দশম শ্রেণীর বাংলা আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্নোত্তর পর্ব



● অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর 
(প্রশ্নমান - ১)
১) আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় বেঁধে বেঁধে থাকি’ কথাটির অর্থ কী?
উঃ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় বেঁধে বেঁধে থাকি’ কথাটির অর্থ ‘হাতে হাত রেখে সংঘবদ্ধ হয়ে একে অপরের সুখ-দুঃখে শামিল হওয়া। 
২) ‘আমাদের’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন?
উঃ কবিতায় ‘আমাদের’ বলতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অত্যাচারে অত্যাচারিত, যুদ্ধবিধ্বস্ত, সর্বহারা সাধারণ মানুষের কথা বলা হয়েছে। 
৩) ‘এ-মুহূর্তে আমাদের অনুভূতি কীরূপ?
উঃ চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে শিশুদের মৃতদেহ। পড়ে রয়েছে শুধুই হতাশা আর অন্ধকার তাই কবির মনে হয়েছে আমাদের বাঁচার আর কোনাে পথ নেই, আমরা হয়তাে এখনই মরে যাব।
৪) ‘আমাদের পথ নেই আর’-কবি এই সময় কেমন ভাবে থাকার কথা বলেছেন? 
উঃ কবি সাধারণ মানুষকে হাতে হাত রেখে আরাে বেঁধে বেঁধে অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার নির্দেশ দেয়েছেন।
৫) আমাদের বারােমাস কীভাবে চলে ? 
উঃ ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গরিব, নিপীড়িত সাধারণ মানুষেরা বারােমাস ভিখারি তারা শুধু মানুষের দোরে দোরে ভিক্ষার ডালি নিয়ে ঘােরে।
৬) তবু তাে ক-জন আছি বাকি’—সেক্ষেত্রে তাদের কী করা দরকার ? 
উঃ মানুষের ইতিহাস সহজে শেষ হবার নয়। তাই মরার পরেও যে ক-জন বেঁচে আছে তাদের জোট বাঁধতে হবে—সংঘবদ্ধ হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
৭) ‘তবু তাে ক'জন আছি বাকি’-‘তবু তাে’ বলার কারণ কী?
উঃ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্মম অত্যাচারের পর কারােরই বেঁচে থাকার কথা নয়, তবু কিছু সর্বহারা সাধারণ মানুষ বেঁচে রয়েছে। এই প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেও এরা বেঁচে আছে। বলেই ‘তবু তাে’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে।

● সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর 
(প্রশ্নমান - ৩)
১) আমাদের চারপাশে কী আছে? চারপাশের বর্ণনার তাৎপর্য কী?
উঃ ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় শঙ্খ ঘােষ সমকালীন সমাজের মানুষের নিরাপত্তাহীনতার কথা বােঝাতেই এই দুর্গমের ছবিকে সামনে এনেছেন। সাধারণ মানুষের ডানদিকে রয়েছে ধ্বস, বামে বিশাল গিরিখাদ, মাথার উপরে রয়েছে বােমারু বিমান আর নীচে অর্থাৎ পায়ের তলায় রয়েছে হিমানীর বাঁধ।
এই বর্ণনার মধ্যে দিয়ে কবি বােঝাতে চেয়েছেন মৃত্যুর মাঝেও যারা রয়ে গিয়েছে সেই নিরুপায়, অসহায় মানুষদের পালাবার আত্মরক্ষার কোনাে পথ নেই। তাদের চারিদিকে শুধুই বিপদের হাতছানি। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে, যুদ্ধবাজদের হামলা ও আস্ফালনে মানুষ পৌঁছে গেছে মৃত্যুর কিনারায়। তারা আর বাঁচার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। 
২) ‘আমাদের ডানপাশে ধ্বস’—আমাদের বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন? উক্তিটির মাধ্যমে বা কীসের ইঙ্গিত দিয়েছেন? 
উঃ ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় শঙ্খ ঘােষ আমাদের বলতে অসহায়, নিরাশ্রয়, নিরুপায়, সর্বহারা মানুষদের বুঝিয়েছেন।
যুদ্ধ, হামলা, নির্বিচার অত্যাচারের মাঝে সাধারণ সর্বহারা শান্তিপ্রিয় মানুষদের জীবন যে কতখানি বিপন্ন তা ‘ধ্বস’ শব্দের মধ্যে দিয়ে পরিস্ফুট করতে চেয়েছেন। একদিকে সাধারণ নিরাপত্তায় ধ্বস নেমেছে, অপরদিকে ক্ষমতার গর্বে গর্বিত যুদ্ধবাজদের বিবেকের যে কতটা ধ্বস নেমেছে সেটির আভাসও এই শব্দটিতে রয়েছে। 
৩) আমাদের পথ আর ঘরের হাল কীরূপ?
উঃ ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় শঙ্খ ঘােষ আমাদের বলতে অসহায়, নিরুপায়, সর্বহারা মানুষদের বুঝিয়েছেন। তাদের চলার কোনাে পথ নেই এমনকি জীবনধারণের কোনাে পথ তাদের সামনে খােলা নেই। চারিদিকে বিপদের কালাে ছায়া মূর্তিমান মৃত্যুর হাতছানি দিচ্ছে। মাথা গোঁজার জন্য যে সামান্য ঘরটি ছিল তাও যুদ্ধের দাপটে উড়ে গিয়েছে। এখন তারা যেন ভাগ্যাকাশে ভাসমান কয়েকটি জীব।
৪) “আমাদের শিশুদের শব ছড়ানাে রয়েছে কাছে দূরে।'—কথাটির প্রতীকী রূপটি কী ? 
উঃ ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় শঙ্খ ঘােষ সমাজের মানুষকে সচেতন করতেই রূপ দেখাতে চেয়েছেন। যুদ্ধবাজরা নিরুপায়, অসহায় মানুষদের জীবনের সব ছন্দ, সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা শিশুর শবই বলে দিচ্ছে ইহকাল এবং পরকাল দুইই তাদের অন্ধকার। অবলা শিশুদের নিহত হওয়ার নিহিত অর্থ মর্মান্তিক নৃশংস হত্যালীলা, কোনাে কিছুকেই বাদ দেবে না। শিশুদের মৃত্যু মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেষ করে দেওয়া। সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন করতেই এই নৃশংস দৃশ্যের অবতারণা।
৫) ‘আমাদের ইতিহাস নেই’—কবির এই ভাবনার কারণ কী? 
উঃ শঙ্খ ঘােষের ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘আমাদের’ বলতে যুদ্ধবিধ্বস্ত, শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত, আশ্রয়হীন, সর্বহারা সাধারণ মানুষদের বােঝানাে হয়েছে। তাদের কোনাে নিরাপত্তা নেই, অন্নসংস্থানের কোনাে দিশা নেই। আর তাদের এই দশা যে শুধু আজকের তা নয়, এ আবহমান কালের সমস্যা। আমাদের চোখমুখ ঢাকা’ তাই এই ইতিহাসটাকে দেখা যায় না, বা এই ইতিহাস কখনও রচিত হয় না। বছর যায়, নতুন বছর আসে, সরকার বদলায়, প্রতিশ্রুতি বাড়ে, কিন্তু তাদের সমস্যার কোনাে সমাধান হয় না, তাই কবির এই ভাবনা। 
৬) ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি।'—কবির এই আকুল আহ্বানের কারণ কী? 
উঃ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি শঙ্খ ঘােষ দেখেছেন চারিদিকে চলছে সাম্রাজ্যবাদীদের হানা আর মারণ যজ্ঞ। পালানাের কোনাে পথ নেই, নেই কোনাে নিরাপদ আশ্রয়। চারিদিকে ছড়ানাে রয়েছে শিশুদের শব। মানুষ দিশেহারা। কেউ কারাে খোঁজ রাখে। মানুষ ভিক্ষার ডালি নিয়ে দোরে দোরে শুধু জীবনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এরই মাঝে যে কজন টিকে আছে, তাদের বাকি জীবনটাকে ধরে রাখার জন্য কবির আকুল আহ্বান—তারা যেন হাতে হাত রেখে অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধবাজদের আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

● রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর 
(প্রশ্নমান - ৫)
১) ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি নিরাশার মাঝেও আলাের দিশা দিয়েছেন—আলােচনা করাে।
উঃ শঙ্খ ঘােষের ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি দেখেছেন চারিদিকে চলছে মারণ যজ্ঞ। পালানাের কোনাে পথ নেই, নেই কোনাে আশ্রয়। অসহায় দেশবাসীর ডানপাশে ধ্বস, বাঁয়ে গিরিখাদ, মাথায় বােমারু বিমান, পায়ে হিমানীর বাঁধ। তারা পথ এবং আশ্রয়হারা। কাছাকাছি কিংবা সর্বত্র শিশুর শব ছড়িয়ে রয়েছে—তাদের মনেও সংশয় তারা কি এই দুঃসময়ে বেঁচে থাকবে? তারা ইতিহাসের দিকে তাকিয়েছে আশার দিশা দেখার আশায়। নিরাশ হয়েছে, দেখেছে তাদের জন্য কোনাে ইতিহাস রচিত হয়নি। মৃত্যুর করাল ছায়া এসে লেগেছে তাদের গায়ে। নিরুপায় মানুষ বাঁচার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে। কোথাও বাঁচার রসদ পায়নি। তবুও অলৌকিকভাবে তারা কয়েকজন টিকে আছে। পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কহীন
এই মানুষগুলাের বারােমাসই থাকে ভিখারির দশা। তাদের খোঁজ কেউ রাখে না, তারাও কারাে খোঁজ জানে না। দিশাহীন এই মানুষগুলােকে কবি বাঁচার মন্ত্র দিয়েছেন। তারা যদি সংঘবদ্ধ হয়, হাতে হাত রেখে প্রতিদ করতে শেখে তবেই তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। 
২) ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখাে।
উঃ শঙ্খ ঘােষের ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি দেখেছেন চারিদিকে চলছে সাম্রাজ্যবাদীদের হানা আর মারণ যজ্ঞ। অসহায়, নিরুপায়, সর্বহারা মানুষগুলাের পালানাের কোনাে পথ নেই, নেই কোনাে নিরাপদ আশ্রয়। এই মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করা কবি ও তাঁর কবিতার মূল উদ্দেশ্য।
অসহায়, নিরুপায় দিশেহারা দেশবাসীর ডানপাশে ধ্বস, বাঁয়ে গিরিখাদ, মাথায় বােমারু বিমান, পায়ে হিমানীর বাঁধ। অর্থাৎ চতুর্দিকে তাদের বিপদ-বাধা। তারা পথ এবং আশ্রয় হারা। কাছে-দূরে অর্থাৎ সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে শিশুর শব—তাদের শঙ্কা তবে তারাও কি এখনই মরে যাবে? কবি তাদের টিকে থাকার জন্য একমাত্র উপায় হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু মানুষ, যাদের বারােমাসই থাকে ভিখারির দশা। তাদের খোঁজ কেউ রাখে না, তারাও কারাে খোঁজ জানে না। যুদ্ধবাজদের হাত এড়িয়ে অসহায়, নিরুপায়, সর্বহারা, দিশাহীন মানুষের মধ্যে কয়েকজন টিকে আছে—যারা দোরে দোরে ঘুরছে জীবনের আশায়। এইসব মানুষকে বাঁচার মন্ত্র দিতে কবি তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।


Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box