল ১৯৫৯ সালে ১৫ই সেপ্টেম্বর, এবং কলকাতার একজন ধনী ব্যবসায়ী ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম টেলিভিশন কিনেছিলেন । অ্যামেরিকার সর্বপ্রথম ১৯৫৩ সালে কালার টিভির প্রচলন শুরু হয়, সেখানে ভারতের কালার টিভির প্রচলন শুরু হয় ১৯৮২ সালে, ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আধুনিক দেশ গুলোতে সাদাকালো টিভির প্রচলন ছিল কিন্তু ১৯৭২ সালের থেকে কালার টিভির প্রচলন শুরু হয়, সর্বপ্রথম ১৯৫০ সালে জেনেদ কোম্পানি টিভির রিমোট আবিস্কার করেছিলেন, যা সে সময় টিভির সাথে একটি তার দিয়ে যুক্ত থাকত, আগেকার দিনে CRT টিভির প্রচলন ছিল কিন্তু বর্তমানে LCD, LED প্রচলন বেশি, 

আমেরিকা যখন প্রথমবার চাঁদে মানুষকে পাঠায়, তখন এই ঘটনা সারা বিশ্ব জুড়ে টিভিতে সম্প্রচার করা হয়েছিল, আর এই সম্প্রচার ৬০ কোটি মানুষ দেখেছিল । টেলিভিশনের প্রথম বিজ্ঞাপন ছিল ২০ সেকেন্ডের, যা বুলেরো কর্পোরেশনের বিজ্ঞাপন ছিল । বর্তমানে টিভির দাম সস্তা তাই বেশির ভাগ বাড়িতে টিভি দেখা যায়, কিন্তু এই দৃশ্যটা আজ থেকে ২০ বছর আগে ভিন্ন ছিল সেই সময় টিভির দাম বেশি থাকাই একটি গ্রামে মাত্র কয়েকটি বাড়িতে টিভি ছিল, আর সেই বাড়িগুলোতেই ভিড় জমত টিভি দেখার জন্য, তবে বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে স্মার্ট ফোনের চল বেশি হওয়ায় টিভি দেখার প্রবণতা আগের তুলনায় অনেকটা কমে এসেছে ।