আধুনিক ‘ভারত ইতিহাসের উপাদানরূপে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: আধুনিক ভারত ইতিহাসের আকর উপাদান হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী জীবনস্মৃতি’ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকাশ: লেখকের
আত্মকথন প্রথমে প্রবাসী’ পত্রিকায়
ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং পরে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
পরিসর ও আত্মজীবনীতে ১৮৬১-৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লেখকের আত্মকথা ও দেশকথা বর্ণিত হয়েছে।
ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল: আত্মজীবনীতে
রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের স্মৃতির সূত্র ধরে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল, রুচি, খাদ্যাভ্যাস,
পারিবারিক সম্পর্ক ও বিধি-নিষেধ, নারী স্বাধীনতা, শিশুদের জীবনধারা, বালক রবীন্দ্রনাথের
কাব্য-সংগীত চর্চা এবং বয়ঃপ্রাপ্তির কথা সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এগুলি আধুনিক
বাংলার সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
স্বাদেশিকতা: আত্মজীবনীর
স্বল্প পরিসরে স্বাদেশিকতা নিয়ে অত্যন্ত সরস ভাষায় তিনি যে অনবদ্য আলোচনা করেছেন,
ইতিহাসের যেকোনো ছাত্রকে তা মুগ্ধ করে। সেই যুগে অভিজাত বাঙালি পরিবারে বিভিন্ন বিদেশি
প্রথার প্রচলন শুরু হলেও স্বদেশের প্রতি অনুরাগও জাগ্রত ছিল। স্বয়ং তাঁর পরিভাষায়—“বাহির হইতে
দেখিলে আমাদের পরিবারে অনেক বিদেশি প্রথার প্রচলন ছিল। কিন্তু আমাদের পরিবারের হৃদয়ের
মধ্যে একটা স্বদেশাভিমান স্থিরদীপ্তিতে জাগিতেছিল।”
রাজনৈতিক ঘটনাবলী: জীবনস্মৃতি’তে-তে কবি রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বাদেশিকতার গোপনসভা এবং তাতে ঠাকুরবাড়ির বালকদের যোগদান, দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ধুতি ও পাজামার সমন্বয়ে একটি সর্বভারতীয় পরিচ্ছদ প্রচলনের চেষ্টা, স্বদেশি দেশলাই কারখানা বা কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠায় যুবকদের উদ্যোগ প্রভৃতির উল্লেখ করেছেন।
হিন্দু মেলার প্রসঙ্গ:আত্মকথনে কবি নবগোপাল মিত্রের নেতৃত্বে হিন্দুমেলার প্রতিষ্ঠা ও তার কার্যকলাপের এক বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, এই হিন্দমেলাই তৎকালীন ভারতবর্ষে স্বদেশভাবনার অন্যতম কেন্দ্ররূপে গড়ে উঠেছিল।