চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের নবীনতম কাহিনি সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তরঃ
◆ চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের নবীনতম কাহিনি: ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের নবীনতম কাহিনিটি হল বণিক খণ্ডের ধনপতি-লহনা-খুল্লনার কাহিনি। ধনপতি সদাগর ছিলেন উজানী নগরের এক নিঃসন্তান বণিক। তাই স্ত্রী লহনার সম্মতি আদায় করে ধনপতি খুল্লনাকে বিয়ে করলেন। বিয়ের পর রাজার আদেশে একটি সুবর্ণপিঞ্জর’ আনার জন্য ধনপতিকে গৌড়ে যেতে হয়। যাবার আগে তিনি খুল্লনার সমস্ত ভার দিয়ে গেলেন লহনার ওপর। লহনা ও খুল্লনার মধ্যে ঝগড়া বাধিয়ে দেওয়ার জন্য সচেষ্ট হয় দাসী দুর্বল। খুল্লনার প্রতি লহনার মনকে সে বিষিয়ে তােলে। ধনপতির নাম দিয়ে একটি জাল চিঠি খুল্লনাকে দেওয়া হয়। সেই চিঠির মর্ম অনুযায়ী খুল্লনা ছাগল চরাবে, চেঁকিশালে শয়ন করবে, এক বেলা আধপেটা খাবে এবং খুঁয়ার বস্ত্র [শণের সুতােয় তৈরি মােটা কাপড় পরবে। খুল্লনা এই চিঠিকে বিশ্বাস না করলেও চাপে পড়ে তাকে সব মেনে নিতে হয়।
একদিন বনে ছাগল চরাবার সময় অসতর্কতাবশত খুল্লনার সর্বশী’ নামে ছাগলটি হারিয়ে যায়। সেই ছাগলের খোঁজ করতে গিয়ে সে সন্ধান পায় পঞদেবকন্যার—তাঁদের কাছে খুল্লনা চণ্ডীপূজা করতে শেখে। ধনপতি বাড়ি ফিরে এসে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে লহনাকে তিরস্কার করেন। কিছুদিন পরে ধনপতি সপ্তডিঙা সাজিয়ে সিংহল যাত্রা করেন। স্বামীর মঙ্গলকামনায় খুল্লনা চণ্ডীপূজা করে। শৈবসাধক ধনপতি তা জানতে পেরে পদাঘাতে চণ্ডীর ঘট ভেঙে দেন। চণ্ডী এর প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য সমুদ্রে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি করেন। কোনােরকমে একটি ডিঙা আশ্রয় করে তিনি কালীদহে পৌঁছােলে সেখানে দেবী চণ্ডী তাঁকে ‘কমলে কামিনীমূর্তি দেখান। ধনপতি সিংহলে গিয়ে সেখানকার রাজাকে ‘কমলে-কামিনী’র কথা বললে রাজা তা বিশ্বাস করতে চান না। ধনপতি রাজাকে এই দৃশ্য দেখাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যর্থ হলে রাজা তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন।
এদিকে খুল্লনার পুত্র শ্ৰীমন্ত বড়াে হয়ে পিতার সন্ধানে সিংহল যাত্রা করেন। পিতার মতাে তিনিও পথে ‘কমলেকামিনী’ দৃশ্য দেখতে পান। সিংহলরাজকে তিনিও কমলে-কামিনী’র প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে শর্ত অনুযায়ী তার শিরচ্ছেদের জন্য তাকে বধ্যভূমিতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চণ্ডীর কৃপায় অবশেষে সিংহলরাজ ‘কমলে-কামিনী’দৃশ্য দেখতে পেলেন। রাজা শ্ৰীমন্তকে অর্ধেক রাজত্ব দিলেন এবং কন্যা সুশীলাকে তার হাতে সমর্পণ করলেন। কিছুকাল সিংহলবাসের পর পুত্র-পুত্রবধূসহ ধনপতি ফিরে এলেন দেশে। চণ্ডীর পূজাও করা হল মহাসমারােহে।