কবি ঘনরাম চক্রবর্তীর জীবন ও কবি-প্রতিভা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

উত্তরঃ 
ঘনরাম চক্রবর্তীর জীবন: ‘ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বাধিক প্রচারিত ও শ্রেষ্ঠ কবির নাম ঘনরাম চক্রবর্তী। বর্ধমান জেলার দামােদর নদের তীরে কৃয়পুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গৌরীকান্ত, মাতার নাম সীতাদেবী। গুরু শ্রীরামদাসের আদেশ অনুসারে তিনি ধর্মমঙ্গল রচনায় ব্রতী হন। তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে গুরু তাকে কবিরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কাব্যের মধ্যে প্রাপ্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় যে, অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে তিনি এই কাব্যটি রচনা করেন। তিনি ভণিতায় তার কাব্যকে ‘শ্রীধর্মসঙ্গীত’, ‘অনাদিমঙ্গল’, ‘মধুর ভারতী' প্রভৃতি নামে অভিহিত করেন। সাধারণভাবে মঙ্গলকাব্যের কবিগণ গ্রন্থরচনার কারণ হিসেবে নির্দিষ্ট দেবদেবীর স্বপ্নাদেশের কথা বলে থাকেন। কিন্তু ঘনরাম তাঁর কাব্যে কোনাে স্বপ্নাদেশের উল্লেখ করেননি।
কবি-প্রতিভা : ঘনরাম তার কাব্যে ধর্মমঙ্গলের দুটি কাহিনিকে গ্রথিত করেছেন। প্রচলিত আখ্যানকে তিনি এমনভাবে পরিবেশন করেছেন, যাতে মহাকাব্যোচিত আভিজাত্যের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। তার কাব্যে রামায়ণ, ‘ভাগবত’, মহাভারত’ প্রভৃতির ছায়াপাত ঘটেছে। এ ছাড়া পাণ্ডিত্য ও কবিত্বেরও অদ্ভুত সমন্বয় সাধিত হয়েছে তাঁর কাব্যে। বিভিন্ন চরিত্রচিত্রণের ক্ষেত্রে তার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণশক্তি এবং বাস্তববােধের পরিচয় পাওয়া যায়। লাউসেন চরিত্রটিকে তিনি গড়ে তুলেছেন বলিষ্ঠ পৌরুষ ও বীরত্বের প্রতিমূর্তিরূপে। নারী-চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রেই ঘনরামের কৃতিত্ব সর্বাধিক। রঞ্জাবতী, কলিঙ্গা, কানাডা, লখ্যা—এঁদের কেউ স্নেহময়ী জননী, কেউ বীরাঙ্গনা, কেউ বা আবার লাবণ্যময়ী প্রেমানুরাগিণী। ঘনরামের কাব্যে হাস্যরস পরিবেশনেও বিশেষত্ব আছে—মধ্যযুগীয় ভাড়ামি ও স্থূলতাকে তিনি যথাসম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করেছেন। শব্দ-নির্বাচন এবং ছন্দ-অলংকার প্রয়ােগেও কবি সার্থকতার পরিচয় দিয়েছেন।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box