কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের জীবন ও কাব্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তরঃ
◆ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের জীবন ও কাব্য: মনসামঙ্গল কাব্যধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হলেন কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ। কেতকা বা মনসার দাস হিসেবে কবিই নিজেকে অভিহিত করেছেন। কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ তাঁর কাব্যে যে আত্মপরিচয় দিয়েছেন তার থেকে জানা যায়, কাথড়া গ্রামে কবির জন্ম। এই কথড়ার আধুনিক নাম ‘কেতেরা'। গ্রামটি বর্তমান হুগলি জেলার অন্তর্গত। কবির পরিবার পরে নিজেদের গ্রাম ত্যাগ করে জগন্নাথপুরে বসবাস শুরু করেন। ১৫৬০ শক বা ১৬৩৮-৩৯ খ্রিস্টাব্দের পরে কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ তাঁর মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেন। দেবীর স্বপ্নাদেশে কেতকাদাস কাব্য রচনা করেন—“ওরে পুত্র ক্ষেমানন্দ, কবিতা কর প্রবন্ধ/আমার মঙ্গল গায়্যা বােল”। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর এই কাব্যটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এমনকি সুদূর চট্টগ্রাম অঞ্চলেও কাব্যটির ব্যাপক প্রচার ছিল বলে জানা গেছে। এই কাব্যে কবির পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রকাশভঙ্গি লক্ষ করা যায়। তা ছাড়া সমকালীন সামাজিক রীতিনীতি এবং ভৌগােলিক সংস্থানেরও বিশদ পরিচয় পাওয়া যায় এতে। বেহুলার যাত্রাপথের বাইশটি ঘাটের মধ্যে চোদ্দোটি ঘাট এখনও দামােদর ও বাঁকা নদীর কাছে অবস্থিত। এ ছাড়া বিবাহ ও জন্ম বিষয়ক নানা অনুষ্ঠানের ও রীতিনীতির পরিচয় কেতকাদাসের কাব্যে আছে। চাঁদের দৃঢ়তা, মনসার ঈর্ষাকুটিলতা কিংবা পুত্রহারা সনকার মর্মস্পর্শী হৃদয়বেদনা কেতকাদাসের রচনায় সুচিত্রিত। কেতকাদাসের কাব্যই প্রথম মুদ্রিত মনসামঙ্গল কাব্য।