আকাশে সাতটি তারা’নামক কবিতা অবলম্বনে কবি জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতিপ্রেমের পরিচয় দাও।

উঃ রবীন্দ্র-পরবর্তী কাব্যধারায় কবি জীবনানন্দ দাশের ইতিহাস-প্রেম-মৃত্যু ইত্যাদি চেতনার সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমও প্রকটরূপে উদ্ভাসিত। তাঁর প্রায় সব কবিতায় প্রকৃতি এসেছে অনিবার্যভাবেই কোথাও ইতিহাস বা কোথাও প্রেমের আবশ্যিক অঙ্গ হিসেবে। তার রূপসী বাংলা কবিতাতেও প্রকৃতিপ্রেম অসাধারণ ভাষাবিভঙ্গে বর্ণিত হয়েছে।

প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের কথা এখানে এসেছে সৌন্দর্য বর্ণনার সূত্র ধরে। যেমন—আকাশ,পুকুর, ঘাস, কামরাঙা ফল, মনিয়া পাখি, হিজল, কাঁঠাল, জাম, হাঁসের পালক, চাদা-সরপুঁটি মাছের ঘ্রাণ ইত্যাদি। দিনের শেষে সন্ধ্যা নেমেছে বাংলার বুকে। আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি সন্ধ্যাকে কেশবতী এক কন্যার প্রতীকে তুলে ধরেন। প্রকৃতি তাঁর কাছে এক জীবন্ত মানবীর রূপে প্রকাশিত হয়। এই প্রকৃতিকন্যা সন্ধ্যায় কবির চোখে-মুখে ছড়িয়ে পড়া এবং জাম-কাঁঠাল গাছে অজস্র চুল দিয়ে চুম্বন করার প্রতীকী কল্পনার মাধ্যমে কবি জীবনানন্দের প্রকৃতির প্রতি অকৃত্রিম অনুরাগের পরিচয় মেলে। প্রকৃতির অনুষঙ্গ বর্ণনা করেও কবি ক্ষান্ত হননি। তিনি জড় প্রকৃতির ওপর জীবন্ত সত্ত্বা আরােপ করে প্রকৃতিকে জীবন্ত করে তুলেছেন। কিশােরীর চালধােয়া হাত বা কিশােরের পায়ে দলা মুথাঘাসও কবির দৃষ্টি এড়ায়নি। সহজ সরল গ্রাম্য প্রকৃতির অন্যান্য আঙ্গিকও এত প্রাঞ্জলভাবে উদ্ভাসিত যে পাঠকগণ মােহিত না হয়ে পারে না।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box