আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বাংলার সন্ধ্যার যে চিত্র এঁকেছেন তা উল্লেখ করাে।

উঃ রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় প্রকৃতিপ্রেমিক কবি সান্ধ্য পরিবেশের অপরূপ সৌন্দর্য এবং বিচিত্র গন্ধের মাঝে অনুভব করেছেন রূপসি বাংলার প্রাণের স্পন্দন। আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি ঘাসের উপর বসেন বাংলার নিসর্গ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভােগের অমােঘ টানে। সূর্যাস্তের মুহূর্তে ভাসমান মেঘ কামরাঙা লাল বর্ণ , কবি তার সঙ্গে মিল খুঁজে পান মৃত মনিয়া পাখির। কবি প্রত্যক্ষ করেন শান্ত-অনুগতভাবে বাংলাদেশের বুকে নেমে আসে নীল সন্ধ্যা। তার মায়াবি আলােয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতি। কবির কাছে এই প্রকৃতি এক প্রাণময়ী মূর্তি। কবির মনে হয় এই মায়াময় সন্ধ্যা কোনাে এলােকেশী কন্যা; যার চুল কবির চোখের উপর, মুখের উপর খেলা করে। আসলে পল্লিবাংলার সান্ধ্য রূপে কবি মােহাবিষ্ট।

কবি জীবনানন্দের মনে হয়, এই বিরল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত বাকি পৃথিবী। কবি পৃথিবীর আর কোথাও দেখেননি যে কেশবতী কন্যার কেশরাশি অবিরত চুম্বন করে যাচ্ছে হিজল-কাঁঠাল কিংবা জামের পাতা। আসলে বাংলার নীল সন্ধ্যার মায়াবী পরশ ঝরে পড়ছে বঙ্গপ্রকৃতির সব স্থানে, কবির মনের সব কোণে। কবি নানা অনুষঙ্গে অনুভব করেছেন সন্ধ্যার স্নিগ্ধ ঘ্রাণ। কখনাে নরম ধান, কলমির গন্ধ; আবার কখনাে হাঁসের পালক, শরবন, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু সুবাসে বাংলার সন্ধ্যা আমােদিত করে দিয়েছে কবিকে। এসবের মাঝে কিশােরের পায়ে দলা মুথাঘাস কিংবা লাল বটফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতায় কবি স্পর্শ পেয়েছেন বাংলার প্রাণের। বঙ্গপ্রকৃতির নানা তুচ্ছাতিতুচ্ছ অনুষঙ্গে প্রাণময়ী বাংলাকে অনুভব করেছেন কবি।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box