চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের প্রাচীনতম কাহিনিটি সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তরঃ
● চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের প্রাচীনতম কাহিনি: আখেটিক খণ্ডের কাহিনিই হল ‘ চণ্ডীমঙ্গল’-এর প্রাচীনতম কাহিনি। চণ্ডীর প্ররােচনায় শিব ইন্দ্রের পুত্র নীলাম্বরকে পুষ্পচয়নে সামান্য ত্রুটির জন্য অভিশাপ দিয়ে মর্তে পাঠান ব্যাধ ধর্মকেতুর পুত্ররূপে; তার নাম হয় কালকেতু। নীলাম্বরের পত্নী ছায়ারও জন্ম হয় আর-এক ব্যাধের ঘরে, ব্যাধকন্যা ফুল্লরারূপে।
এগারাে বছর বয়সে ফুল্লরার সঙ্গে কালকেতুর বিবাহ হয়। এদিকে কালকেতুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বনের পশুরা দেবী চণ্ডীর শরণাপন্ন হলে চণ্ডী একদিন স্বর্ণগােধিকার রূপ ধারণ করে কালকেতুর শিকার-যাত্রার পথে পড়ে থাকেন। কালকেতু ক্রুদ্ধ হয়ে অশুভ স্বর্ণগােধিকাটিকে ধনুর্গণে বাঁধে। সেদিন সারা বন ঘুরে কোনাে শিকার না পেয়ে সে স্বর্ণগােধিকাটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। তারপর সে নিজে বেরিয়ে যায় বাসি মাংসের পসরা নিয়ে ; ফুল্লরা যায় প্রতিবেশিনীর কাছে খুদ ধার করতে। এই অবসরে চণ্ডী গােধিকারূপ পরিত্যাগ করে সুন্দরী রমণীর বেশ ধারণ করেন। সতীন সম্ভাবনায় শঙ্কিতা ফুল্লরা দেবীকে অনেক মিনতি করে এবং দুঃখের বারমাস্যা শুনিয়ে দেবীকে বিদায় করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। ঘরে ফিরে কালকেতুরও বিস্ময়ের আর অবধি থাকে না। অনেক বুঝিয়েও যখন সে দেবীকে বিদায় করতে পারল না, তখন সে ধনুকে শর যােজনা করতেই দেবী নিজমূর্তি ধারণ করেন। দেবী কালকেতুকে সাতঘড়া ধন এবং একটি মহামূল্যবান আংটি দিয়ে নগর-পত্তনের পরামর্শ দেন। কালকেতু বিপুল অর্থ ব্যয় করে বন কেটে গুজরাট নগর পত্তন করে। ভাঁড়ু দত্ত নামক এক ব্যক্তির শঠতা ও অত্যাচারে বিব্রত হয়ে প্রজারা কালকেতুর কাছে নালিশ জানালে কালকেতু তাকে তাড়িয়ে দেয়। অপমানিত ভঁড় দত্ত প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য কলিঙ্গরাজকে কালকেতুর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তােলে। কলিঙ্গরাজের সঙ্গে যুদ্ধে কালকেতু পরাজিত ও বন্দি হয়। অবশেষে কলিঙ্গরাজ দেবীর স্বপ্নাদেশে কালকেতুকে মুক্তি দেন এবং ফিরিয়ে দেন তার রাজ্য। কালকেতু মহাসমারােহে দেবী চণ্ডীর পূজা প্রচলন করে। দীর্ঘকাল সুখে রাজত্ব করার পর কালকেতু ও ফুল্লরা পুত্রের হাতে রাজ্যভার দিয়ে স্বর্গে ফিরে যায়।