নতুন সামাজিক ইতিহাসের উপর একটি টিকা লেখো। অথবা, আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের দিকটি সংক্ষেপে আলোচনা ।
উত্তর: রাজা-রাজড়ার বৃত্তান্তে এতদিন থেমেছিল ইতিহাস, রাজবাড়ির কথায় ফুরিয়েছিল তার দৌড়। কিন্তু আজ ইতিহাসের রাজত্ব দিগন্ত প্রসারিত। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে, সমাজ জীবনের স্তরে স্তরে, জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-সংস্কৃতির নানান ধারায় ইতিহাস আজ নিজেকে যুক্ত করেছে। আধুনিক ইতিহাসচর্চা যেমন সমগ্রতার সন্ধানী, তেমনি বৈচিত্র্যেরও।
বিষয়বস্তু: সাবেক
ইতিহাসে প্রধানত সমাজের একটি বিশেষ অংশের জীবনযাপন, তাদের কাজকর্ম, চিন্তা-ভাবনা এবং
উত্থান-পতনের উপর আলোকপাত করা হয়। কিন্তু নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা সামগ্রিকভাবে সমাজের
কথা বলতে চায়। সমাজে অস্তিত্ব আছে কিন্তু সাবেক ইতিহাসে স্থান পায়নি এমন সবকিছুই
আধুনিক ইতিহাসের বিষয়। সেই সঙ্গে খেলাধুলা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, শিল্পচর্চা,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ, চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতি, সামরিক বিবর্তন ও নারী সমাজের
কথাও আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বৈচিত্র্যের দিক। এককথায়, নতুন আধুনিক ইতিহাসচর্চা সমাজবদ্ধ
মানুষের সামগ্রিক জীবনব্যাখ্যা।
অ্যানালস গোষ্ঠী: ১৯২৯ সালে ফ্রান্সে মার্ক ব্লখ ও লুসিয়ান ফেবরের উদ্যোগে অ্যানাল অফ ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামক পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চায় রাজনৈতিক প্রসঙ্গ ব্যতিরেকে সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষ, পরিবার, মনস্তত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থান লাভ করে।
নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা: জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-শ্রেণি
নির্বিশেষে সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গের মানুষদের নিয়ে যে ইতিহাসচর্চা বর্তমানে বিশেষ
জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, তা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা নামে পরিচিত। এই ধরনের ইতিহাসচর্চায়
তথাকথিত নিম্নবর্গের নাম না জানা মানুষরাই ইতিহাসের যথার্থ নায়কে পরিণত হয়েছে। এই
ধারার সাথে যুক্ত কয়েকজন বিখ্যাত ঐতিহাসিক হলেন রণজিৎ গুহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম
ভদ্র প্রমুখ।
মন্তব্য: নতুন সামাজিক
ইতিহাসচর্চা সমগ্রতার সন্ধানী। সমাজবদ্ধ কিন্তু স্বীকৃতিহীন মানুষদের ইতিহাসের পাদপ্রদীপে
তুলে এনে এই ইতিহাসচর্চা যথার্থ অর্থেই ইতিহাসে নব দিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছে।