চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি কে? তাঁর আত্মকাহিনিটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ
● শ্রেষ্ঠ কবি: 'চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।
● আত্মকাহিনি: মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে একটি আত্মবিবরণী পাওয়া যায়। এই আত্মবিবরণী থেকে তার জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা গেছে।
কবি মুকুন্দরামের সাত পুরুষের বসবাস ছিল বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামে। তার পিতার নাম হৃদয় মিশ্র, মাতার নাম দৈবকী। চাষ-আবাদ করে মােটামুটি নির্বিঘ্নেই তাদের জীবন কাটত। কিন্তু দেশে চরম অরাজকতা দেখা দিলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে মুকুন্দরাম সপরিবারে দেশত্যাগ করেন। পথে দস্যু কর্তৃক তার সর্বস্ব অপহৃত হয়। যদু কুণ্ডু নামে এক সহৃদয় ব্যক্তির আশ্রয়ে তিনদিন কাটিয়ে কবি উপস্থিত হন ‘গােচড়্যা’ গ্রামে। ক্ষুধা, ভয় ও পরিশ্রমে কবি সেখানে ঘুমিয়ে পড়লে দেবী চণ্ডী তাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে সঙ্গীত' অর্থাৎ ‘চণ্ডীমঙ্গল’ রচনা করতে আদেশ দেন। দেবীর এই স্বপ্নাদেশ শিরােধার্য করে কবি শিলাই নদী পার হয়ে মেদিনীপুরের আড়রা গ্রামে উপনীত হন। সেখানকার জমিদার বাঁকুড়া রায় তাকে আশ্রয় দেন ও বালকপুত্র রঘুনাথ রায়ের গৃহশিক্ষকরূপে নিযুক্ত করেন। বাঁকুড়া রায়ের মৃত্যুর পর রঘুনাথ রায় জমিদারিতে বসলে কবিকে চণ্ডীমঙ্গল রচনার জন্য অনুরােধ করেন।
মুকুন্দরামের আবির্ভাবকাল এবং গ্রন্থরচনাকাল নিয়ে পণ্ডিতমহলে মতভেদ আছে। কবি বাংলার সুবেদার মানসিংহের উল্লেখ করেছেন। গবেষকরা বিভিন্ন তথ্য দেখে অনুমান করেছেন যে, যােড়শ শতাব্দীর শেষ এবং সপ্তদশ শতাব্দীর শুরুর মধ্যে মুকুন্দরামের কাব্য রচিত হয়েছিল। কবি তার এই কাব্যকে অভয়া-মঙ্গল’, চণ্ডিকামঙ্গল', 'অম্বিকামঙ্গল’ প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করেছেন।