“ এই মৃত্যহীন জীবন , এই অন্তহীন আয়ু কি এভাবেই যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতে হবে ? ” — গণেশ ‘ যন্ত্রণা ’ বলেছেন কাকে ? তাঁর এমন মনে হওয়ার কারণ কী ? ( ২+৩ )

উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় টনিক গণেশকে অস্বাভাবিক দীর্ঘজীবন দান করেছিল , তিনি অমরতা লাভ করেছিলেন । পাশাপাশি দীর্ঘজীবনে বিজ্ঞানের অস্বাভাবিক বাড়াবাড়িও তার মন

উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় টনিক গণেশকে অস্বাভাবিক দীর্ঘজীবন দান করেছিল , তিনি অমরতা লাভ করেছিলেন । পাশাপাশি দীর্ঘজীবনে বিজ্ঞানের অস্বাভাবিক বাড়াবাড়িও তার মনকে পীড়া দিতে শুরু করে । বিশেষত , তিনি যখন লক্ষ করেন , বিজ্ঞানের বেগধর্মী যোজনায় মানুষের জীবন থেকে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে দয়া - মায়া - করুণা - ভালোবাসার মতো আবেগ - অনুভূতি এবং সাহিত্য - শিল্প - সংস্কৃতির পাটও চুকে যাচ্ছে , তখন তার মন অস্থির হয়ে ওঠে । তা ছাড়া হিমালয়ের নির্জন - পরিসরে , একান্তে , এককভাবে যে একটু চারুকলা অর্থাৎ সৃষ্টির চর্চায় তিনি ডুবে থাকবেন — তাও তিনি পারছিলেন না , সেখানেও তাকে মাঝেমধ্যে মানুষের ব্যঙ্গাত্মক উক্তি শুনতে হচ্ছিল । জীবনের এই পরিস্থিতিকে তাই গণেশ যন্ত্রণা বলে মনে করেছেন ।

বিজ্ঞান যখন সর্বগ্রাসী হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে , তখন সে বিষয়ে নিতান্ত বিব্রত হয়েই যোদ্ধার মতো গণেশ সভ্যসমাজ থেকে দূরে হিমালয়ের গিরিগুহায় আশ্রয় নেন । সেই নির্জনতার অবকাশে চলতে থাকে তার একক শিল্পচর্চা । তিনি গান গেয়ে তৃপ্তি পান , পাথর কেটে বানান ছবি , কবিতা লিখে ছড়িয়ে দেন বাতাসে — যদি কেউ পড়ে এই ভেবে । কিন্তু গণেশের ওই নিভৃত শিল্পসংগ্রাম অন্য অনেকের ভালো লাগে না । একদিন ঢেঁকি ও ভেলা - যাত্রী দুই ব্যক্তি গণেশের কবিতাচর্চাকে তীব্র ব্যঙ্গ করে । অন্য একদিন দুটো পাখাওয়ালা লোক তাকে এসে রীতিমতো ধমক লাগিয়ে জিজ্ঞাসা করে– “ ও মশাই , এমন বিকট শব্দ করছেন কেন ? ” গণেশ তার গানচর্চার ব্যাখ্যা দিলে , তারা তার গানকে ‘ বিটকেল শব্দ ’ আখ্যা দেয় । অন্য একদিন গণেশ যখন যান্ত্রিক বাটালি দিয়ে পাথর কেটে ছবি আঁকছিল , ধামায় আরোহিণী এক মহিলা তার সেই চর্চা দেখে ব্যঙ্গোক্তি করে— “ খেয়েদেয়ে কাজ নেই ! ছবি হচ্ছে ! হুঁঃ ! ” এসব ঘটনা গণেশের মনে তীব্র হতাশার জন্ম দেয় । তাই গণেশ এমন মনে করতে বাধ্য হন ।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box