আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ধারার অবদান সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর:- আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশে বিভিন্ন তাত্ত্বিক ধারার অবদান : কোনো বিষয়ের সুনির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামো বিন্যাস ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সুসংবদ্ধ আলোচনা সম্ভব নয়, তাই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিকাশের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক ধারার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এর মধ্য থেকে কিছু তাত্ত্বিক ধারা নিম্নে আলোচনা করা হল-

1) আদর্শবাদ : উড্রো উইলসনের চিন্তাভাবনাকে কেন্দ্র করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আদর্শবাদের উদ্ভব ঘটে। আদর্শবাদী তাত্ত্বিকরা (নমার্ন অ্যাঙ্কেল, আলফ্রেড জিমার্ন) আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনায় কতগুলি আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব প্রদান করে এবং একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।

2) বাস্তববাদ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষণমূলক বাস্তববাদী তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে। বাস্তববাদী তাত্ত্বিকরা (মরগেনথাউ, কেনেথ টমসন) মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল কথা হল ক্ষমতা। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কুশীলবরা অর্থনৈতিক স্বার্থপূরণের জন্য কাজ করতে পারে কিন্তু ক্ষমতা ছাড়া এই উদ্দেশ্যপূরণ সম্ভব নয়।

3) বহুত্ববাদ, বহুত্ববাদী গোষ্ঠীর সমর্থকদের বহুত্ববাদী বলা হয়। বহুত্ববাদীদের (ডেভিড মিত্রানি, জোসেফ নাই) মতে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির একমাত্র কারক রাষ্ট্র নয়। আন্তজাতিক সমাজে বহু অরাষ্ট্রীয় কারক আছে যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলির কার্যকলাপ, সম্পর্ক প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে।

4) আচরণবাদ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ডেভিড ইস্টনের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে মানুষের রাজনৈতিক আচার-আচরণ আলোচনার সাহায্যে নতুন ভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পর্যালোচনার দাবি জানানো হয়। এই মতবাদই আচরণবাদ নামে পরিচিত। আচরণবাদীরা (ডেভিড ইস্টন, আর্থার বেন্টলে) মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতি-রাষ্ট্রের আচরণ বিশ্লেষণই হল আচরণবাদী আলোচনার মূল একক। আচরণবাদীরা অর্থনীতি, মনস্তত্ত্ব, সমাজবিদ্যা, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি শাস্ত্রে অনুসৃত পদ্ধতি ও গবেষণার ফলাফলের নিরিখে মূল্যবোধবর্জিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করার পক্ষপাতী।

5) লয়া উদারনীতিবাদ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে একদল সংস্কারপন্থী উদারনীতিবাদ আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করতে এগিয়ে আসেন, তাদের এই চিন্তাভাবনার ফলকে নয়া উদারনীতিবাদ বলে। নয়া উদারনীতিবাদের প্রবক্তারা (এফ এ হায়েক, জেমস রোজেনাউ, জোসেফ নাই) সাবেকি উদারনীতিবাদী চিন্তাদর্শনকে অনুসরণ করেই পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করে এবং ন্যায়বিচার ও মানবকল্যাণের পথকে প্রশস্ত করে।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box