মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনি সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তরঃ
■ মনসামঙ্গল কাব্য-কাহিনি: মনসামঙ্গল'-এর মূল কাহিনিটি গড়ে উঠেছে মনসাদেবীর সঙ্গে চাঁদ সদাগরের সংঘাতকে কেন্দ্র করে। চাঁদ সদাগর চম্পকনগরের বিত্তশালী এবং সর্বজনমান্য শৈব বণিক। মনসা চাদকে দিয়ে তার পূজা করাতে চান, কারণ চাঁদ সদাগরের কাছে পূজা পেলে অন্যদের মধ্যে সহজেই তাঁর পূজা প্রচারিত হবে। চাঁদ মনসার পূজা করতে রাজি না হলে মনসা চাঁদের সুন্দর বাগানবাড়ি ধ্বংস করে দেন, তাঁর বন্ধু শঙকর ওঝাকে মেরে ফেলেন, হরণ করেন চাঁদের ‘মহাজ্ঞান’; হত্যা করেন তাঁর ছয় পুত্রকে। তবু চাঁদ বণিক মনসার কাছে মাথা নােয়ান না।
শােক কাটিয়ে চাঁদ সদাগর বাণিজ্য যাত্রায় যাওয়ার আগে সন্তানসম্রা স্ত্রীকে বলে যান, পুত্র জন্মালে তার নাম যেন ‘লখিন্দর রাখা হয়।
মনসার কোপে বহু দুর্ভোগ সহ্য করে বাণিজ্যযাত্রার বারাে বছর পর ভিক্ষুকের বেশে চাঁদ সদাগর দেশে ফিরলেন এবং উজানী নগরের সায়বেনের কন্যা বেহুলার সঙ্গে পুত্র লখিন্দরের বিবাহের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু লােহার বাসরঘরে সাপের কামড়ে প্রাণ হারালেন লখিন্দর। পতিব্রতা বেহুলা বহু নিন্দা অপবাদ সহ্য করে কলার মান্দাসে স্বামীর মৃতদেহ চাপিয়ে গাঙুড়ের জলে ভেসে পড়লেন স্বর্গে যাওয়ার জন্য এবং স্বর্গে গিয়ে নৃত্য দেখিয়ে মহাদেব সহ অন্যান্য দেবতাদের সন্তুষ্ট করলেন। মহাদেবের কথায় মনসা লখিন্দরের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে রাজি হলেন, কিন্তু একটি শর্তে—চঁদ সদাগরকে দিয়ে মনসার পূজা করাতে হবে। বেহুলা এই শর্তে সম্মত হলে মনসা লখিন্দরের প্রাণ তাে ফিরিয়ে দিলেনই, সেইসঙ্গে চাঁদের অন্য ছয় পুত্রও প্রাণ ফিরে পেল ; ফিরে এল ডুবে যাওয়া চোদ্দোটি ডিঙা এবং সমস্ত হারানাে সম্পদ। এইসব নিয়ে বেহুলা ঘরে ফিরে এলে শর্ত অনুযায়ী চাঁদকে মনসাপূজা করার কথা বললেন। বেহুলার কাতর অনুনয়ে শেষ পর্যন্ত চাঁদ বণিক মুখ ফিরিয়ে বাম হাতে মনসাকে একটি ফুল ছুড়ে দিলেন। মনসা দেবী সন্তুষ্ট হলেন তাতেই। মর্তে তার পূজা প্রচারিত হল। এই-ই হল ‘মনসামঙ্গল’-এর কাহিনি।