মনসামঙ্গল কাব্যের যে-কোনাে দুজন প্রতিনিধি-স্থানীয় কবির কবি-প্রতিভার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ মনসামঙ্গল কাব্যের দুজন প্রতিনিধি-স্থানীয় কবি হলেন কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ এবং বিজয় গুপ্ত।
● কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ: মনসামঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, তাঁর কাব্যটি সমগ্র বাংলাদেশেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সংস্কৃত সাহিত্যে সুপণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও কেতকাদাস তাঁর কাব্যে সহজ-সরল জীবনের চিত্র-অঙ্কনে কোথাও পাণ্ডিত্য প্রকাশ করেননি। চাঁদ সদাগরের বাণিজ্যপথের বর্ণনায় তিনি বাস্তব ভৌগােলিক তথ্য নিপুণভাবে বর্ণনা করেছেন। এই কাব্যে সেযুগের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির বিস্তৃত পরিচয় পাওয়া যায়। চরিত্র-চিত্রণে এবং কাহিনি-গ্রন্থনে কবি ততটা নৈপুণ্যের পরিচয় দিতে না পারলেও অলংকার প্রয়ােগে, করুণরস সৃষ্টিতে এবং বর্ণনাকুশলতায় তিনি ছিলেন শিল্পসার্থক।
● বিজয় গুপ্ত: পঞ্চদশ শতকের মনসামঙ্গল কাব্যধারার বিশিষ্ট কবি ছিলেন বিজয় গুপ্ত, যাঁর কাব্যের নাম ছিল ‘পদ্মপুরাণ’। সমকালীন সামাজিক জীবনের নিখুঁত বাস্তব-চিত্র অঙ্কনে এবং কৌতুকরস সৃষ্টিতে বিজয় গুপ্ত ছিলেন দোসরহীন। অন্যদিকে, চাঁদ চরিত্রে পৌরুষ এবং সংগ্রামী চেতনা অঙ্কনে, সনকা চরিত্রে মাতৃহৃদয়ের আকুলতা এবং শােকের চিত্র অঙ্কনে, বেহুলা চরিত্রে বিষন্ন গৃহবধূর ছবি ফুটিয়ে তােলায় কবি অত্যন্ত পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তবে কবির শ্রেষ্ঠ কীর্তি মনসা—একদিকে আবাল্য স্নেহ-বঞ্চিত, অত্যাচারিত এক নারীহৃদয়ের অস্ফুট আর্তনাদ তার মধ্যে ধ্বনিত হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে প্রতিফলিত হয়েছে নিষ্ঠুরতা ও প্রতিহিংসা পরায়ণতা। দেশজ শব্দের ব্যবহারে এবং ছন্দের বৈচিত্র্যেও বিজয় গুপ্ত সার্থকতার পরিচয় দিয়েছেন ।