‘ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।
উত্তরঃ
◆ ধর্মমঙ্গল কাব্য-কাহিনি: ধর্মমঙ্গল কাব্যে দুটি কাহিনি আছে। একটি হরিশ্চন্দ্র-কাহিনি এবং অন্যটি লাউসেন-কাহিনি। তবে সাধারণভাবে ধর্মমঙ্গলের কাহিনি বলতে লাউসেনের উপাখ্যানটিকেই বােঝানাে হয়ে থাকে।
গৌড়েশ্বরের অধীনে এক সামন্ত রাজা ছিলেন কর্ণসেন। গৌড়েশ্বর নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে বিপত্নীক কর্ণসেনের বিবাহ দেন। গৌড়েশ্বরের মন্ত্রী এবং রঞাবতীর দাদা মহামদ এই বিবাহ মেনে নেননি। ধর্মঠাকুরের কৃপায় রঞ্জাবতী পুত্র লাভ করেন ; তাঁর নাম রাখা হয় লাউসেন। মহামদ যুবক লাউসেনের ক্ষতি করার জন্য বারবার তাকে বিভিন্ন ঝুঁকিবহুল যুদ্ধে পাঠাবার চক্রান্ত করেন। কিন্তু লাউসেন ধর্মঠাকুরের কৃপায় সর্বত্রই জয়লাভ করেন। কামরূপ অভিযানে গিয়ে তিনি যুদ্ধ জয় করে কামরূপরাজকন্যা কলিঙ্গাকে বিবাহ করেন, একইভাবে বিবাহ করেন সিমুলার রাজার কন্যা কানাড়াকে। মহামদের চক্রান্তে লাউসেনকে পাঠানাে হয় অজয় নদের তীরে ইছাই ঘােষকে দমন করার জন্য। ধর্মঠাকুরের কৃপায় যুদ্ধে নিহত হন ইছাই ঘােষ। তারপরেও মহামদ লাউসেনকে জব্দ করার চেষ্টা রতে থাকেন। তার প্ররােচনায় গৌড়েশ্বর বলেন যে, লাউসেন ভক্ত হলে তাকে পশ্চিমে সূর্যোদয় দেখাতে হবে। হাকল' নামে একটি জায়গায় লাউসেন এই অসাধ্য সাধন করলেন। লাউসেন যখন হাতে তপস্যারত, ঠিক সেই সুযােগে মহামদ ময়নাগড় আক্রমণ করেন। নিহত হন কালু ডােম এবং লাইসেনের প্রথমা স্ত্রী কলিঙ্গা। লাউসেন ময়নাগড়ে ফিরে ধর্মঠাকুরের স্তব শুরু করলে সকলেই বেঁচে ওঠে। মহাপাপের জন্য মহামদ কুষ্ঠব্যাধিতে আক্রান্ত হলে লাউসেন ধর্মঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করায় ব্যাধিমুক্ত হন। এভাবে ধর্মঠাকুরের পূজা প্রচার করে লাউসেন তাঁর পুত্র চিত্রসেনের হাতে রাজ্যভার দিয়ে যথাসময়ে স্বর্গারােহণ করেন।