জাতীয় স্বার্থের সংজ্ঞা দাও ।

উত্তর:

■ জাতীয় স্বার্থের প্রকৃতি : কোনো রাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কখনো বা শাসকগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জাতীয় স্বার্থের প্রকৃতিকে বিশ্লেষণ করেছেন, যথা-

1) জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে বাস্তববাদী তত্ত্ব বাস্তববাদী তত্ত্বের প্রবক্তা হ্যান্স জে মরগেনথাউ-এর মতে, ক্ষমতালাভ ও জাতীয় স্বার্থ অভিন্ন। মূলত, ক্ষমতাকেন্দ্রিক স্বার্থের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রনেতারা তাদের কাজকর্ম পরিচালনা করে থাকেন। তাঁর মতে, কোনো দেশের বিদেশনীতি তত্ত্বগতভাবে জাতীয় স্বার্থ ও মতাদর্শের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় ।

2) জাতীয় স্বার্থ ও ক্ষমতা : আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের নেতৃবৃন্দ ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রতিটি রাষ্ট্র তার বিদেশনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় ক্ষমতাকে গুরুত্ব দেয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় ক্ষমতার নির্ধারক দ্বারাই জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। প্রতিটি রাষ্ট্র তার জাতীয় স্বার্থ নির্ধারণে ভৌগোলিক সংহতি সর্বদা রক্ষা করতে চায়। কারণ, প্রতিটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সংহতি নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কাঠামো, দেশের জনগণের গ্রহণ ও স্বীকৃতি প্রদানের উপর।

3) জাতীয় স্বার্থের সাঙ্গ সম্পর্কিত বিষয় : জাতীয় স্বার্থকে অবহেলা করা কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়। জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতেই একটি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দরকষাকষির রাজনীতিতে কতটুকু লোকসান করল তার হিসাব সহজেই করা যায়। তা ছাড়া একটি দেশের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্বকে সুনিশ্চিত করা, জাতীয় উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ক্ষমতা, জাতীয় মূল্যবোধ প্রভৃতি বিষয়গুলি জড়িত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, বিদেশনীতি নির্ধারণে যত মহৎ উদ্দেশ্য পালনের কথা বলা হোক-না কেন শেষপর্যন্ত জাতীয় স্বার্থ সকল উদ্দেশ্যকে ছাপিয়ে যায়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, বর্তমান সময়ে জাতীয় স্বার্থের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। তাই কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে জাতীয় স্বার্থকে অবহেলা করে বিদেশনীতি রচনা করা সম্ভব নয়।
Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box