মঙ্গলকাব্য কাকে বলে? এর এরূপ নামকরণের কারণ কী? মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক কারণ বর্ণনা করাে।

উত্তরঃ
সংজ্ঞা : মধ্যযুগে রচিত যেসব আখ্যানকাব্যে হিন্দু দেবদেবীর মাহাত্ম্য কীর্তিত হয়েছে এবং যেসব কাব্য পাঠে বা শ্রবণে মানুষের মঙ্গল হয় বলে মনে করা হয়, সেসব কাব্যকে বলা হয় মঙ্গলকাব্য। 
নামকরণ: মঙ্গলকাব্যের নামকরণের কারণ সম্বন্ধে অন্যতম প্রধান মত হল এই যে, এই ধরনের কাব্যগুলি এক মঙ্গলবারে পাঠ করা শুরু হত এবং পরবর্তী মঙ্গলবারে সে পাঠ সমাপ্ত হত। অপর মত অনুযায়ী, দেবদেবীর মাহাত্ম-প্রচারক এই আখ্যান-কাব্যগুলি ‘মঙ্গল’ উপরাগে গাওয়া হত বলেই সেগুলি মঙ্গলকাব্য বলে আখ্যাত হয়। কারও কারও মতে, মঙ্গল’ নামক অসুর নিধনের উৎসব উপলক্ষ্যে গাওয়া হত বলে মঙ্গলকাব্য নামটি এসেছে।

সামাজিক কারণ : ত্রয়ােদশ শতকের তুর্কি আক্রমণ বাংলা দেশ ও বাঙালির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে এক দ্বিশতকব্যাপী অন্ধকারময় যুগের সূচনা করেছিল। মুসলমান শাসকদের অত্যাচার, অবিচার এবং বলপূর্বক ধর্মান্তরীকরণের প্রবণতা ব্রাত্মণ্যধর্ম ও আর্য-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপােষক উচ্চবর্ণের হিন্দুদের নিম্নবণীয় মানুষের অনেক কাছে এনে দেয়। এভাবেই বাংলা দেশে পৌরাণিক ও লৌকিক ধারার সমন্বয়ে চণ্ডী, মনসা, বাসুলী, দক্ষিণরায় প্রভৃতি লৌকিক দেবদেবী আপামর বাঙালির প্রিয়জনে পরিণত হন। তাঁদের নিয়েই দেববন্দনার এক নতুন ধরনের কাহিনি-কাব্য রচনায় ব্রতী হন বাঙালি কবিরা। তবে, মঙ্গলকাব্য মধ্যযুগের আকস্মিক সাহিত্যসৃষ্টি নয়। বাংলা দেশের সমাজজীবনে প্রচলিত ছড়া, ব্রতগান ও পাঁচালি-গানের সমৃদ্ধ উত্তরাধিকারই হল মঙ্গলকাব্য।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box