মুকুন্দ চক্রবর্তী বাংলাসাহিত্যের কোন্ ধারার কবি? তাঁর লেখা কাব্যটির প্রকৃত নাম কী? মুকুন্দের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ 
● মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি। 
● তাঁর লেখা কাব্যটির প্রকৃত নাম ‘অভয়ামঙ্গল'। কবি এটিকে ‘চণ্ডিকামঙ্গল, অম্বিকামঙ্গল’ নামেও অভিহিত করেছেন।

● কবিপ্রতিভা; কেবল মঙ্গলকাব্যের ইতিহাসে নয়, সমগ্র মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বিশেষ উল্লেখযােগ্য কবি।
মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর সঞ্চয়ে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ছিল প্রচুর, তিনি নিখুঁতভাবে বাস্তবকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তা প্রকাশ করেছেন উপযুক্ত ক্ষেত্রে। মানবচরিত্র সম্পর্কে কৌতূহলি এবং সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় মুকুন্দরাম চরিত্রসৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল হয়েছেন। ফুল্লরা, মুরারি শীল, ভাঁড়ু দত্ত, দুর্বল দাসী প্রভৃতি চরিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর ভাড় দত্ত সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, কবিকঙ্কণের সমস্ত বাক্যরাশি কালে কালে অনাদৃত হতে পারে, কিন্তু রইল তার ভাঁড় দত্ত।

কৌতুকরস সৃষ্টিতে মুকুন্দরাম যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। গ্রন্থ উৎপত্তির কারণ অংশে সমকালীন বাস্তবতার যে ছবি তা ইতিহাসসম্মত। কালকেতু উপাখ্যানে নির্মম দারিদ্র্যের চিত্রণে, পশুদের কান্নায় কিংবা ধনপতি উপাখ্যানে খুল্লনার দুঃখের বর্ণনায়ও কবির দরদি মনের পরিচয় পাওয়া যায়। বাস্তবতা, ঘটনা সন্নিবেশ এবং চরিত্র সৃষ্টির দক্ষতায় মুকুন্দের মধ্যে ঔপন্যাসিকের স্বধর্ম লক্ষ করা যায়।

মুকুন্দরাম চণ্ডীর মাহাত্ম্য কীর্তন করতে গিয়ে কাব্যের ভাষা, ছন্দ ও অলংকারের প্রতি উদাসীন থাকেননি মিশ্রবৃত্ত রীতির পয়ার তাে আছেই, তা ছাড়া একপদী ও ত্রিপদী কাঠামােকেও সার্থকভাবে ব্যবহার করেছেন তিনি উপমা, রূপক, উৎপ্রেক্ষা, সমাসক্তি প্রভৃতি অলংকারের অজস্র প্রয়ােগ আছে তাঁর ‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে। প্রচলিত প্রবাদকেও সার্থকভাবে কাব্যভাষায় প্রয়ােগ করেছেন তিনি। মুকুন্দরামের প্রতিভার মূল্যায়নে রমেশচন্দ্র দত্তের মন্তব্যটিই হতে পারে আলােচনার উপসংহার—“the thoughts and feeling and saying of his men and women are perfectly natural, recorded with a fidelity which has no parallel in the whole range of Bengali Literature" ।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box