ভাষা ও উপভাষার সংজ্ঞা দাও। ভাষা ও উপভাষার সম্পর্ক লেখাে।
উত্তর : ভাষা (Language) হল কোনাে ভাষাগােষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে বাহ্য রূপহীন ভাব বিনিময়ের একটি নিরাকার ব্যবস্থা (System) বা সামর্থ্য।
● ভাষার নিরাকার সামর্থ্য কথা বলা ও লেখার মাধ্যমে যখন ব্যবহারিক রূপলাভ করে তখন তাকে বলে উপভাষা।
● প্রতিটি মানুষ নিজের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করে, আবার অন্যের ভাব নিজে বােঝার সামর্থ্য অর্জন করে। পরস্পর ভাব বিনিময়ের এই নিরাকার ব্যবস্থা বা সামর্থ্যকে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে ভাষা বলা হয়।
◆ আর উপভাষা হল সেই ব্যবস্থা বা System এরই প্রত্যক্ষ ব্যবহারিক রূপ। সুতরাং ভাষা ও উপভাষার মধ্যে একটি ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
● বৃহত্তর এলাকার মানুষের কণ্ঠোচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবােধ্য ধ্বনিসমষ্টিই হল ভাষা। আর উপভাষা হল। এই বৃহত্তর এলাকার ছােটো ছােটো অঞ্চলের মানুষের দ্বারা উচ্চারিত, অর্থবহ, ওই অঞ্চলের মানুষের বােধগম্য ধ্বনিসমষ্টি।
● ভাষার আদর্শ হল, ওই ভাষা-সম্প্রদায়ের সব মানুষ ওই ভাষা ব্যবহার করেন। অর্থাৎ এটি মান্য ভাষা (Standard Language) আর উপভাষা হল একটি আদর্শ ভাষার অনুসারী আঞ্চলিক রূপ (Colloquial Language)। উপভাষা তাই দৈনন্দিন জীবনযাপনের ভাষা।
আদর্শ ভাষা বাংলার উপভাষার সংখ্যা ও শ্রেণিবিভাগ নিয়ে এখনও পর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত কোনাে সিদ্ধান্ত হয়নি। সুকুমার সেনের গ্রহণযােগ্য অভিমত অনুসরণে বলা যায়—শূল বিবেচনায় বাংলা ভাষার মৌখিক উপভাষা পাঁচটি রাঢ়ি, ঝাড়খণ্ডি, বঙ্গালি, বরেন্দ্রী ও কামরূপী বা রাজবংশী; এদের মধ্যে মান্য উপভাষা হল রাঢ়ি।
ভাষার সঙ্গে উপভাষার সম্পর্ক (সংক্ষেপে এভাবে লেখা যেতে পারে) :
(ক) উপভাষা হল আদর্শ একটি ভাষার আঞ্চলিক রূপ।
(খ) আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য এবং উচ্চারণরীতি উপভাষাকে ভাষা থেকে পৃথক করেছে।
(গ) উপভাষা হল আঞ্চলিক জনসাধারণের মুখের ভাষা।
(ঘ) উপভাষা ব্যবহারকারী লােকেরা লেখালেখির সময় নিজেদের উপভাষা ব্যবহার না করে আদর্শ ভাষা ব্যবহার করে থাকেন।
(ঙ) উপভাষাগুলিতে তেমনভাবে সাহিত্য লেখার চল নেই, তবে আদর্শ ভাষার লেখাতে আঞ্চলিক চরিত্রচিত্রণে এ ভাষার ব্যবহার দীর্ঘদিনের।
(চ) উপভাষাতে লেখা গানগুলিকে ‘লােকগীতি’ বা ‘লােকসাহিত্য বলা হয়ে থাকে।
(ছ) উপভাষার শব্দাবলিতে এমন শতশত শব্দ পাওয়া যায়, যা নৃতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক এবং সামাজিক দিক থেকে গবেষণার অপেক্ষা রাখে।