দশম শ্রেণীর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম বাংলা প্রবন্ধের প্রশ্নোত্তর পর্ব

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (প্রশ্নমান-১) ১)‘লেখালেখির আপিস-অফিসে লেখক কীসের অসুবিধে বােধ করেন? উঃ লেখক অফিসে যদি কোনােদিন পেন না নিয়ে যান
দশম শ্রেণীর হারিয়ে যাওয়া কালি কলম বাংলা  প্রবন্ধের প্রশ্নোত্তর পর্ব


অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (প্রশ্নমান-১)
১)‘লেখালেখির আপিস-অফিসে লেখক কীসের অসুবিধে বােধ করেন? 
উঃ লেখক অফিসে যদি কোনােদিন পেন না নিয়ে যান বা নিয়ে যেতে ভুলে যান, তাহলে সেখানে আর কারাে কাছে পেন পাওয়া যাবে না। যদি বা একটা ভোতা কলম জোটে তাহলে লেখক তাতে লিখে সুখ পান না, ফলে কাজও হয় দায়সারা। 
২) ‘কারাে হাতে কলম নেই’ কেন ?
উঃ কম্পিউটার এসে কলমের জায়গা দখল করেছে অর্থাৎ কলমের প্রয়ােজন ফুরিয়েছে, তাই কারাে হাতে কলম নেই।
৩) লেখকের কারখানায় কীভাবে লেখালেখির কাজ চলছে ? 
উঃ লেখকের কারখানায় চৌকো কাচের স্ক্রিনে লেখা ফুটে ওঠে, তার নীচেই থাকে টাইপরাইটারের মতাে একটা কি-বাের্ড। তাতে সবকিছু লেখা যায় ভুল হলে কাটাকাটিও হয় না, সেখানেই কারেকশান করে নেওয়া যায়। এভাবেই কম্পিউটারের মাধ্যমে লেখা হয়।
৪) কলম তাদের কাছে অস্পৃশ্য’-কেন অস্পৃশ্য ?
উঃ ডটপেন ও বলপেনের যুগে কলম অত্যন্ত সস্তা ও সর্বভােগ্য হয়ে পড়ায় তা পকেটমারদের কাছে অস্পৃশ্য হয়ে ওঠে।
৫) মা-পিসি-দিদিদের কালি তৈরির ব্যবস্থাপত্রটি কী ? 
উঃ‘তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ছাগদুগ্ধে করি মেলা/ লৌহপাত্রে লােহায় ঘসি/ছিড়ে পত্র ছাড়ে মসি। এই ছিল সে কালের মা-পিসি-দিদিদের কালি তৈরির ব্যবস্থাপত্র।
৬) লেখকেরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন? 
উঃ কড়াইয়ের তলার কালি, হরিতকী ঘষে বা আতপ চাল পুড়িয়ে বেঁটে জলের সঙ্গে মেশাতেন। সব ভালাে করে মিশিয়ে একটি খুন্তির গােড়া টকটকে লাল করে পুড়িয়ে মিশ্রণে ঘেঁকা দিতেন। তারপর সেটিকে নেকড়ায় হেঁকে দোয়াতে ভরতেন। এভাবেই তখন লেখকরা কালি তৈরি করতেন।
৭) তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি।'—কী নিয়ে? 
উঃ ঘরে তৈরি বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি আর গাছ থেকে আনা কলার পাতা—এই সামান্য উপকরণ দিয়েই শুরু হয় লেখকদের ছােটোবেলার লেখাপড়া। 
৮) বর্তমানে নল-খাগড়ার কলমের ব্যবহার কীরূপ?
উঃ সরস্বতী পূজায় হাতেখড়ি অনুষ্ঠান বা পূজার উপাচার হিসেবে বর্তমানেও নল-খাগড়ার কলমের ব্যবহার দেখা যায়।
৯) কিছুদিন আগে এক বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন’—কী লিখেছিলেন ? 
উঃ এক বিদেশি সাংবাদিক লিখেছিলেন কলকাতার চৌরঙ্গির পথে ফেরিওয়ালা গিজগিজ করছে। তাদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ফেরি করেন কলম নিয়ে।
১০) লর্ড কার্জন বাঙালি সাংবাদিকদের বাবু কুইল ড্রাইভারস’ কেন বলতেন? 
উঃ বাঙালি সাংবাদিকদের গরম গরম ইংরেজি লেখা দেখে লর্ড কার্জন তাদের বাবু কুইল ড্রাইভারস’ বলতেন।
১১) তাদের দোয়াতে গোঁজা পালকের কলম’ এখন ‘পালকের কলম’ কোথায় দেখা যেতে পারে?
উঃ পুরানাে দিনের কোনাে তৈলচিত্র বা ফোটোগ্রাফে আর উইলিয়াম জোন্স বা কেরি সাহেবের স-মুনশি ছবিতে দোয়াতে গোঁজা অবস্থায় পালকের কলম’ দেখা যায়। 
১২) ‘ধা করে কলমটা ছুড়ে দিলেন’-কলম কেন ছুড়েছিলেন ?
উঃ নিজের ক্ষমতা দেখাতে এবং ক্রেতাকে সম্মােহন করতেই দোকানদার এই কেরামতি দেখিয়েছিলেন।
১৩) দোকানদার কোন্ কোন্ কলমের নাম আউড়ে চললেন ? 
উঃ দোকানদার পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সােয়ান, পাইলট ইত্যাদি কলমের নাম আউড়ে চললেন।
১৪) ‘সােনার দোয়াত কলম যে সত্যই হতাে’—তা লেখক কীভাবে জেনেছিলেন ? 
উঃ শুভাে ঠাকুরের দোয়াত সংগ্রহ দেখতে গিয়েই লেখক জেনেছিলেন সােনার দোয়াত কলম সত্যই হতাে।
১৫) চিত্রশিল্পী হিসেবে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বময় সম্মানিত হয়েছিলেন—এই চিত্রশিল্পের সূত্রপাত হয় কীভাবে?
উঃ পাণ্ডুলিপির পাতার কাটাকুটি থেকেই আনমনে রচিত হয়েছিল সাদা-কালাে ছবি, সেটিই রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্পের সূচনা। এটিই কবিকে চিত্রশিল্পী হিসেবে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়। 
১৬) মনে মনে সেই ফরাসি কবির মতাে বলেছি-'—কী বলেছেন সেই কবি? 
উঃ ফরাসি কবি বলেছেন,—“তুমি সবল, আমি দুর্বল। তুমি সাহসী, আমি ভীরু। তবু যদি আমাকে হত্যা করতে চাও, আচ্ছা, তবে তা-ই হােক। ধরে নাও আমি মৃত ।

রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি (প্রশ্নমান-৫) 
১) কারাে হাতে কলম নেই’-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কলম না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করাে।
উঃ “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ - প্রবন্ধটি ‘শ্রীপান্থ’ ছদ্মনামে নিখিল সরকারের লেখা। লেখক লেখালেখির অফিসে কাজ করতেন, নানা বিষয়ে লেখালেখির সৃষ্টি সেখানে হয়। বর্তমানে সেখানে কলমের ব্যবহার নেই, সকলেই কম্পিউটারের সাহায্যে অনবরত লিখে যান। কি-বাের্ডে ছাপানাে লেখাগুলােতে চাপ দিলেই সামনে থাকা চৌকো আয়নার মতাে স্ক্রিনে সেই লেখাগুলাে ফুটে ওঠে। লেখাগুলাে সঠিক হচ্ছে কিনা দেখার জন্য মাঝেমাঝেই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখতে হয়। এই কাজে কলমের কোনাে দরকার হয় না। সভ্যতার অগ্রগতিতে কলমের জায়গা কম্পিউটার নিয়েছে তাই লেখক এই উক্তি করেছেন।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে ‘কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি। মুনশি অর্থাৎ লেখক হতে গেলেও এখন আর কলমের দরকার হয় না, কম্পিউটার সরাসরি ছাপার জন্যই লেখাকে প্রস্তুত করে দেয়। সুতরাং দুবার খাটতে কে আর কলমে লিখতে যাবেন। কলমের প্রয়ােজন নেই, তাই সেখানে কলমও নেই।
২) ‘কালি কলম মন, লেখে তিন জন।’-কালি কলম প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে লেখকের কোন বাল্যস্মৃতি মনে পড়ে গিয়েছে?
উঃ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’-এর লেখক নিখিল সরকার বাংলাদেশের অজ পাড়াগাঁয়ে জন্মেছেন এবং সেখানেই হয়েছে তাঁর বাল্যশিক্ষা। রােগা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তখন তারা কলম তৈরি করতেন। বড়ােরা শিখিয়ে দিয়েছিল শুধু সঁচালাে হলেই চলবে না, মাথাটা চেরা হলে ধীরে ধীরে চুইয়ে পাতায় কালি পড়বে। লেখকেরা তখন কলার পাতাতেই হােম-টাস্ক করে তা বান্ডিল করে স্কুলে নিয়ে যেতেন। শিক্ষকমহাশয় দেখার পর তা ছিড়ে দিতেন। সেই কলার পাতা স্কুল থেকে ফেরার পথে তারা কোনাে পুকুরে ফেলে আসতেন, কেননা অক্ষর গােরুতে খেলে নাকি ঘাের অমঙ্গল হয়। আবার কালিও তারা নিজেরাই তৈরি করতেন। মা-পিসিরা ব্যবস্থাপত্র অনুসারে উৎকৃষ্ট মানের কালি তৈরি করতেন। লেখক ও তাঁর সহপাঠীরা তৈরি করতেন কাজ চলা গােছের কালি। কড়াইয়ের তলার কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে পাথরের বাটিতে গুলে তাতে হরীতকী ঘষে দিতেন, আবার কেউ কেউ আতপ চাল পুড়িয়ে বেঁটে তাতে মেশাত। সব ভালাে করে মেশানাের পর খুন্তির গােড়ার দিক পুড়িয়ে টকটকে লাল করে সেই জলে ভেঁকা দেওয়া হত। অল্প জল বলে তা অনেক সময় টগবগ করে ফুটত। তারপর সেই কালি ঘেঁকে মাটির দোয়াতে ভরে রাখা হতাে। কলমের প্রসঙ্গ ওঠায় লেখকের এই কথাগুলাে মনে পড়ে গিয়েছে। 
৩) ‘আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।'—আমরা কারা? তারা কীভাবে কালি তৈরি করতেন? 
উঃ ‘আমরা’ বলতে হারিয়ে যাওয়া কালি কলমের লেখক শ্রীপান্থ অর্থাৎ নিখিল সরকার নিজে এবং তার সমবয়সিদের কথা বলেছেন। 
● মা-পিসিদের সাহায্যে ছােটোরা কালি তৈরি করত বাড়িতেই। তবে সেটা প্রাচীন শাস্ত্রের নিয়ম মেনে নয় : “তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ছাগ দুগে করি মেলা/লৌহপাত্রে লােহায় ঘসি/ছিড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।” এই ছিল কালি তৈরির আদর্শ উপায়। তবে সবাই আর অতসব উপকরণ পাবেন কোথায়? সহজ পদ্ধতি ও উপকরণেই কাজ করতে হতাে। কাঠের আগুনে যে কড়াই চাপত তার নীচে কালি পড়ত। লাউপাতা দিয়ে ঘষে ঘষে তা তুলে একটা পাথরের বাটিতে জল ঢেলে তা গুলিয়ে নিতে হতাে। যারা নিপুণ তারা আবার ওই কালাে জলে হরীতকী ঘষত। আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তা আবার বেটে মেশানাে হতাে। সব মিশে যাবার পর একটা খুন্তির গােড়ার দিকটা পুড়িয়ে লাল করে নিয়ে সেই জলে ছ্যাকা দেওয়া হতাে। অল্প জল বলে টগবগ করে ফুটত। শেষে ন্যাকড়ায় ছেকে তা দোয়াতে ভরলেই হল! কালি তৈরি হয়ে গেল তারপর তাে এলাে কালির ট্যাবলেট বা বড়ি—লাল, নীল। তা ছাড়া দোয়াতে না ঢেলেই কাচের শিশিতে এলাে কালি—তা থেকে কলমে ভরে নিয়েই লেখা। 
৪) ‘আমার মনে পড়ে ফাউন্টেন পেনের কথা।'—ফাউন্টেন পেন কী? এ প্রসঙ্গে লেখকের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দাও।
উঃ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধে লেখক নিখিল সরকার ফাউন্টেন পেন সম্বন্ধে বলেছেন লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান উদ্ভাবিত বিশেষ কলমের কথা যার থেকে ঝরনার জলের মতাে কালি নিসৃত হয়।
● এই প্রসঙ্গেই লেখকের মনে পড়ে জীবনের প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার অভিজ্ঞতার কথা। ঘটনাটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বেশ কয়েক বছর পরের কথা। কলেজস্ট্রিটের এক নামী দোকানে লেখক কলম কিনতে গিয়েছেন। দোকানি তার পছন্দের ফাউন্টেন পেনের নাম জানতে চাইলে এবং লেখকের চুপ থাকা দেখে দোকানি আউড়ে গেলেন পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সােয়ান, পাইলট ইত্যাদি কলমের নাম। তার মধ্যে লেখক পার্কারের নামটিই বলেননি। দোকানি লেখকের মুখের দিকে তাকিয়ে তার পকেটের অবস্থা বুঝে একটি জাপানি পাইলট পেন তাঁকে দেখান। এ ছাড়াও তিনি জানান কলমটি সস্তার হলে কী হবে গুণমানে সেটি বেশ দামি। মুখ থেকে খাপটা খুলে তিনি টেবিলের পাশে দাঁড় করানাে কাঠের বাের্ডের দিকে কলমটি ছুঁড়ে মারলেন। তারপর নিব সমেত কলমটি সেখান থেকে এনে লেখককে দেখালেন তার কোথাও কোনাে বিকৃতি ঘটেনি। লিখেও দেখালেন। হয়তাে বা নিবটা বেঁকে বা ভেঙেও যেতে পারত কিন্তু কিছুই হল না। সেই জাদু পাইলটটাই লেখক কিনলেন এবং বহু বছর সেটি ব্যবহার করেছেন। প্রবন্ধে লেখকের এই ফাউন্টেন পেন কেনার অভিজ্ঞতার কথা তার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
৫) ‘দোয়াত যে কত রকমের হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।'—কোন্ প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে বিভিন্ন প্রকার দোয়াতের যে বর্ণনা লেখক দিয়েছেন তা তােমার নিজের ভাষায় লেখাে।
উঃ হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে লেখক নিখিল সরকার শৈশবে স্কুলজীবনের প্রথমে কলমের কথা বলতে গিয়ে দোয়াতের কথাও বলেছেন। বর্তমানে দোয়াতের ব্যবহার শিক্ষিত ঘরে বা অফিস-আদালতে আর দেখা যায় না, সেগুলাে এখন শুধু ঘরে সাজিয়ে রাখা হয়। এই প্রসঙ্গেই লেখক উক্তিটি করেন।
● দোয়াতের বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক কাচ, কাট-গ্লাস, পাের্সেলিন, শ্বেতপাথর, জেড পাথর, পিতল, ব্রোঞ্জ, ভেডার সিং, সােনা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি দোয়াতের কথা বলেছেন। গ্রামে কেউ দু-একটা পাশ দিলেই গুরুজনরা সােনার দোয়াত কলম হােক বলে আশীর্বাদ করতেন। সােনার দোয়াত কলম লেখক দেখেছিলেন শুভাে ঠাকুরের সংগ্রহ দেখতে গিয়ে। সাহিত্য, ইতিহাস, মহাকাব্য থেকে শুরু করে নানা প্রসঙ্গ সেখানে খােদাই করা ছিল। এই আধুনিক যুগে অফিসের টেবিল সাজাতে দোয়াতদানের ব্যবস্থা দেখতে পাই। তবে সে কেবলই চোখকে ফাকি দেবার কারসাজি। কেননা তাতে থাকে ডট বা বল পেন। দোয়াতে কালি থাকত। আর সেইসব যুগে শেক্সপিয়র, দান্তে, মিল্টন, কালিদাস, ভবভূতি, কাশীরাম দাস, কৃত্তিবাস ওঝা, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র অবিস্মরণীয় সৃষ্টি করে গেছেন। আগেকার দিনে ব্যবসায়ী, উকিল, বুদ্ধিজীবীরা লেখালেখির কাজটা সহজ করে তােলার জন্যে সঙ্গে দোয়াত কলম রাখতেন। সইসাবুদ, চুক্তিপত্র ইত্যাদি কাজে দোয়াত দান ও তাতে সংরক্ষিত কালির ওপর ভরসা করতেন। 
৬) ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে লেখক কোন্ কোন্ প্রবাদ-প্রবচন ও লােকবিশ্বাসের উল্লেখ করেছেন?
উঃ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে শ্রীপান্থ অর্থাৎ নিখিল সরকার বিষয়কে প্রাঞ্জল ও সাবলীল করতে অবলীলাক্রমে বহু প্রবাদ-প্রবচন ও লােকবিশ্বাসের উল্লেখ করেছেন। এখন এক এক করে সেই প্রবাদ-প্রবচন ও লােকবিশ্বাস গুলােকে দেখে নেওয়া যাক।
প্রবাদ : “ ‘ক’ অক্ষর গােমাংস”-- অক্ষরজ্ঞানহীনকেই লােকে ‘ক’ অক্ষর গােমাংস’ বলে থাকেন। কালির অক্ষর নাইকো পেটে, চণ্ডী পড়েন কালিঘাটে।-সবজান্তা গােছের মানুষেরা মানুষকে হেয় করতে এই প্রবাদ উচ্চারণ করে থাকেন। কারাে কোনাে ভুলভ্রান্তি দেখলেই কলকাতা-সহ সংলগ্ন অঞ্চলের একটু উচ্চমার্গের লােকেরা প্রবাদটি আওড়ে থাকেন। লাঠি তােমার দিন ফুরাইয়াছে। অর্থাৎ ‘লাঠির দিন শেষ’--“জমিদারি মেজাজ’ বা “খবরদারির সুর’ কানে এলে এই ধরনের প্রবাদ শােনা যায়। প্রবাদটি বঙ্কিমচন্দ্র ব্যবহার করেছেন। লেখনির শক্তি বৃদ্ধি করতে।
প্রবচন : কালি কলম মন, লেখে তিন জন। কালি, কলম এবং মন তিনটির একসঙ্গে উপস্থিত না থাকলে লেখার কাজ সম্পন্ন হয় না। কালি নেই কলম নেই বলে আমি মুনশি’ --মুনশি অর্থাৎ লেখক যার কাজ কলম ছাড়া সম্ভব নয়, অথচ কালি কলম ছাড়া নিজেকে লেখক বলা অর্থহীন। যিনি কানে কলম খুঁজে দুনিয়া খোঁজেন। এখানে দার্শনিক বােঝাতে কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। লােকে ‘ভােলামন’ বােঝাতেই কথাটি ব্যবহার করেন। কলমে কায়স্থ চিনি, গোঁফেতে রাজপুত'—এটা গোঁফ দেখে বিড়াল চেনার মতাে ব্যাপার। যাঁরা আঁচেই সব বুঝে নিতে পারেন সেইসব প্রাজ্ঞেরা প্রায়শই এমন কথা বলে থাকেন। তােমার সােনার দোয়াত কলম হােক।'—আশীর্বাদটির অর্থ হল দিন দিন শ্রীবৃদ্ধি হােক। ‘সমানি সম শীর্ষাণি ঘনানি বিরলানি চা—পণ্ডিতেরা হয়তাে ব্যবহার করে থাকবেন আমরা এ ধরনের প্রবচন লােকমুখে শুনিনি। তবে ‘মুক্তাক্ষর’, ‘হাতের লেখা দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায় এ ধরনের শব্দগুচ্ছ আমাদের বহুশ্রুত।
লােকবিশ্বাস :‘অক্ষর গােরুতে খেলে অমঙ্গল’ যার পেটে এতটুকুও বিদ্যা নেই তাকে অনেকে গােরু বলে থাকেন। তৎকালের লােকেদের বিশ্বাস ছিল ছােটোবেলায় যাদের লেখা গােরুতে খেয়ে ফেলে তাদের সব বিদ্যা চলে যায় গােরুর পেটে এবং সে হয়ে যায় বিদ্যাশূন্য বােকা। তিল, ত্রিফলা সিমুল ছালা/ ছাগ দুগ্ধে করি মেলা / লৌহপাত্রে লােহায় ঘসি ছিড়ে পত্র না ছাড়ে মসি এই ব্যবস্থাপত্র অনুসারে কালি প্রস্তুত করলে কাগজ ছিড়ে গেলেও কালি মুছে যাবে না।



Write Your HideComments
Cancel

Please Do Not Enter Any Span Link in The Comment Box