'নােঙর’ কবিতার মর্মার্থ নিজের ভাষায় লেখাে।
উঃ রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের অন্যতম প্রতিনিধি অজিত দত্ত মূলত রােমান্টিক কবি। কিন্তু সাদা মেঘ কালাে পাহাড়’ নামক কাব্যের অন্তর্গত ‘নােঙর’ কবিতাটি একটি রূপ
উঃ রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের অন্যতম প্রতিনিধি অজিত দত্ত মূলত রােমান্টিক কবি। কিন্তু সাদা মেঘ কালাে পাহাড়’ নামক কাব্যের অন্তর্গত ‘নােঙর’ কবিতাটি একটি রূপকধর্মী গীতিকবিতা। এই কবিতায় তিনি নােঙর-নৌকা-ট-মাস্তুল ইত্যাদির রূপকে জীবনের এক পরম অতৃপ্তিকে প্রকাশ করেছেন। কবিতায় তিনি সাত সাগর পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশে নৌকা ছেড়েছেন। দাঁড় বেয়েছেন সারারাত। কিন্তু একটুও এগােতে পারেননি। কারণ তিনি জানেন না তার অজান্তেই কখন নৌকার নােঙর পড়ে গেছে তটের কিনারে। জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে উঠে তরীর গায়ে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে যায় মাঝসমুদ্রের পানে। এরপর জাগতিক নিয়মে শুরু হয় ভাটার টান। জোয়ার-ভাটা চলতেই থাকে। কবি দাঁড় টানতেই থাকেন। এমনকী মাস্তুলেও পাল বাঁধেন, তবুও নৌকা অনড়। কারণ নােঙরের কাছিতে নৌকা বাঁধা আছে। আর তার প্রতিবাদে দাঁড়ের নিক্ষেপে স্রোত বিদ্রুপ করে ওঠে নিশ্চিত ব্যর্থতা জেনে।
আমরা দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমিতে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত। বৈচিত্র্যহীন জীবনে মুক্তির স্বাদ পেতে আমরা পাড়ি জমাতে চাই দূরতর দেশে বা প্রদেশে। আর সেখানে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় কখনাে অর্থ, কখনাে-বা সুযােগসুবিধার অভাব, কখনাে-বা পারিপার্শ্বিক অন্য অসুবিধা। ভঙ্গুর অর্থনীতি আর মানুষের মধ্যেকার পারস্পরিক অবিশ্বাস এই যাত্রাপথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও আমরা আশায় বুক বাঁধি। বেয়ে চলি জীবনের পরিশ্রমের দাঁড় সারাদিন বা সারারাত, সাফল্য কবে আসবে তা না জেনেও।