‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পের মুখ্য চরিত্র গণেশকে তোমার কেমন লাগল ?
উত্তরঃ প্রখ্যাত কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পে গণেশ মুখ্য তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র । তিনি একাধারে অসাধারণ এবং ব্যতিক্রমী একটি চরিত্র । মৃত্যুঞ্জয় টনিক গণেশকে অমরতা দান করেছে । তিনি নিজে বিজ্ঞানের অধ্যাপক , অথচ কেবল যুগের হুজুগে না চলে , নিছক বিজ্ঞানকর্মে নিজেকে ব্যাপৃত না রেখে , মানুষের মধ্যে উপ্ত মানসবৃত্তিগুলির বিকাশে তিনি আন্তরিক সচেষ্ট হয়েছেন । যুগধর্ম অনুযায়ী তখন পৃথিবীর সর্বত্র বিজ্ঞান ছাড়া আর যেন ভাবনার কোনো বিষয়ই নেই । গত ১৫০ বছরে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে । আবার পাশাপাশি ‘ সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন ’ - ও চলছে । তাই মানবমন থেকে আবেগ , স্নেহ - মায়া - মমতার মতো অনুভূতিগুলি যেমন হারিয়ে যাচ্ছে , তেমনই শিল্প - সাহিত্যসংস্কৃতির পাঠও চুকে যাচ্ছে । তার তখন মনে হয়েছিল — ‘ বিজ্ঞানের বাড়াবাড়িরও একটা সীমা থাকা দরকার । ' এমতাবস্থায় প্রায় একক প্রচেষ্টায় কবিতা - গান - আঁকা ইত্যাদির চর্চার জন্য গণেশ হিমালয়ের গিরিগুহায ডেরা বাঁধেন । সেখানে কবিতা লিখে তিনি ভাসিয়ে দেন বাতাসে , ভাবেন যদি কারও কাছে পৌছোয় , যদি কেউ পড়ে । কখনও তিনি গান করেন , ছবি আঁকেন । এমন সৃষ্টিছাড়া কীর্তিকলাপ যার , তাকে তো ‘ পাগলা ’ বলে মনে হতেই পারে । কিন্তু গণেশ ‘ পাগলা ’ নন , তিনি আন্তরিক । যান্ত্রিক পৃথিবীর হৈ - হল্লার মাঝে নিঃসঙ্গ হলেও তিনি মানবতার পূজারি । বিজ্ঞাননির্ভর মানুষ একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন । তাই পারস্পরিক আবেগের সূত্রে মানুষকে বাঁধতে তিনি বিজ্ঞানের পাশে মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও মানসবৃত্তিকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছেন । একক যুদ্ধের সার্থক সৈনিক গণেশ তাই এক সার্থক মানবচরিত্র হিসেবে এ গল্পে আত্মপ্রকাশ করেছেন । গল্পশেষে তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব যখন জানান লোকে গান গাইতে লেগেছে , কবিতা মকসো করছে , হিজিবিজি ছবি আঁকছে । ' তখন গণেশের প্রাণময় উক্তি— “ যাঃ তাহলে আর ভয় নেই । দুনিয়াটা বেঁচে যাবে ... ”।