‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে।
উঃ সাহিত্যে নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতার বিষয়বস্তু বা ভাব অনুযায়ী নামকরণ হয়।
জীবনানন্দ দাশের আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় গ্রামবাংলার গােধূলিলগ্নের সুন্দর হয় বর্ণনা রয়েছে। সূর্য অস্তাচলে গেলেও তার আভায় লাল হয়ে উঠেছে মেঘগুলি। একটু পরে সাগরজলে বিলীন হয়ে যাবে এরাও। এরপরই আকাশে উদিত হবে সপ্তর্ষিমণ্ডল। কবি এসময় ঘাসের উপর বসে উপলব্দি করছেন সন্ধিক্ষণটি। কবির কল্পনায় এলােকেশী কন্যা দেখা দেয় আকাশে, মাটিতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে তার চুল। কবির চোখে, মুখেও ছড়িয়ে পড়ে সেই চুল। চারিদিকে তখন ঘন অন্ধকার। সেই এলােকেশী রূপসির চুল হিজল-কাঁঠাল-জামের পাতা চুম্বন করে নামিয়ে আনছে রাত্রির অন্ধকার। এরপর কবি ঘ্রাণেন্দ্রিয় দিয়েও সন্ধ্যাকে অনুভব করেন। কলমি শাক, ধান গাছ, হাঁসের ভেজা পালক, শর ইত্যাদির গন্ধের সঙ্গে মাছের আঁশটে গন্ধ, কিশােরীর চালবােয়া হাতের গন্ধ, কিশােরের পায়ে দলা ঘাসের গন্ধ—সব মিলেমিশে তৈরি – সন্ধ্যার নিজস্ব মধুর আবেশ। এভাবে বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শে কবি বাংলার সন্ধ্যা অনুভব করেন। আসলে আকাশে সাতটি তারা ফুটলেই কবির এমন অনুভূতি জাগে। তাই কবিতার এই নামটি বিষয়বস্তুর অনুগামী, ইঙ্গিতবাহী। ফলে আকাশে সাতটি তারা নামটি নিঃসন্দেহে সার্থক।